আজ ছুটির দিন। অফিসের তাড়া নেই। আহা কী আনন্দ....
আলসেমী করে, ওঠবো, ওঠি করে করে এই একটু আগে ঘুম থেকে ওঠলাম।
অনেক দিন পর আবার ব্লগে বসা হলো। আলসেমী ভেঙে, এই বসি, সেই বসি করতে করতে কীভাবে যে মাস চলে যায়... বোঝাই মুস্কিল।
বিশেষ কিছু লেখার নেই, জানানোরও নেই.... শুধু সামহোয়ারে আবার ফিরে আসার চিঠি হিসেবেই লেখা।
বাইরে আজ খুব সুন্দর রোদ। ঝকঝকে, উজ্জ্বল রোদে আকাশ ভেসে যাচ্ছে। রোদ আমার বরাবরই প্রিয়। ছুটির দিন ছাড়া নিজের ঘরে বসে রোদ দেখার তো কোনো উপায় নেই।
সাত সকালে যখন বেরোই ঘর থেকে তখন ভোর। যখন ঘরে ফিরি, তখন তো সন্ধ্যে বেলা, সর্য আসবে কোথ্থেকে?
আবার ছুটির দিন হলেই যে, জানালায় রোদের দেখা মিলবে এমনটা ভাবারো কোনো কারণ নেই। কারণ বৃষ্টি আর মেঘ দিয়ে প্রায়শই আড়াল থাকে আকাশ।
বাইরে এখন বেশ শীত। তাপমাত্রা মাইনাস নাইন, কিন্তু আবহাওয়ার আপডেট থেকে জানা যাচ্ছে, শীতটা অনুভূত হচ্ছে মাইনাস পনেরোর মতো।
ঘরের ভিতরে যদিও শীত নেই, কিন্তু একটু যেনো কেমন কম উষ্ণ মনে হচ্ছে আজ। একটু পর পর রুম হিটারের পাশে পায়ের পাতাটা কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখতে ভালোই লাগছে।
আজ রোববার। তার ওপরে আকাশ ভাসিয়ে দিয়ে আমার জানালায় উপচে পড়ছে রোদ। আহা, ঘরের ভেতর থেকে আমার মন নেচে উঠছে।
তবে শীতের দিনে এমন ঝকঝকে রোদ হলে অখুশি হয় জর্মনরা। কারণ, রোদ ঝকঝকে হলে, আকাশ খুব পরিষ্কার থাকে। সেই পরিষ্কার, মেঘমুক্ত, ঝকঝকে আকাশ বেয়ে, ডাকাতের মতো এসে ঢুকে যায় সাইবেরিয়ান শীত।
শীতের দিনে একটু মেঘ হলে, একটু বৃষ্টি হলেই বরং জর্মনরা খুশি। কারণ, তাহলে তাপমাত্রা মাইনাসের ঘরে যাবার সুযোগ পায় না।
কিন্তু ভাই, আমি তো জর্মন নই। আমি রোদের নেশায় বুদ।
এই শীত দেখলেই, এই রোদ দেখলেই আমার শুধু নানু বাড়ির কথা মনে হয়। ছেলেবেলায় শীতের দিনের ভোরে সর্য যখন ওঠছে কেবল, তখনই আমার হাতে কখনো মুড়ি-গুড়, কখনো ভাঁপা পিঠা, কখনো কলা পিঠা, কখনো দুধ চিতই পিঠা দিয়ে নানু বা খালামণিরা আমাকে পাঠিয়ে দিতো বাড়ির সামনের পুকুর পাড়ে।
ভোর বেলা, রোদ এসে সবার আগে সেখানেই বসতো।
আমার মতো আরো অনেক শিশু তখন খই বা মুড়ি বা পিঠা খেতে খেতে কাড়াকাড়ি করতো রোদ নিয়ে। এই সময়ের মধ্যেই প্রতিদিন একটা ট্রেন যেতো মাঠের ওপার দিয়ে।
পুকুরের পাড় থেকে ওওওওই দূরেরে রেলপখ- এদের মাঝখানে শুধু ছিলো ধানের জমিন। পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে থেকেও আমরা সব শিশুরা তখন পাখি হয়ে উড়ে গেছি রেল লাইনের ধারে। রেলের হুইসেল এসে কতোদিন আমাদের ঝগরা থামিয়ে দিয়েছে, থামিয়েছে রোদ নিয়ে কাড়াকাড়ি তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
রেল গাড়ির প্রতি তখন আমার ছিলো এক দুর্নিবার কৌতুহল। কারণ তখনো পর্যন্ত কখনো রেলে চড়ি নি আমি।
এইখানে, জার্মানিতে খুব সুন্দর শীত। কোনো কুয়াশা নেই। চারদিক আজ ভেসে যাচ্ছে রোদে।
আমার কাছে শীতের রোদ মানে আজো সেই নানু বাড়ি। মনে মনে প্রতিদিন সেই ছোট্ট শিশুটি হয়ে আজো আমি বসে থাকি পুকুর ঘাটে, অপেক্ষায় থাকি হুইসেল বাজিয়ে কখন আসবে রেলগাড়ি।
(যদিও এর মাঝে পাল্টে গেছে সব কিছু। খালামণিরা সব যে যার সংসারে ছড়িয়ে গেছে কোথায় কোথায়. .. মামারাও গেছে বাড়ি ছেড়ে, আরেক মামা তো দুনিয়াই ছেড়ে গেছে। )
এইমাত্রই আমার বাবার সাথে কথা হলো স্কাইপিতে।
তিনি জানালেন, আমার নানার শরীরের আবস্থাটা ভীষণ খারাপ। আগে থেকেই খারাপ ছিলো। এখন আরো খারাপ। আশা নেই। সবার থেকে নানা না-কি দাবি দাওয়া ছাড়াচ্ছেন।
বাবাকে সবাই ফোন করেছে যাবার জন্যে। বাবা যাচ্ছে এখন নানুর বাড়ি।
এখন সেখানেও শীতকাল। নিশ্চয়ই সেথানেও পুকুর পাড়ে অনেক রোদ। কিন্তু এই রোদে মৃত্যুর গন্ধ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।