শ্রদ্ধা আর মমতাই তোমাকে জয়ী করতে পারে; তুমি তোমার জ্ঞান প্রয়োগ কর।
১। হিমালয় আরোহণ করছে একদল গণিতবিদ। কিন্তু অভিযানের কয়েক ঘন্টা পরই দিক হারিয়ে ফেলল তারা। চারদিকে কেবল তুষারশুভ্র পর্বত আর পর্বত, ঠিক কোথায় তাদের অবস্থান কেউ বের করতে পারল না।
অভিযানে আনা মানচিত্রটি বের করে গভীরভাবে সেটি পর্যবেক্ষণ করল একজন গণিতবিদ। তারপর তাকাল সে চারপাশের ভূমিরূপের দিকে। সবশেষে কম্পাস বের করে সূর্যের অবস্থান দেখে বেশ কিছু হিসেব-নিকেশ করল।
"দেখ, দেখ!" উল্লাসে চিৎকার করে উঠল গণিতবিদ।
"কী হয়েছে, কী!" তীব্র কৌতূহলে অন্যেরা ঘিরে ধরল তাকে।
"ঐ যে দূরের পর্বত চুড়াটা দেখতে পাচ্ছ..." গণিতবিদ বলল।
"হ্যাঁ, হ্যাঁ। " একসাথে উত্তর করে সবাই।
"এই যে মানচিত্র দেখ। মানচিত্র বলছে আমরা এখন তার উপরই দাঁড়িয়ে আছি।
"
২। ছোট বুশের শাসনামল। বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনা চলছে আমেরিকান সিনেটে।
"ইরাকের উম্মুল কসর বন্দরে গতরাতে ভয়ানক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছে, মি. প্রেসিডেন্ট। তিন ব্রাজিলিয়ান সৈন্য নিহত হয়েছে এতে।
" ডোনাল্ড রামসফিল্ড রিপোর্ট পেশ করল।
"ওহ্, কী ভয়ঙ্কর, কী ভয়ঙ্কর!" দু'হাতে নিজের মাথা চেপে ধরে বুশ। টেবিলে কনুই রেখে ঝুঁকে থাকে কিছুক্ষণ।
খানিক নিরবতার পর টেবিল থেকে মাথা তুলে বুশ, প্রশ্ন করে, "আচ্ছা, ডোনাল্ড, কত জন মিলে এক ব্রাজিলয়ান হয়?"
৩। স্নায়ু যুদ্ধের সময়কার কথা, একাডেমিক জগতেও পড়েছে রাজনৈতিক প্রভাব।
রাশিয়ার এক গণিতবিদ ইউএসএ থেকে আমন্ত্রণ পেলেন গণিতের উপর বক্তৃতা দিতে। অনেক কষ্টে ভিসা ম্যানেজ করে, ইমিগ্রেশন অফিসারদের নানান যন্ত্রণা জেরা পেরিয়ে, এমনকি ট্যাক্সিচালকদের খোঁচা সহ্য করে সেমিনারে পৌঁছলেন তিনি।
তার সিরিয়াল আসলে বোর্ডে একটি সূত্র লিখে আলোচনা শুরু করলেন গণিতবিদ। যখন তা প্রমাণ করতে গেলেন তিনি, হলভর্তি আমেরিকান দর্শক ব্যঙ্গ করতে লাগল, এ তো একেবারে জলের মতো ক্লিয়ার, প্রমাণ করার কী আছে!
স্বাভাবিকভাবেই বিরক্ত হলেন গণিতবিদ, কিন্তু তা চেপে রেখে আরেকটি সূত্র ধরে আলোচনা চালিয়ে যেতে লাগলেন তিনি। যখন দ্বিতীয় সূত্রটির প্রমাণের উপরও আলোকপাত করতে গেলেন, হলভর্তি দর্শক আবার আগের মতোই শুরু করল, "হি হি, প্রমাণের কী আছে এতে? এ তো জানাই কথা!"
থমথমে কঠোর মুখে তৃতীয় সূত্রটি লিখেন গণিতবিদ।
"নিশ্চয়ই বলবেন না, এটিও একেবারে জলের মতো স্পষ্ট ও সোজা?" দর্শকদের দিকে প্রত্যাশা নিয়ে তাকালেন তিনি।
"হা হা হা। তা নয়তো কী? এ-তো আমরা সবাই জানি, একেবারে দিবালোকের মতো পরিষ্কার। "
কাষ্ঠহাসি হেসে গণিতবিদ বললেন, "না, দিবালোকের মতো পরিষ্কার নয়, এবার সূত্রটা ভুল লিখেছি আমি, হে হে!"
৪। খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে বুয়েটে কন্ট্রোল এঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো কর্নেলের সাথে নিশ্চয়ই পরিচয় হয়েছে পাঠকদের।
তো সেই কর্নেল একদিন তার গাড়ির পরিবর্তে একেবারে ট্যাংক নিয়ে হাজির হলেন বুয়েটে, থামলেন ক্যাফেটেরিয়ার সামনে কড়াই গাছের নিচে। বিপদ হবে না নিশ্চিত হয়ে শিক্ষার্থীরা গেল ট্যাংক দেখতে।
"দেখতে পাচ্ছ ট্যাংকটি? সর্বাধুনিক কম্পিউটর প্রযুক্তিসম্পন্ন এটি, সমরকৌশলের চরম উৎকর্ষ বলা যায় একে!" গর্বে কর্নেলের গলা ফুটে উঠে।
"কম্পিউটরের স্পিড কতো, স্যার?" জানতে চায় একজন শিক্ষাথী।
"কেন? ট্যাংকের যা স্পিড, কম্পিউটরেরও তা, এ তো জানাই কথা।
"
৫। গণিতের এক প্রফেসরের বাসার রান্নাঘরের বেসিনটি নষ্ট হয়ে গেছে। সারানোর জন্য একজন পানির মিস্ত্রি ((plumber) ডাকলেন তিনি। পরদিন মিস্ত্রি এসে বেসিনের কয়েকটি স্ক্রু ঠিক করে দিল, সাথে সাথে বেসিনও ঠিক হয়ে গেল। খুব খুশি হলেন প্রফেসর, কিন্তু মিস্ত্রি যখন মজুরি বিল ধরিয়ে দিল, চোখ একেবারে ছানাবড়া হয়ে গেল তার।
"এ তো আমার এক মাসের বেতনের তিন ভাগের এক ভাগ! দুই মিনিটের একটা কাজের জন্য এত বেশি!" গজগজ করতে লাগলেন প্রফেসর।
"আমি আপনাকে বেশি চার্জ করিনি, বাজারে বর্তমানে এ-ই রেট। " মিস্ত্রি বলল।
দুঃখ চেপে টাকা শোধ করে দিলেন প্রফেসর । মিস্ত্রি তখন সান্ত্বনা দিয়ে বলল, "প্রফেসর হিসেবে আপনার অবস্থাটা আমি বুঝতে পারছি।
তা, আপনি কেন বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিয়ে আমাদের কোম্পানিতে জয়েন করেন না? তিন গুণ রোজগার হবে আপনার। তবে আপনি যখন আবেদন করবেন, তাদের বলবেন আপনার পড়াশোনা ক্লাস সেভেন পর্যন্ত মাত্র। তারা কিন্তু আবার শিক্ষিত লোক পছন্দ করে না। "
বাস্তবে সেরকমই হলো। কল সারানোর মিস্ত্রি হিসেবে কাজ পেলেন প্রফেসর, অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ ভালো হলো তার।
মাঝেমাঝে কেবল একটি দু'টি স্ক্রু ঠিক করা, মোটামুটি এটুকুই কাজ, কিন্তু বেতন বাড়তে লাগল।
একদিন কোম্পানির বোর্ড ঠিক করল কাজে দক্ষতার জন্য সকল মিস্ত্রিকে নৈশ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে অষ্টম শ্রেণী পাস করতে হবে। প্রফেসরকেও যেতে হলো।
ঘটনাক্রমে প্রথম দিনেই গণিতের ক্লাস। নৈশ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জ্ঞান পরীক্ষা করার জন্য তাদের বৃত্তের ক্ষেত্রফলের সূত্র জিজ্ঞাসা করলেন।
প্রফেসরকেই ধরলেন প্রথমে।
ব্ল্যাকবোর্ডের কাছে গিয়ে প্রফেসর বুঝতে পারলেন সূত্র ভুলে গেছেন তিনি। সূত্রটি নিয়ে ভাবতে লাগলেন তিনি। কিছুক্ষণ পর ইন্টেগ্রেশান, ডিফারেন্সিয়েশান এবং উচ্চতর গণিতের আরো অন্যান্য প্রতীক ও সূত্রে ব্ল্যাকবোর্ড ভরে উঠল। একসময় বৃত্তের ক্ষেত্রফলের সূত্রটি বের করলেন তিনি, A = -πr^2।
কিন্তু ক্ষেত্রফলে নেগেটিভ চিহ্ন পছন্দ হলো না তার। তাই সব মুছে আবার প্রথম থেকে শুরু করলেন, আবারও সূত্র আসলো A = -πr^2।
খুব হতাশ হয়ে গেলেন প্রফেসর। ভয়ার্ত চোখে ক্লাসের দিকে তাকালেন তিনি, দেখলেন সবাই ফিসফিস করে তাকে বলছে, "আরে মিয়া, লিমিট দুইটা উল্টাইয়া দাও, উল্টাইয়া দাও। "
ছবি: জনৈক চার্লি স্মিথের আইডিয়া সামু'র ইমো'র উপর খানিকটা প্রয়োগ করা হলো।
আশা করি সামু কর্তৃপক্ষ -বদনে অবলোকন করবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।