জানলাম-'' যিনি বীর্যবান , গুনবান, চরিত্রবান , কান্তিমান , বিদ্বান , ধর্মজ্ঞ , কৃতজ্ঞ , সত্যবাদী , দৃঢ়ব্রত , প্রিয়দর্শন , ইন্দ্রিয়জয়ী , ক্রোধজয়ী , সর্বহিতকারী , পরোন্নতি-সহনশীল এবং লৌকিক ব্যবহারে দক্ষ - তিনিই আদর্শ পুরুষ । " বাংলাদেশ রেলওয়ের উপর আমার ভালবাসার কোন শেষ নাই।
ট্রেন ছিলো ভোর 6:29 এ,
তো আমার যাওয়ার কথা শুনে ঢাকার আকাশে আজ দূর্যোগের ঘনঘটা। সেই যে গতকাল রাত থেকে কান্নাকাটি শুরু করছে তার আর কোন থামাথামি নাই। আমার এত আনুরোধ স্বত্তেও কোন কাজ হলো না দেখে একেবারে শেষ মূহুর্তে মানে 6:27 এ আমি বাসা থেকে বের হলাম।
কেননা বাংলাদেশ রেলওয়ের উপর আমার অগাধ বিশ্বাস। আশাকরি সেই বিশ্বাসে ঘি ঢেলে দিয়ে 6:29 এ ছেড়ে যাওয়ার মতো নিষ্ঠুর সে হবে না।
যাইহোক, বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় আসলাম এবং বলাবাহুল্য আমার কপালের গুনেই হোক, কি অন্যকোনো স্বর্গীয় কারনেই হোক রাস্তায় কোন রিকশা, সি এন জি নাই। তার উপর বোনাস হিসেবে বৃষ্টি তো অবিরাম পড়তেছেই। তবুও নিরস্ত হলাম না।
কারণ অভাগা যেদিকে ধায়, সাগর ই শুকিয়ে যায় - আর এ তো সামান্য বৃষ্টি (!) এইটা শুকাতে আর কতক্ষণ।
অবশেষে মাঝারি সাইজের ট্রলিব্যাগ ঠেলতে ঠেলতে অনেকদুর যাওয়ার পর ক্ষীণ আশার সঞ্চার করে একটা লেগুনা দেখা দিল। দাঁতকেলানো হাসি দিয়ে উঠতে যাবো এমন সময় পিচ্চি হেলপার কইলো ..
- মামা নামেন, আপনারে নেওয়া যাইবো না, মালিক রাগ করবো।
আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। আমার উপরেই কেন তোর মালিকের কৃপাদৃষ্টি নিক্ষেপ করা লাগবে, তার মেয়ের সাথে আমার তো কোন সুসম্পর্ক নাই।
পরে জানলাম লোক ভরে গেছে আর কাউরে নেওয়া যাবে না। খুশিতে আকাশের দিকে তাকাতে যাবো এমন সময় লেগুনা'র ভিতর থেকে এক আন্টি আমার চাঁদবদন চিনতে পেরে বললেন ...
- মুন, তুমি ওঠো। আমার বাচ্চাটা না হয় দাড়াইয়া থাক।
আমি কইলাম, নিশ্চয় নিশ্চয়, সে আপনার অসীম কৃপা। আন্টির ছেলেটাকে তবু কোলের উপর বসালাম এবং তখনই লেগুনা ছেড়ে দিলো।
ঘড়িতে তখন 6:43, আমার ট্রেনের সময় ছিলো 6:29 এ কিন্তু বিডি রেলওয়ের উপর আমার আছে অগাধ বিশ্বাস অন্তত 1 ঘন্টা দেরি তো হবেই, আমার পূর্বাভিঞ্জতা তো তাই বলে।
লেগুনা থেকে নামলাম, দেখি যে আকাশের কান্নাকাটির বেগ দ্বিগুণ হয়ে গেছে এরইমধ্যে। জসীমউদ্দীন রোডে নেমে বৃষ্টিতে ভিজতেছি, এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনে যাবো কিন্তু সিএনজি, রিকশা কিছুই নাই। হঠাৎ দেখি কে যেন পিছন থেকে ডাক দিচ্ছে। ঘাড় ঘুরাতেই সিএনজিওয়ালা বললেন ...
- আরে মামা, আগে ভিতরে ওঠেন তারপর বলেন কোথায় যাবেন?
আমি তো খুশিতে বাক বাকুম।
বললাম - ' চলেন স্টেশনে, যদিও ট্রেনের আরো 35 মিনিট আগেই ছেড়ে যাওয়ার কথা কিন্তু এটা বাংলাদেশ বলেই এখনো আশা ছাড়ি নাই। '
যা থাকে কপালে তাই হবে আজ সকালে - এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে একবুক আশা নিয়ে স্টেশনে আসলাম। তখন 7:15। একজনকে জিঞ্জেস করলাম যে রাজশাহীর ট্রেন চলে গেছে কিনা, তো তিনি বললেন ...
- ট্রেন তো এখনো ঢাকাতেই আসে নাই, 4 ঘন্টা লেট হবে।
আহা মধু মধু মধু .... এই জন্যেই তো বাংলাদেশ রেলওয়ে।
চাইলাম এক ঘন্টা আর সাথে বোনাস পাইলাম তিন ঘন্টা!
এ যেন_ মেঘ না চাইতেই 'মহাসেন '
স্টেশনে বসে থেকে থেকে এখন মেরুদন্ডে প্রদাহের সৃষ্টি করে অবশেষে ১১:১০ এ ট্রেন ছাড়লো এবং যথারীতি একটি কচ্ছপগতির ভ্রমন শেষ করে আমি বিকাল আনুমানিক ৫ টা বেজে ৩৫ মিনিটে রাজশাহী এসে পৌছালাম ! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।