বাংলায় কথা বলি,বাংলায় লিখন লিখি, বাংলায় চিন্তা করি, বাংলায় স্বপ্ন দেখি। আমার অস্তিত্ব জুড়ে বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে অসংখ্য তরুণ-তরুণী আজ বেকার। সর্বত্র তাদের করুণ আর্তনাদ আর হাহাকার। বাবা-মা অসহায়।
একটি কাজ চাই। কে দেবে তাদেরকে কাজ! কেউ কি নেই তাদের পাশে দাঁড়াবার? বিগত বছর বিশেক ধরে দেখা যাচ্ছে, কোন একটি চাকরির বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশিত হলেই দেখা যায় হাজার হাজার বেকার তরুণ-তরুণী যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আয়োজিত যে কোন চাকরির পরীক্ষায় একাধিকবার বাছাই পরীক্ষা নেবার পরও দেখা যায় হাজার হাজার প্রার্থী তখনও লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে ভাইভা দেয়ার সময়। এদের বেশীর ভাগই মেধাবী। এদেরকে উপযুক্ত কাজ দেয়ার দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের উপরও বর্তায়।
বেকারদের কষ্ট আসলেই অসহনীয়। এক মাত্র মধ্যবিত্ত তরুণ-তরুণীরাই বোধ হয় এই কষ্টের সব চেয়ে বেশী শিকার। কেননা , তাদের সব স্বপ্ন পাস করে একটি চাকরি পাওয়া। সেটা আজ বড় কঠিন হয়ে গেছে।
আমাদের দেশে এখন অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে যেখানে বেকারদের কাজ দেয়া যেতে পারে।
এধরনের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে - বিভিন্ন গার্মেন্টস ও বায়িং হাউজ সমুহ, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান সমুহ ও বিভিন্ন আধুনিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সমুহ। আমার জানা মতে, এই সব প্রতিষ্ঠানের মালিক কর্তৃপক্ষের একধরনের নেশা রয়েছে তা হল এরা দেশের কর্মী নিয়োগ করার চেয়ে বিদেশের কর্মী নিয়োগ করাকেই বেশী ভাল মনে করে। আমার জানামতে, আমাদের পাশের সার্ক দেশ শ্রীলংকা থেকে বাংলাদেশে কাজ করছে কয়েক হাজার লোক। তারা ভাল বেতনও পাচ্ছে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই এদের বেতন হাজার ডলারের উপরে।
এক হাজার ডলার বেতন এক জন বাংলাদেশের বেকার তরুণ-তরুণী কখনো কল্পনাই করতে পারবেনা। কলম্বোতে বাংলাদেশী লোকজন খুবই কম। এত কম বাংলাদেশী পৃথিবীর আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না। সব মিলিয়ে ৬০/৭০ জনের বেশি বাংলাদেশী এখানে আছে কিনা সন্দেহ । হাতেগোনা যে ক’জন বাংলাদেশী এখানে থাকে তারা বেশিরভাগই হয় কোনও এনজিওতে অথবা কোনও বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করে।
শ্রীলংকার অসংখ্য মানুষ বাংলাদেশে চাকরি করে। সেই তুলনায় বাংলাদেশের কেউ শ্রীলংকায় চাকরি করে না বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না।
আমরা জানি, সামান্য চার / পাঁচ হাজার টাকা বেতনের একটি চাকরির জন্য আমাদের বেকাররা জুতার তলা ক্ষয় করে ফেলছে প্রতি নিয়ত। ডলার তো তাদের কাছে স্বপ্ন মাত্র। আমাদের সেই সব বিদেশী কর্মীদের নিয়োগ দাতারা কি তা জানেন? আমার মনে হয় তারা তা জানেন না।
জানলে দেশে এতো লোক বেকার থাকতে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় করে বিদেশী কর্মী তারা নিয়োগ করতে পারতেন না। আমি মনে করি, আমাদের দেশের যারা বহির্বিশ্বে কাজ করছে তাদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে তাদের স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে। মাঝে মাঝে পত্রিকার পাতায় তা ছাপাও হয়। তারা যে সৎ ও নিষ্ঠাবান তা অনেক উন্নত দেশেই প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু আমাদের নিজের দেশেই তাদের কোন কদর নেই।
আমার মনে হয় , দেশে যদি কেউ ৮/১০ হাজার টাকা বেতনের একটা কাজ করতে পারতো তা হলে কেউই বাড়ি-ঘর, জমি-জমা, সহায়-সম্বল বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি জমাতো না।
প্রায়ই পত্রিকার পাতায় দেখি, বিভিন্ন দেশে আমাদের দেশের যুবকেরা কাজের সন্ধানে গিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সহায় সম্বল বিক্রি করে বিদেশে গিয়ে তাদের এই করুণ অবস্থা আমাদেরকে আর কতকাল দেখতে হবে। অথচ আমাদের দেশের শিল্প মালিকরা, ব্যবসায়ীরা অকারণেই বিদেশী কর্মী আনতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন । বাংলাদেশের বিনিয়োগ বোর্ডই জানেন, কত জন বিদেশী আমাদের দেশের ভাগ্য বিধাতারা নিয়োগ করেছেন।
আমি মনে করি, এ ধরনের নিয়োগ দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। কারণ এর দ্বারা আমাদের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে অন্যের ঘরে। দেশী মোবাইল ব্যবহার করলে যেমন দেশের টাকা দেশেই থাকে তেমনি দেশের কর্মী নিয়োগ করলেও দেশের টাকা দেশেই থাকবে।
বিদেশী কর্মী নিয়োগ করার ক্ষেত্রে তাদের যুক্তিটা আসলে কোথায়? আমাদের দেশের বেকারদেরকে প্রশিক্ষণ দিলে তারা কি পারবেনা সেই সব বিদেশীদের চেয়ে ভাল কাজ করতে? আমাদের শিক্ষিত তরুণদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলুন। যাতে তারা দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ পায়।
সব চেয়ে বড় যেটা সেটা হল নিয়োগ দিয়ে তারপর শিখিয়ে নেয়া। আমি মনে করিনা যে আমাদের দেশের একজন মানুষ শ্রীলংকার এক জন মানুষের চেয়ে কম কাজ করবে। এটা যে মনে করে সে কি আসলে দেশ প্রেমিক? বাংলাদেশের জন্য কি তার কোন টান আছে? দেশের মানুষের প্রতি কি তার কোন দায়িত্ববোধ নেই? ৫০ হাজার শিক্ষিত তরুণদের মাঝ থেকে বাছাই করে ১০০ জন তরুণকে নেয়া হোক। তাদেরকে ইংরেঝি ভাষা সহ সব ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হোক।
বাড়িঘর সহায় সম্পত্তি সব বিক্রি করে মানুষ বিদেশে যায় কাজ করতে।
কেবল মাত্র একটি কাজের জন্য। সেই কাজটি কেন তারা নিজের দেশে পাবেনা? এক জন বিদেশীকে যে বেতন দেয়া হয় সেই পরিমাণ বেতন দিয়ে বাংলাদেশের পাঁচ-ছয় জন লোক রাখা যেতে পারে। তাহলে কেন অযথা বিদেশী কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে?
বর্তমানে বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তারা এমন কিছু ভাল কাজ করেছেন যা দেশের মানুষ এক সময় কল্পনাও করতে পারতো না। দেশের বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে যদি বর্তমান সরকার একটা ভাল কিছু করে তবে তা হবে লাখ বেকারদের জন্য আলাদীনের চেরাগ।
দেশের যদি কর্মসংস্থান করা যায় তাহলে সেটাই হবে সব চেয়ে ভাল। তারপর যদি বিদেশে পাঠতেই হয় তাহলে বেকারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে উপযুক্ত করে তুলে তারপর পাঠাতে হবে যাতে তারা ভাল কোন কাজ পায়। বিদেশে বাংলাদেশের মানুষের বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ভাল কোন কাজ জুটে না। কারণ তাদের তেমন ইংরেজি জ্ঞান নেই। তাদের নেই কোন ভাল কাজের প্রশিক্ষণ।
সব চেয়ে বেশী সমস্যা হয় ভাষা নিয়ে।
সব শেষ কথা, আমি কোন যুক্তি তর্কে যেতে চাইনা। আমাদের দেশের তরুণদেরকে দেশের স্বার্থেই কাজ দেয়া হোক। তারা যেন ভালভাবে বেঁচে থাকতে পারে। দেশের টাকা দেশেই থাকুক।
একটি আত্ননির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাইলে এর কোন বিকল্প আছে বলে আমি মনে করিনা।
এ ব্যাপারে আমি সচেতন সকল মহলের মতামত কামনা করছি। অনেক আগের একটি কবিতা বলার লোভ সামলাতে পারছি না। কবিতাটি হল:
‘কত রূপ স্নেহ করি
স্বদেশের কুকুর ধরি
বিদেশের ঠাকুর ফেলিয়া । ’
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন,
গ্রাম-বটিয়া, পোঃ জয়পাড়া,
উপজেলাঃ দোহার
জেলাঃ ঢাকা -১৩৩০।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।