আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সমকামী উভকামী হিজড়া ইস্যূ ও তাদের সমঅধিকার আন্দোলন।



সমকামীতা গ্রহন যোগ্য নয় কেন? এ কি এক ধরণের যৌন বিকৃতি? কিছু বিকৃত রুচির মানুষের ব্যভিচারিতা? এরা কী মানব জাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি? জার্মান নাৎসি হিটলারের মত নিচু স্তরের প্রাণি মনে করে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানই কী এর সমাধান? সারা দুনিয়ার সর্বত্র বিরাজমান সবচেয়ে নির্যাতিত নিপীড়িত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী এই LGBT কমিউনিটি (Lesbian Gay Bisexual & Trans-gender)। বিষয়টা এমন নয় যে ভোগবাদী এই সমাজের কিছু মানুষের অভিনব বিকৃত এক ভোগের আয়োজন। বহু পুরান কাল থেকেই এদের অস্তিত্ব উপস্থিত। যতদিনের লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায় তাতে সমকামীদের পাওয়া যায়। প্লেটোর সিম্পোজিয়াম মূলত সক্রেটিস সহ মেট্রোপলিশের সকল বুদ্ধিজীবিদের আগাথনের বাসায় প্রেম বিষয়ক এক আড্ডা।

তাতে সমকামীদের বিষয়ে আলোচনা করা হয় এমনকি এই সম্পর্ককে সেরা প্রেম বলতে চেয়েছেন অনেকে। আলেকজান্ডার সমকামী ছিলেন বলে অনেকে মনে করেন। কোরানে সামুদ জাতির কথা উল্লেখ আছে যারা নাকি ধ্বংস হয়ে যায় সমকামীতা কারণে। এল জি বি টি রা নতুন কোন উৎপাত নয় তারা মানবজাতিরই একটি ক্ষুদ্র অংশ। কিন্তু তারা সমাজে গ্রহনীয় নয়- এই ধারণার পরিবর্তন হচ্ছেনা।

মানুষ প্রাণিজগতের একটি বিশেষ প্রাণি যাদের আছে সচেতনতা। কিন্তু নিজের প্রানি অস্তিত্ব ভুলে গিয়ে ঈশ্বর মনে করলে গোল বাঁধবে। প্রাণি জগতের যে পরিবারের প্রাণি মানুষ তাদের মধ্যেও সমকামীতা বর্তমান। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছে প্রায় ১৫০০ প্রজাতির প্রাণির মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য আছে ইতোমধ্যে তারা প্রমাণ পেয়েছে ৫০০ প্রজাতিতে। (অধিক তথ্যের জন্য গুগল করতে পারেন)।

যদি ধরে নে'য়া যায় এই বৈশিষ্ট্য স্বাভাবিক তাহলে বৃহত্তর সমাজের মেনে নিতে সমস্যা কেন? ঐতিহাসিকভাবে মানবজাতির অগ্রগতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় প্রকৃতির কাছে মানুষ অসহায়। মানব শিশুর দীর্ঘ অসহায়ত্ব মানুষকে বাধ্য করেছে সম্পদ সংরক্ষণে। এই সম্পদের অধিকার ও বন্টনই পরবর্তী ইতিহাস। সম্পদের উত্তরাধিকার নিশ্চিত করার জন্য পরিবার গোত্র ইত্যাদির আবির্ভাব। সমকামী বা হিজড়ারা যেহেতু বংশ বিস্তার করতে পারে না এবং সম্পদের উত্তরাধিকার থাকে না ফলে তারা সমাজের অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।

পৃথিবীর তাবত ধর্ম পুরুষতান্ত্রিকতা ও সম্পদের উত্তরাধিকারের রক্ষা কবচ। ধর্মে এল জি বি টি দের কোন স্থান নেই। পরিবার না থাকায় সম্পদ হারা ধর্মে অচ্ছুত এই কমিউনিটি ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিপতিত। জিনগত ও পরিবেশগত কারণের উপর নির্ভরশীল এই জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব ত আর বিনাশ হওয়ার না। যতদিন মানুষ আছে ততদিন ধরে এরা আছে।

ফরাসী বিপ্লবের পর সামন্ত প্রথা ভেঙ্গে শিল্প বিপ্লবের হাত ধরে মানুষের মুক্তির অগ্রযাত্রা শুরু হয় ১৯ শতকে। ২০ শতকের শ্রমিক শ্রেণীর মুক্তির আন্দোলনের ভিতর দিয়ে পশ্চিমে দারিদ্রের হাত থেকে কিছুটা মুক্তি ও সার্বজনীন অধিকার বিষয়টি মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠে। ১৯৬৯ সালে নিউইয়র্ক শহরের স্টোনওয়াল ইনে এল জি বি টিদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে- এর পর থেকে এল জি বি টিদের আন্দোনল ছড়িয়ে পড়ে সারা পাশ্চাত্যে। এটি তাদের আত্নপ্রকাশ ও মাইলফলক। ধীরে ধীরে তারা ক্লজেটের ভিতর থেকে বের হচ্ছে।

তাদের মতে প্রতি ১০ জনে ১ জন তাদের কমিউনিটির। ফলে আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। ইতোমধ্যে এল জি বি টিদের সম অধিকার নিশ্চিত হয়েছে ইউরোপ, দক্ষিণ আফ্রিকা ভারত সহ অনেক দেশে। কিন্তু উই এস এ তে এরা এখনও আন্দলনরত। স্বপ্নের দেশ মুক্তির দেশ আমেরিকার এই অবস্থা অবিশ্বাস্য! কিন্তু না- শিল্পোন্নত দেশসমূহের মধ্যে আমেরিকা হলো ধর্মীয় গোঁড়ামির দেশ।

রবি বারে যেখানে ইউরোপের চার্চ সমূহ খাঁ খাঁ করে সেখানে ইউ এস এ র চার্চ সমূহ গম গম করে। কর্পোরেটের করায়ত্বাধীন দ্বি-দলীয় গনতন্ত্রের বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় কিছুটা প্রগতির কথা বলা ডেমোক্রেটদের সমর্থক এল জি বি টিরা। ক্লিনটনের সময় অনেক আশা করে ছিল কিন্তু আখেরে সেনা বাহিনীতে 'ডন্ট আস্ক ডন্ট টেল ' নীতি ছাড়া আর কিছুই করে নি। যার অর্থ হলো সেনা বাহিনীর উর্ধতনরা কখনও জিজ্ঞাসা করবে না এবং সমকামীরা নিজের পরিচয় কখনও বলবে না। আদতে নাকি শুধু দ্বিতীয় অংশ চালু ছিল।

ওবামা ক্ষমতার লড়াইয়ে নামেন পরিবর্তনের কথা বলে। এল জি বি টিরা আফ্রিকান আমেরিকানরা চাকরী হারানো অথবা হারানোর ভয়ে থাকা অসংখ্য তরুণ- তরুণীর সমর্থনে ওবামা জয়লাভ করেন বিপুল ভোটে। কর্পোরেটদের বেল আউট ছাড়া এখন পর্যন্ত কিছুই করতে পারেন নি। এল জি বি টিদের সমঅধিকারের ব্যাপারে ওবামার সমর্থন ছিল প্রকাশ্য। অথচ ক্যালিফর্নিয়ার কোর্ট যখন সমকামীদের বিবাহ বৈধ রায় দে'য়ার ফলে বিষয়টিকে গণভোটে গড়ায় তখন ওবামার ভূমিকা ছিল রহস্যজনক।

প্রপজিশন ৮(Only marriage between a man and a woman is valid or recognized in California) এর জয়লাভ সমকামীদের দীর্ঘ আন্দোলনের ইতিহাসে এক বড় ধাক্কা। ওবামা সেনা বাহিনীতে সমকামীদের অধিকার দেয়া ছাড়া আর কিছু না করাতে এল জি বি টিরা ভীষন ক্ষ্যাপা তার উপর। স্টোনওয়ালের পর থেকে আন্দোলনে থাকার ফলে এরা আমেরিকার রাজনীতিতে আলোচিত এবং সক্রিয়। এর ধারাবাহিকতায় এল জি বি টিরা চলমান সকল প্রগতিশীল আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে বীট জেনারেশন ও হিপ্পিদের সাথে গড়ে ওঠে নিবিড় সম্পর্ক।

এল জি বি টিরা বর্তমান চলমান ইরাক ও আফগানস্থান যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে সবচেয়ে সক্রিয়। সমস্ত ইউ এস এর সকল এল জি বি টিরা এখন পর্যন্ত এক ছাতার তলে এসে এক সাথে দাঁড়াতে না পারাই তাদের প্রধান দুর্বলতা। জরীপে দেখা যায় ইয়াং আমেরিকানদের বেশীর ভাগ তাদের সম অধিকারের পক্ষে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৯ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।