আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইরানরে পারমানবকি র্কমসূচী : পশ্চিমাদের শ্যেন দৃষ্টি

কিছু শেখার চেষ্টা করি............

পারস্য সভ্যতার কেন্দ্রভূমি ইরান। ইরানের পারমানবিক কর্মসূচী নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা বর্তমান বিশ্বের বহুল আলোচিত একটি বিষয়। এই পারমানবিক কর্মসূচীর কারনেই ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। সুনিশ্চিত কোন প্রমাণ ছাড়াই পাশ্চাত্যের অভিযোগ, ইরান গোপনে পারমানবিক বোমা তৈরীর চেষ্টায় লিপ্ত। জবাবে ইরান বার বার এ অভিযোগ দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখান করেছে ।

তেহরানের সুস্পষ্ট ঘোষনা, তাদের পারমানবিক কর্মসূচী শান্তিপূর্ণ এবং এর লক্ষ্য জ্বালানি চাহিদা পূরণ। ইরানি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ২০০৭ সালের জাতিসংঘের ৬২ তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণদানকালে বলেন , “ ইরানের পারমানবিক কর্মসূচী সম্পুর্ন শান্তিপুর্ন এবং এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। কোন পরিস্থিতিতেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ বন্ধ করা হবেনা। কেননা এটা ইরানের অধিকার, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে জ্বালানির জন্য তাকে পরমানূ কর্মসূচী নিতে হয়েছে ”। ২০০৭ সালের ৩১ শে অক্টোবর আন্তর্জাতিক পারমানবিক সংস্থার প্রধান এল বারাদেই ইরান সম্পর্কে যে রিপোর্ট দিয়েছেন তা ইরানের বক্তব্যই সমর্থন করে।

বারাদেই তার রিপোর্টে বলেছিলেন, ইরান পারমানবিক বোমা তৈরী করছে এমন কোন সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। “ শান্তির জন্য অণু ” এ ঘোষনার মাধ্যমে ইরান ১৯৫৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পারমানবিক কর্মসূচী চালু করে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের মদদে এবং ঈওঅ এর সাহায্য ও প্ররোচনায় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ মুসাদ্দেক কে ক্ষমতাচ্যুত করে যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত রেজা শাহ মুহাম্মদ পাহলভী কে ক্ষমতায় বসানো হয়। ১৯৬০ এর দশকে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়াকে মোকাবেলা করার জন্য ও আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইরান কে রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক ও পারমানবিক কর্মসূচীর জন্য সহায়তা করতে থাকে। ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় রেজা শাহ পাহলভী ২০০০ সালের মধ্যে ২৩ টি পরমাণূ শক্তি কেন্দ্র নির্মানের পরিকল্পনা অনুমোদন করে।

যেখান থেকে ২৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। ১৯৭৫ সালে ইরান তার প্রথম পরমাণূ প্রকল্প “ বুশেরে” নির্মাণ শুরু করে জার্মানীর কজঅঋঞডঊজক টঘওঙঘ ঙঋ ঝওঊগঊঘঝ এর সহায়তায়। ১৯৭৫ সালে ইরান জার্মানীর কজঅঋঞডঊজক টঘওঙঘ ঙঋ ঝওঊগঊঘঝ এবং ঞঊখঊঋটকঊঘ এর সাথে চজঊঝঝটজওতঊউ ডঅঞঊজ জঊঅঈঞঙজ পরমাণূ শক্তি কেন্দ্র নির্মানের লক্ষ্যে ৬ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। একই বছর ফরাসী সরকারের কোগিমা কোম্পানী এবং ইরান সরকার যৌথ ভাবে ঝঙঋওউওঋ ঊঘঞঊজচজওঝঊ প্রতিষ্ঠা করে যথাক্রমে ৬০% ও ৪০% শেয়ারের মাধ্যমে , এ সময় ফ্রান্স ইরান কে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম দেয়ার ওয়াদা করে। ১৯৭৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট গেরাল্ড ফোর্ড পরমাণূ পূনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ করার জন্য সহায়তা দেয়।

ইরানের পরমানু প্রকল্পের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর সমর্থন , উৎসাহ প্রদান এবং সরাসরি সহায়তা ১৯৭৯ সালের ইসালামী বিপ¬বের পূর্ব পর্যন্ত অব্যহত ছিল। ইসলামী বিপ্ল¬বের পর পশ্চিমা গোষ্ঠি তথা ফ্রান্স, জার্মানী সহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ গুলো চুক্তি ভঙ্গ করে ইরান কে সহায়তা বন্ধ করে দেয়। বিশেষ করে ইসলামী বিপ্ল¬বের কারনে যুক্তরাষ্ট্র ভীত হয়ে উঠে। কেননা ইসলামী চেতনা পার্শ্ববর্তী আরব দেশ গুলোতে প্রসার লাভ করলে মার্কিন স্বার্থের সরাসরি হুমকি হয়ে উঠবে। যুক্তরাষ্ট্র এই বিপ্লবী চেতনা অংকুরেই বিনষ্ট করার জন্য সচেষ্ট হয়।

১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তায় ইরাক ইরান আক্রমন করে এবং উপসাগরীয় যুদ্ধে ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন না দেয়ায় ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি ঘটে , যা আজও বিদ্যমান। এখানেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশের আসল চেহারা বেরিয়ে আসে, তারা শুধুমাত্র নিজের স্বার্থ দেখলেই আর্ন্তজাতিক আইন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পদদলিত করে যেকোন কাজ করতে পারে। আজকের আফগানিস্তান ও ইরাক তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রাশিয়ার বিরুদ্বে যুদ্ব করার জন্য আফগানিস্তানে তালেবান ও আল-কায়েদাকে অস্ত্রের যোগান দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সেই আফগানিস্তানকেই একজন ওসামা বিন লাদেনের জন্য আমেরিকা ধ্বংস করেছে, এখনও সেখানে প্রতিদিন সাধারন মানুষ মারা যাচ্ছে।

একই ভাবে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন কে আমেরিকা বিভিন্নভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। যখনই আমেরিকা দেখল যে, ইরাকে আর স্বার্থ হাসিল করা যাচ্ছেনা, তখনই ইরাকের হাতে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে (পরে প্রমান পাওয়া যায়নি) এই প্রমানবিহীন ঠুনকো অযুহাতে গোঠা ইরাকে ধ্বংসলীলা চালিয়ে তার অনুগত আফগাস্তিানের কারজাই সরকারের মত নুরী আল মালিকীর পুতুল সরকার কে ক্ষমতায় বসিয়েছে। এখনও ইরাকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের প্রাণ অকালে ঝরে যাচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা আমরা ইরানের বেলায়ও দেখতে পাচ্ছি। কারণ, আমেরিকাই ১৯৫৩ সাল থেকে ইরান কে পারমানবিক সহযোগিতা দিয়েছে, যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি।

সেই আমেরিকাই এখন ইরানের পারমানবিক কর্মসূচীর প্রধান বিরোধিতাকারী। ইসরাইলের অসংখ্য পারমানবিক অস্ত্র, ভারত ও পাকিস্তানের পারমানবিক অস্ত্র নিয়ে আমেরিকা ও পশ্চিমাদের কোন কথা নেই, ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমানবিক কর্মসূচী নিয়ে যত প্রপাগান্ডা ও নিষেধাজ্ঞা। এবার আসা যাক ঘচঞ চুক্তি অনুযায়ী ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচী কতটা বৈধ। ঘচঞ (ঘঁপষবধৎ ঘড়হ চৎড়ষরভবৎধঃরড়হ ঞৎবধঃু.) পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাসের লক্ষ্যে ১৯৬৮ সালের ১ জুলাই স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৭০ সালে এটি কার্যকর হয়।

ইরান ১৯৬৮ সালে ঘচঞ তে স্বাক্ষর করে। এনপিটি চুক্তির অ-৩ এবং অ-৪ অনুযায়ী ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণূ কর্মসূচী যুক্তিযুক্ত। অ-৩: অনুযায়ী সকল ন্যাটো বহির্ভূত দেশগুলো আইএইএর মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্রের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার করবে এবং এ সকল উপাদানের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে অন্যান্য কর্মকান্ড পরিচালনা করবে। ” আর অ-৪: ধারা-১, ধারা-২ অনুসারে যদি কোন পক্ষ পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূৃর্ণ ব্যবহার, গবেষণা ও উৎপাদন করে তাহলে তাকে কেউ অপসারন করতে পারবে না। সকল পক্ষ যদি চুক্তিটিকে সহজ করতে চায় এবং এতে অংশগ্রহণ পূর্বক শান্তিপূর্ণু উদ্দেশ্যে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার করতে চায় তবে তারা পারমাণবিক শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের লক্ষ্যে এর উৎপাদন যন্ত্রাংশ, প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক তথ্যাদির আদান-প্রদান করতে পারবে।

বিশেষ করে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য চুক্তির পক্ষসমূহ ভবিষ্যতে এর আরো উন্নতি ঘটাতে একে অপরকে সাহায্য করতে পারবে। “ সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে ইরান এনপিটি চুক্তি মেনেই শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরমাণু কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে। অপর দিকে আমেরিকা, বৃটেন, ইসরাইল, রাশিয়া, ভারত এবং উত্তর কোরিয়া সহ আরো অনেক দেশ ঘচঞ চুক্তির অ-১ এবং অ-২ ধারার সুস্পষ্ট লংঘন করে পারমানবিক অস্ত্র তৈরী ও প্রতিযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। এ ব্যাপারে পশ্চিমাদের কোন মাথাব্যাথা নেই, অথচ পরমাণু কর্মসূচী থেকে ইরানকে ফিরিয়ে রাখতে পশ্চিমা বিশ্ব বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে ইরানকে তিনবার আন্তর্জাতিকভাবে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

তারপরও ইরানকে পরমাণু কর্মসূচী বন্ধ করার ব্যাপারে রাজি করানো যায়নি। গত ১১ ফেব্রুয়ারী ‘১০ ইং ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ২০% ইউরেনিয়াম সমৃদ্বকরণ সম্পন্ন হয়েছে বলে ঘোষনা দেন এবং তিনি এটাকে ৮০% করা সম্ভব বলে মতামত ব্যাক্ত করেন। এ ঘোষনা পশ্চিমাদের মনে আগুনে ঘি ঢালার মত। সম্প্রতি আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন ইরানের বিরূদ্ধে মতামত সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দেশ সফর করছেন। ইতিমধ্যে সৌদি আরব ও ব্রাজিল হিলারীকে সমর্থন দেয়নি।

বর্তমানে রাশিয়া ও চীন ইরানের পরমাণূ কর্মসূচীকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া ইরান কে পারমানবিক চুল্লি সরবরাহ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে। পরিশেষে বলতে চাই, কোন দেশ তার নিজের উন্নয়নের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবে , এটা তার অধিকার। জাতিসংঘের সনদে এ অধিকার স্বীকৃত। এ অধিকারে যদি অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করে তাহলে তা জাতিসংঘের সনদের বরখেলাপ।

সুতরাং ইরানের পরমানবিক কর্মসূচী বন্ধ করে দেয়ার অধিকার কারো নেই। সবচেয়ে বড় কথা , ইরান আদৌ পারমানবিক অস্ত্র তৈরী করছে ,এমন তথ্য কেউ দিতে পারেনি। ওঅঊঅ ২০০৮ সাল থেকে ইরানের পারমানবিক কর্মসূচীর উপর ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, এ রিপোর্টগুলোতেও পারমানবিক অস্ত্র তৈরীর কোন তথ্য নেই। শুধু জ্বালানি চাহিদা মেটানোর জন্যই ইরানের পরমাণূ কর্মসূচী পরিচালিত। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলির দ্বি-মুখী এবং বৈষম্যমুলক আচরন বিশ্বে অস্থিরতা সৃষ্টি করে প্রতিনিয়ত।

যারা অতীতে আনবিক বোমা মেরে মানুষ মেরেছে , তাদের মুখেই আজ যতসব সাধুবাক্য। যে দিন সব দেশের জন্য এক আইন হবে , তখন বিশ্ব মুক্ত হবে পারমানবিক ঝুকি থেকে। ইরানের পারমানবিক কর্মসূচী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে কোন হঠকারী সিদ্ধান্ত বিশ্বে অস্থিরতা ও উত্তেজনার জন্ম দেবে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।