আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুগভীর চিন্তায় ভবিষ্যতের দশটি আবিষ্কার

লেখক

বিজ্ঞানীরা আগামী প্রজন্মের বিশ্বসমাজের মানুষের জীবনযাপন সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে নব নব আবিষ্কার করছেন। এসব আবিষ্কার পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষাসহ উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের জীবনে কল্যাণ বয়ে আনবে। নতুন প্রজন্মের জন্য বিজ্ঞানীদের এ আবিষ্কার নিয়ে লাইভসায়েন্স অবলম্বনে লিখেছেন জ্যোতিষ সমাদ্দার বাবু ও সোহরাব সুমন। আজকের বিশ্বসমাজ ভবিষ্যতের এমন সব রোবটের অপেক্ষায় আছে যারা মানুষের বদলে কলকারখানায় কাজ করবে, যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করবে। তারা এমন দিনের অপেক্ষায় আছে যখন গাড়ি থেকে বিমান সব কিছুর সঙ্গে জুড়ে যাবে অতি ক্ষুদ্র কম্পিউটার।

গবেষক বিজ্ঞানীরা এমন সব মৃত্যুসঞ্জীবনী ওষুধ আর আরক তৈরি করবে যা একবার খেলে চিরদিনের জন্য রোগ থেকে আরোগ্য মিলবে। সায়েন্স ফিকশনের বিলুপ্ত প্রাণীদের ফিরে আসার গল্প সত্য হয়ে যাবে ক্লোনিংয়ের জাদুর ছোঁয়ায়। কিন্তু তারও আগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্ভিক্ষ ও রোগশোক জয়ের উপায় উদ্ভাবন করতে হবে। এ গ্রহে যতোবেশি মানুষ বসবাস করতে থাকবে ততোই কমে আসবে সম্পদের পরিমাণ। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকবে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত।

সবকিছুর আগে এসব বিষয়ে তাই একটা সুরাহা হওয়া দরকার। আমাদের আগামী প্রজন্মের দিনগুলোকে আরো সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলতে গবেষক বিজ্ঞানীরা যে দশটি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের কথা ভাবছেন যায়যায়দিনের আজকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাতায় সেগুলো তুলে ধরা হলো। ১. কৃত্রিম মস্তিষ্ক শত লক্ষ কোটি নিউরনের ভিড়ে মানব মস্তিষ্কের বেশিরভাগ অংশ আজো বিজ্ঞানীদের কাছে অজানাই রয়ে গেছে। সম্প্রতি ব্লুব্রেইন প্রজেক্টের বিজ্ঞানীরা আগামী দশ বছরের মধ্যে মানুষের কৃত্রিম মস্তিষ্ক তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এরই মধ্যে আইবিএমের সুপারকম্পিউটার ব্লুজিন ব্যবহার করে ইঁদুরের মস্তিষ্কের মডেল তৈরি করেছেন তারা।

দেখা গেছে মানুষের সাহায্য ছাড়া এর প্রতিরূপ কোষগুলো সাড়া দিতে বা অন্য কোনো কাজে আপনা থেকে সমন্বিত হতে পারছে। মানুষের চেতনাকে আরো ভালো করে বুঝতে এবং জৈবিক মডেলের পরীক্ষা করার জন্য এ ধরনের মস্তিষ্ক কাজে আসবে। ২. সূর্যের শক্তিকে ব্যবহার করা কোটি কোটি বছর ধরে নিউক্লিয়ার ফিসনের কারণে আলোকিত হয়ে আছে আমাদের এই সূর্যালোক। বিজ্ঞানীরা এবার সেই বল্গাহীন শক্তিকে মাটির পৃথিবীতে বেঁধে রাখার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। শক্তিশালী লেজার ফোকাস করে অতিক্ষুদ্র ফুয়েল প্যালেট হতে এ ধরনের শক্তি পাওয়া যাবে।

তবে ফিউশনের উচ্চ তাপমাত্রার প্লাজমাকে চুম্বক সীমানায় ধরে রাখতে আরো অনেক বিকল্প আবিষ্কারের দরকার হবে। অথবা এর বদলে শীতল ফিউশনের কোন পদ্ধতি আবিষ্কার করবেন বিজ্ঞানীরা। ৩. বৈশ্বিক জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ বিশ্ব যাতে আরো বহু দিন মানুষের বাসযোগ্য থাকে সেজন্য জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর নানা উপায় নিয়ে ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। গ্রহকে আরো শীতল করতে আবহম-লে প্রতিফলক কণা ছড়িয়ে দেয়ার কথা ভাবছেন তারা। পাশাপাশি সাগর-মহাসাগরজুড়ে কার্বনখেকো শৈবালের বিস্তার ঘটাতে লোহা ছিটানোর কথা চিন্তা করা হচ্ছে।

এমনকি ধনকুবের বিল গেটস পর্যন্ত হারিকেন ঠেকানোর আইডিয়া পেটেন্টের জন্য আবেদন করছেন। হারিকেনের মূল শক্তি সাগরের উপরকার গরম পানিকে জাহাজ থেকে বিশেষভাবে শীতল করার পকিল্পনার কথা বলা হয়েছে। জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি এখন একটি বাস্তবতা মাত্র। তবে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, বিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারকরা কি এ ধরনের প্রকল্পগুলোর ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে আগেভাগেই ভাববেন কি না। ৪. আবর্জনা দূর করা সব ধরনের আবর্জনা থেকে ব্যবহার উপযোগী দ্রব্য তৈরি করার মতো প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে।

অদূর ভবিষ্যতে প্লাস্টিক তৈরি হবে মুরগির পালক এবং কৃষিজ উপাদান থেকে। কোনো ধরনের ক্ষতি ছাড়াই এসব পচনশীল প্লাস্টিক সাগর জলে মিশে যাবে। আর সে সময় এসব বর্জ্য উপাদান আরো বেশি করে সাগরে ফেলার জন্য উৎসাহ দেয়া হবে। ফেলনা খাবার, স্যুয়ারেজ এবং অন্যান্য আবর্জনা দিয়ে পাওয়ার প্লান্টগুলো বিদ্যুৎ উৎপন্ন করবে। এমআইটি গবেষকরা এভাবে নিরাপদ বর্জ্য অপসারণের প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ করে যাচ্ছে।

আশা করা হচ্ছে এ ধরনের প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে সারাবিশ্বের পরিবেশ এক সময় নিরাপদ হয়ে উঠবে। ৫. ক্ষুুধামুক্ত বিশ্ব ক্ষুধামুক্ত একটি বিশ্ব গড়ে তোলা আসলেই বড় কঠিন কাজ। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের রয়েছে আলাদা সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা। এতোসবের পরও বিজ্ঞানীরা সারাবিশ্বের খাবার জোগান দিতে পারে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ শস্য নিরাপদ করতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। গবেষকরা আরো বেশি উৎপাদনশীল বিভিন্ন ধরনের গম, ধান, যব আবিষ্কার করে যাচ্ছেন।

এগুলোর বেশিরভাগই আবার খরা, লবণাক্ততা, কীটপতঙ্গ ও তাপ সহনীয়। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি কৃষকদের এসব সবশেষ উদ্ভাবনসহ অন্যান্য খবরাখবর অবহিত করছে। দীর্ঘ সময় ধরে জমিকে উর্বর রাখার উপায় ও শস্য উৎপাদনের নতুন সব পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারছে তারা। এমনকি গবেষণাগারে উৎপাদিত মাংস দিয়ে বিশ্বের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবেলার কথা ভাবা হচ্ছে। কোনো কারণে এতোসব চেষ্টা ব্যর্থ হলেও ভবিষ্যতের খাবারের উৎসকে নিরাপদ করতে হাজার হাজার ফসলের বীজ ডুমসডে ভল্টে নিরাপদে তুলে রেখেছেন বিজ্ঞানীরা।

৬. শরীরের পুনরুৎপাদন এখন পর্যন্ত কারো মাঝে পুনরুৎপাদনের ক্ষমতা দেখা যায়নি। তবে প্রত্যঙ্গ হারানো রোগীরা সবসময়ই চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের শরীরের হারানো অংশ ফিরে পেতে চেয়েছে। ২০০৬তে বৃটিশ গবেষক দল আম্বেলিকাল কর্ডের স্টেম সেল থেকে প্রথম কৃত্রিম লিভার তৈরি করেন। অন্য আরো অনেক গবেষক দাবি করেছেন, এ ধরনের স্টেম সেল থেকে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি করা যাবে। অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, রোগীর চোখের পরিণত স্টেম সেল ব্যবহার করে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেয়া যাবে।

চীনের বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের ত্বকের কোষকে পুনর্নিদেশিত করে জীবন্ত ইঁদুরের জন্ম দিয়েছেন। তাই আশা করা যায় অচিরেই গবেষণাগারে তৈরি হওয়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আর চিকিৎসা উপকরণ বাজারে পাওয়া যাবে। ৭. সব দেখা ও জানা যাবে অবাধ তথ্যপ্রবাহ মানুষের জীবনে পুরোটাই এক সময় বদলে দেবে। সবার হাতে উঠে আসবে এমন সব ডিভাইস যার সাহায্যে কেনাকাটা থেকে শুরু করে সব কাজ সম্পন্ন করা যাবে। ২০০৯তে এমআইটি গবেষকরা এমন প্রযুক্তির একটি প্রোটোটাইপ প্রদর্শন করেছেন, যাতে একাধারে একটি ওয়েব ক্যাম, একটি প্রজেক্টর, ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত একটি স্মার্ট ফোন সমন্বয় ঘটানো হয়েছে।

বাস্তব জগতের সঙ্গে যুক্ত এ ডিভাইস জীবনে এক বর্ধিত বাস্তবতা যোগ করবে। জিপিআরএসের মাধ্যমে স্থানীয় মানচিত্রসহ রাস্তাঘাট সবকিছুই দেখার সুযোগ রয়েছে এতে। এসব কারণেই হয়তো একবিংশ শতাব্দীতে তথ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে। ৮. সত্যিকারের কৃত্রিম পা নিজের আসল হাত-পায়ের মতো নিয়ন্ত্রণ উপযোগী কৃত্রিম হাত-পা খুব শিগগির প্রতিবন্ধীদের নাগালের মধ্যে আসতে যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে থাকবে অতি ক্ষুদ্র মাইক্রো প্রসেসর, যা ব্যবহারকারীর মাথা সঙ্কেত অনুসারে পরিচালিত হবে।

রোবটিক এ ধরনের বাহু এরই মধ্যে বানর এবং মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্কেত ব্যবহার করে সফলতা পাওয়া গেছে। এ ধরনের প্রযুক্তি অবারিত হলে প্রতিবন্ধীরা স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ পাবে। ৯. নব্বই মিনিটে বিশ্বভ্রমণ বিশ্বভ্রমণে কতোজনে কতো শত ঘণ্টা না জানি ব্যয় করেছেন। কিন্তু আধুনিক পর্যটকরা মাত্র আধা ঘণ্টায় বিশ্বের অর্ধেকটা ঘুরে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন। আমেরিকান সেনাবাহিনী এবং ব্রাজিল লাইটক্রাফট নামের ধারণা নিয়ে এসেছে।

কোনো দিন হয়তো এ রকম লেজার বিস্ফোরণের সাহায্যে আকাশে ওড়া যাবে এবং যাত্রীদের বা মালপত্র বিশ্বের এ মাথা থেকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়া যাবে। সাধারণ বিমানের মতো কিছুদিনের মধ্যে এ ধরনের আকাশ যান আকাশে ওড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ১০. মন বোঝা সত্যিকারের মন বোঝার যন্ত্র কেবল কল্পবিজ্ঞানের কথা কাহিনীতেই দেখতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে মিথ্যা ধরার যন্ত্রগুলো কেবল পরোক্ষ আভাস দেখে সত্য-মিথ্যা ধরতে পারে। বর্তমানে মস্তিষ্ক স্ক্যানের মাধ্যমে নিউরন বিজ্ঞানীরা লোকজনের কাজ কারবার সম্পর্কে আগাম বলতে পারেন।

এমনকি কারো কোনো ভুল করার আধঘণ্টা আগে তার আভাস দিতে পারছেন বিজ্ঞানীরা। অন্য একটি উপায়ে মস্তিষ্কের কাজ কারবার বুঝে উঠতে অবলোহিত আলোর কাছাকাছি তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে আলো ব্যবহার করা হয়েছে। এতে নিউরন সঙ্কেতের পাঠোদ্ধার না করে মাথার ভেতর ঢোকা যাবে। নির্দিষ্ট কাজের সময় মাথার ভেতরকার প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে বিশেষ এ কৌশল দাঁড় করানো হয়েছে। তাই কেবল ঈশ্বর নয়, অচিরেই মানুষও মানুষের মন বুঝতে পারবে।

তবে মনের গোপনীয়তার বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে এখনো বিতর্ক চলছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।