আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাবলিক টয়লেট,সরকার এবং নির্বাচন পদ্ধতি বিষয়ক সুগভীর চিন্তাভাবনা !!!

একজন সাদাসিদে মানুষ আমার মোটেই ব্লগ লেখার অভ্যাস নাই । জীবনে প্রথম ব্লগ লেখার জন্য আমি কী-বোর্ড হাতে তুলে নিয়েছি । কলম দিয়ে লিখতে হয় বাধ্য হয়ে,ইচ্ছার বিরুদ্ধে । কলম দিয়ে লিখলে আমার লেখা সুন্দর হয় না, লাইনগুলা কেমন যেন এক অদৃশ্য সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে উপরে উঠে পড়ে । কালিও শেষ হত খুব দ্রুত ।

তাছাড়া কলেজে পড়াকালীন সময়ে এক স্যার আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন আমার পুরুষাঙ্গের সাথে কলমের সাদৃশ্যের ব্যাপারে । এসব নানাবিধ কারনে কলমের প্রতি আমার ব্যাপক ক্ষোভ । কলম ছেড়ে কী-বোর্ড ধরাতে প্রচুর আনন্দ । লেখা খুব সুন্দর । একেবারে ছাপা অক্ষরের মত ।

কম্পুতে অভ্র নামে একটা জিনিস থাকলে তো আর কথাই নাই । আগে বলতো অসির চেয়ে মসি বড় । এখন বলা উচিৎ , অস্ত্রের চেয়ে অভ্র বড় । আরেকটা বড় সুবিধা হল কালি শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নাই । যেটা আমার মত কিপটাদের জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধা ।

আমি ছোটখাট কিপটা না, কিপটামিতে আমার বেশ নাম ডাক আছে বন্ধুমহলে । আমার কিপটামি নিয়ে তারা বেশ হাসাহাসি করে বিনোদন লাভের চেষ্টা করে । যদিও আমি এই হাসির কোন অর্থ খুঁজে পাইনা । এই তো সেদিন,আড্ডা দিচ্ছিলাম সবার সাথে । হঠাৎ প্রকৃতির ছোট একটা ডাক ।

পাশেই পাবলিক টয়লেট ছিল । যেখানে ছোট কাজটা সারতে গেলেও ২ টি টাকা দিয়ে আসতে হয় । আমি তাও গেলাম না । বসে বসে উশখুশ করছিলাম । বন্ধুর প্রশ্ন , "যাস না ক্যান ?২ টাকার লাইগ্যা ? এইখানে মুইতা দিবি নাকি হালা ? নাইলে ওই ডাস্টবিনের পাশে কুত্তাটার লগে খাঁড়াই যা " ।

যথেস্ট অপমানজনক বক্তব্য । প্রচন্ড অপমান লাগলেও মুখটা হাসিখুশী রেখে তাকে যুক্তিসহকারে বুঝানোর চেষ্টা করলাম আমি মোটেই কিপটা না । বললাম , "দোস্ত ওখানে হাগতে লয় ৫ টাকা । ৫ টা মিনিট বইলে আমার হাগা ধরবো মনে হয় । ৫ টাকা দিয়া তখন হাগলে আমার মুতার ২ টা টাকা বাইচ্যা যায় " ।

মনে হয়না অভাগা আমার কথার দাম বুঝলো । বুঝার কথাও না । অতীতে মানুষ না বুঝে কত দার্শনিকরে পরপারে পাঠাই দিছে,আর সে জায়গায় আমারে তো সামান্য পাবলিক টয়লেটে পাঠাইলো । পাবলিক টয়লেটে ঢুইকা আমি সরকারের জাত গুষ্টি উদ্ধার করলাম । অবশ্যই মনে মনে করলাম ।

প্রকাশ্যে এই কাজ করে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার অপব্যবহারের দায়ে জেল খাটার কোন ইচ্ছাই আমার নাই । বলা যায়না , পাবলিক টয়লেটের ভেতরও ভ্রাম্যমান আদালত থাকাটা বিচিত্র না । পাবলিক টয়লেট বলে সেখানে আইনের সুশাসন নিশ্চিত করা হবে না ,এটা কোন ধরনের কথা ? এতসব চিন্তা ভাবনা করে আমি মনে মনেই গালি দিলাম সরকারকে । সরকার কি পারেনা বিনামুল্যে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য রাস্তার মোড়ে মোড়ে সরকারী টয়লেট বানাই দিতে ? এতে করে এক ঢিলে ১০-১২ টা পাখি মারা যায় । টয়লেটের নামকরণ করা যায় ইচ্ছামত ।

দলের অনেক নেতার খুব শখ ফিতা কেটে যে কোন কিছু উদ্ভোদন করার এবং এই ফিতা কাটার ভিডিও বিটিভির রাত আটটার খবরে দেখানো । তাদের শখ টাও পূরণ হয় । জনগণের শখ পূরণ না করলেও ক্ষমতায় যাওয়া যায় ,থাকা যায় গদি আঁকড়ে । কিন্তু নিজদলীয় নেতাদের শখ পুরণ না করলে আপনি আর নাই । যাই হোক, আমি এই পাবলিক টয়লেটে দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম আগামী নির্বাচনে যে দল প্রতিশ্রুতি দিবে বিনামূল্যে পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করা যাবে তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসলে , আমি তাকেই ভোট দিব ।

সরকারের কাছে আমার চাহিদা অল্প । মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত । ভোটের আগে তারা যতই বলুক , আমরা ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ হেন হবে,তেন হবে ,চাল-ডাল-বাল এর দাম কমবে, বিদ্যুৎ বাড়বে , রাস্তাঘাট হবে সুন্দর - ঘরে আয়না লাগবেনা , রাস্তায় চেহারা দেখতে পারবেন । দুর্নিতি থাকবেনা ,এইটা থাকবেনা , ওইটা থাকবেনা - আমি তাদের ভোট দিবনা । আমি জানি এর কিছুই তারা করতে পারবেনা ।

খেজুরে গল্পে আমার মন ভরেনা । গতবার মহাজোটের পুঁটলিতে গেছিলো আমার মহামূল্যবান ভোট । আইডিয়া করেন কেন তাদের ভোট দিলাম । পারলেন না । আমি এত বেকুব না যে ১০ টাকায় চাল,প্রতি পরিবার থেকে একজনকে সরকারী চাকরী এসব অসম্ভব কথা বিশ্বাস করে ভোট দিব ।

আমার চাহিদা অনেক অল্প, আগেই বলছি । জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর , মাওলানা ভাসানি নভোথিয়েটার, চীন মৈত্রি সম্মেলন কেন্দ্র - এই ধরনের বিভিন্ন জিনিসের বিভিন্ন ধরনের আলাদা আলাদা নাম মুখস্থ রাখতে রাখতে আমার ক্ষুদ্র মস্তিস্কের পেরেশান অবস্থা ছিল । চিন্তা করে দেখলাম আওয়ামী লীগ আসলে এই পেরেশান অবস্থা থেকে মুক্তি পাব । সব জায়গার এক নাম । কত ব্রিলিয়ান্ট একটা আইডিয়া ।

যদিও জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের বর্তমান নাম নিয়ে আমি হতাশ । রাজনৈতিক দলগুলো সৎ হলে আপনারা যারা আমার মত চালাক (!!!) না,যাদের চাহিদা অনেক বেশী সরকার থেকে ,তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হতো কাকে ভোট দিবেন । নাহ ! অতটা সৎ হওয়ার দরকার নাই যে তারা বলবে "আমরা ক্ষমতায় গেলে দুর্নিতি করব না " । এইটা পুরা মিথ্যাই । আমাদের নির্বাচন পদ্ধতি হওয়া উচিৎ টেণ্ডার সিস্টেমে ।

বিএনপি- আলীগ সততা বজায় রেখে টেণ্ডার দাখিল করবে । তারা সৎ ভাবে বলবে আগামী পাঁচ বছর আমার পুত্র এবং নেতারা এত হাজার কোটি টাকার বেশী দুর্নিতি করবেনা । যার পরিমাণ অল্প হবে আমরা দেশটাকে তাদের হাতে তুলে দিব ৫ বছরের জন্য । পরিশেষ :ব্লগ লেখার অভ্যাশ নাই আগেই বলছি । তারপরও দেখিনা লিখেই ফেলি এই ধরনের একটা মুড নিয়ে লিখে ফেললাম ।

কি নিয়ে লিখব , কতটুকু লিখব এগুলা কোন কিছুই ঠিক ছিলনা । আধা ঘণ্টা ফেইসবুকিং টাইম বিসর্জন দিয়ে লিখলাম । লজ্জায় এখনো ফেইসবুকে শেয়ার দেয়া হয় নাই । লেখার হেইডলাইন নিয়েই চিন্তায় আছি ৫মিনিট ধরে । কমেন্ট দিয়ে জানান দেন কেমন লাগল ।

ব্লগে থাকব নাকি বিদায় নিব তাও জানান । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.