‘রানার খবর জানেন মুরাদ জং আর আলী হায়দার। তাঁদের জিজ্ঞেস করুন, তাঁরা বলতে পারবেন কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন। ’ ধসে পড়া ভবনের মালিক যুবলীগের নেতা সোহেল রানা সম্পর্কে জানতে চাইলে এমন মন্তব্য করেন সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফিরোজ কবির।
শুধু ফিরোজই নন, সাভারের অনেকেরই অভিযোগ, স্থানীয় সাংসদ তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ ও থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দারের আশ্রয়ে থেকেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন রানা। ভবনধসের পর তাঁরাই রানাকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন।
এ ব্যাপারে জানতে মুরাদ জংয়ের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ঘনিষ্ঠ সাভার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ করি, রানার সাত গুষ্টিও আওয়ামী লীগ করে। সম্পর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু তাই বলে আমি আর এমপি তাঁকে পালাতে সাহায্য করেছি, এটা ফালতু কথা। ’
ধসে পড়া রানা প্লাজার মালিক ও পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানা পালিয়ে যাওয়ার পর এখন পুলিশ তাঁকে খুঁজছে।
পুলিশ দাবি করছে, তিনি যাতে পালিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য সব সীমান্ত ও বন্দরে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রানাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁর ধারণা, রানা দেশেই আছেন।
ৎব গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা জানান, ভবনধসের পর থেকে রানার ফোনও বন্ধ। মাঝে দু-একবার খুলে এক-দুইটা ফোন করে আবার বন্ধ করে রেখেছেন।
এতে দেখা গেছে, ভবনধসের পর তিনি পল্লবীর বিরুলিয়া এলাকায় আত্মগোপন করেন। সর্বশেষ গতকাল শনিবার তাঁর অবস্থান ছিল গাজীপুর এলাকায়। এরপর আর খোঁজ নেই।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সোহেল রানার বিরুদ্ধে দুটি মামলা আছে। দুটি মামলাই হয়েছে ভবনধসের পরে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একটি মামলা করেছে ইমারত বিধিমালা আইনে আর অপরটি হয়েছে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে। সাভার থানার পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেছে। এ ছাড়া রানার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা নেই। থানার পুলিশের কাছে তাঁর মামলার কোনো রেকর্ডও নেই।
সাভার বাজার রোডের বাসিন্দা রানার বাসায় কেউ নেই।
গতকাল সেই বাসায় গিয়ে ফটকে তালা ঝুলতে দেখা যায়। পাশের এক দোকানি বলেন, এ বাড়িতে কেউ নেই। তবে তিনি শুনেছেন রানার মা হাসপাতালে আছেন। পরিবারের লোকজনও হাসপাতালে গেছেন।
আশপাশের বাসিন্দারা বলেন, তাঁরা শুনেছেন রানা তাঁর ঘনিষ্ঠ এক সহযোগীকে দিয়ে সাভারের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তাঁর জমানো বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নিয়েছেন।
তবে কোন ব্যাংক থেকে টাকা তোলা হয়েছে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেক একসময় তেলের ব্যবসা করতেন বলে তিনি কলু বলেই পরিচিত। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সোহেল রানা দ্বিতীয়। স্থানীয় অধরচন্দ্র হাইস্কুলে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে রানা প্লাজার অভ্যন্তরে যুবলীগের নেতা গাজী আবদুল্লাহ খুনের ঘটনায় আসামি ছিলেন রানা।
তবে তদন্তের পর পুলিশ অভিযোগপত্র থেকে রানার নাম বাদ দেয়। ২০০৮ সালে ভিপি হেলাল গুম ও হত্যার অভিযোগও ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। সাভারের মাদক ব্যবসায়ী মুন্না ছিল তাঁরই আশ্রয়ে। কিছুদিন আগে মুন্নার মৃতদেহ পাওয়া যায় সাভারের একটি জলাশয় থেকে। ধারণা করা হয়, তিনি গুপ্তহত্যার শিকার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।