সৈয়দ মুতনু
পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান জঙ্গি নেতা মাসুদ আজাহারের নির্দেশে বাংলাদেশে আসে দুর্ধর্ষ জঙ্গি রেজোয়ান আহম্মেদ। পাকিস্তান থেকে গত রমজান মাসে সে বাংলাদেশে এসে চাঁদপুরের বিএনপি নেতা মহিউদ্দিন আহমদের ঢাকার সুকন্যা টাওয়ারে ওঠে। তবে চলতি মাসের মধ্যেই একটি অপারেশনে অংশ নিতে তার ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। এর আগেই গত ২৭ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে র্যাবের হাতে ধরা পড়ে পাকিস্তানের এ দুর্ধর্ষ জঙ্গি। টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গি রেজোয়ান এসব তথ্য দিয়েছে।
গ্রেফতারের পর নিউ মার্কেট থানায় দায়ের হওয়া মামলায় পাকিস্তানি জঙ্গি রেজোয়ানকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। টিএফআই সেলে টানা ৭ দিনের জিজ্ঞাসাবাদে সে এসব তথ্য জানায়। আজ তার রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জঙ্গি রেজোয়ানকে আজ আদালতে হাজির করে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন জানানো হতে পারে বলে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
পাকিস্তানি জঙ্গি রেজোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওই সূত্রটি জানায়, গত কয়েক দিনে রেজোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে, এ জঙ্গি বাংলাদেশকে মূলত আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করেছে।
চলতি মাসেই একটি হামলায় অংশ নিতে তার ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। তবে ভারতে কি ধরনের হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে সে ব্যাপারে দুর্ধর্ষ জঙ্গি রেজোয়ান এখনও মুখ খোলেনি বলে ওই সূত্রটি জানায়।
সূত্র জানায়, টিএফআই সেলে জঙ্গি রেজোয়ান জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, গত রমজান মাসে সে এক মাসের ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে আসে। পাকিস্তানে জয়েশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান নেতা মাসুদ আজাহারের নির্দেশে সে বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশে তাদের এজেন্ট মহিউদ্দিন আহমেদ তাকে বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে।
পরে তার নিউমার্কেট এলাকার বাসায় ওঠে সে। এর কয়েক দিন পর মহিউদ্দিনের সঙ্গে সে তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে যায়। সেখানে তাকে তার পাকিস্তানি বন্ধু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। পাকিস্তান থেকে বিভিন্ন সময়ে তার মতো বেশ কয়েক জন মহিউদ্দিনের কাছে বাংলাদেশে এসেছে। তবে কতজন এসেছে রেজোয়ান তা নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেনি বলে সূত্র জানায়।
র্যাবের একটি সূত্র জানায়, জয়েশ-ই- মোহাম্মদের জঙ্গিরা বাংলাদেশে হামলার কোন পরিকল্পনা করছিল কিনা এ ব্যাপারে জঙ্গি রেজোয়ানকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে, বাংলাদেশ তাদের টার্গেট নয়। তার বাংলাদেশ হয়ে ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। পাকিস্তান থেকে ভারতে যেতে কড়াকড়ি থাকায় বাংলাদেশকে তারা রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। তাছাড়া তাদের সংগঠন থেকে শীর্ষ নেতারা যাকে যখন যে দেশে যাওয়ার নির্দেশ দেয়, সঙ্গে সঙ্গেই নির্দেশ মানতে বাধ্য তারা।
তবে যাতায়াতের সব কার্যক্রম ও পরিবারের ভরণ-পোষণের সব খরচই বহন করা হয় সংগঠন থেকে। ভারতে গিয়ে হামলার ব্যাপারে সে জানায়, ভারতে পেঁৗছানোর পর সংগঠন থেকে নির্দেশ মতো তার কাজ করার কথা ছিল। শুধু সে জানতো ভারতে একটি অপারেশনে অংশ নিতে হবে, এজন্য তাকে ভারত যেতে হচ্ছে। তবে তার আগেই সে বাংলাদেশী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে।
র্যাবের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, মহিউদ্দিনের সুকন্যা টাওয়ার থেকে পাকিস্তানি জঙ্গি রেজোয়ানসহ গ্রেফতারকৃত অন্য ৪ জঙ্গি জিজ্ঞাসাবাদে বাংলাদেশে জয়েশ-ই-মোহাম্মদের জঙ্গিদের আশ্রয়দাতা হিসেবে মহিউদ্দিন ও তার ভাই সালাউদ্দিনের সংশ্লিষ্টতার কথা জানিয়েছে।
মহিউদ্দিন নিজের সিডি ব্যবসা ও গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তান গিয়ে জয়েশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান জঙ্গি নেতা মাসুদ আজাহারসহ অন্য শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। জয়েশ-ই-মোহাম্মদের পাকিস্তানি জঙ্গি রেজোয়ান ছাড়া বাংলাদেশে এ পর্যন্ত জয়েশ-ই-মোহাম্মদ অন্য কোন জঙ্গি অবস্থান করছে কিনা মহিউদ্দিন আহমদকে গ্রেফতার করা গেলে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে র্যাব কর্মকর্তারা জানান। মহিউদ্দিন ও তার ভাই সালাউদ্দিনকে গ্রেফতারের জন্য র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পাকিস্তানি জঙ্গিসহ ৫ জঙ্গি গ্রেফতারের ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মতলুবুর রহমান 'সংবাদ'কে জানান, পাকিস্তানি জঙ্গি রেজোয়ান জিজ্ঞাসাবাদে বাংলাদেশে তার অবস্থান ও পরিকল্পনা সম্পর্কে অনেক তথ্যই দিয়েছে। তার আশ্রয়দাতা মহিউদ্দিনসহ জয়েশ-ই- মোহাম্মদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকের নামও বলেছে সে।
তবে তদন্তের স্বার্থে যাচাই-বাছাই ছাড়া তাদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া এর আগে বাংলাদেশ থেকে গ্রেফতার হওয়া লস্কর-ই-তৈয়বার কোন জঙ্গি সদস্যদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল কিনা তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, প্রথম দফা ৭ দিনের রিমান্ড মেয়াদ শেষ হওয়ায় আজ তাকে আদালতে হাজির করা হবে। প্রয়োজনে নতুন করে রিমান্ড আবেদন করা হতে পারে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।