আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অদ্ভুত প্রেমের গল্প (১)

পুলক ড্রয়িং রুমে বসে আছে। একটু আগেও এই ঘরে পুলকের মা এবং রীতার মা ছিল। রীতা নামক একটি মেয়ের সাথে কথা বলতেই মায়ের সাথে এখানে আসা পুলকের। সেই মেয়েটির সাথে নিভৃতে কথা বলার সুযোগ করে দেয়ার জন্যেই তার মা আর রীতা নামক মেয়েটির মা অন্য ঘরে গিয়েছে। এটা রীতাদের ই বাসা।

‘মেয়ে দেখতে আসা’ – ব্যাপারটার মধ্যেই কেমন জানি একটা অস্বস্তিকর কিছু একটা আছে। তবে পুলক কিন্তু আগ্রহের সাথেই অপেক্ষা করছে। উলটাপালটা কথা বার্তা বলে মানুষকে ভড়কে দেয়ার কাজটা তার অনেক প্রিয়। এই জন্য বেশিরভাগ মানুষই তাকে তেমন পছন্দ করে না। এইখানে মেয়েটাকে কত তাড়াতাড়ি ভড়কানো যায়, সেটাই ভাবছে পুলক।

খুব বেশী কিছু করতে হবে বলে মনে হয় না। যুক্তি দিয়ে কথা বললেই মানুষ খুব ভড়কে যায়। এটা অনেক আগেই খেয়াল করেছে পুলক। মানুষ আবেগী কথাবার্তা বললে খুব খুশি হয়। যৌক্তিক কথা ঠিক মানতে পারে না।

শাড়ি পরা একটা মেয়ে ঘরে ঢুকল। পুলক ভদ্রতা করে উঠে দাঁড়ালো। মেয়েটি বসলো। পুলকও বসলো। -হেলো! আমি রীতা।

-আমি পুলক। -কেমন আছেন? -ভালো, আপনি? -আমিও ভালো। এরপর নীরবতা। এটা হচ্ছে সেই মুহূর্ত যখন মানুষ ভাবে যে এখন কী বলা যায়!! খুব বেশীক্ষণ নীরব থাকা লাগলো না। কারণ পুলক কথা খুঁজে পেয়েছে।

-আপনি কি করছেন? হুমায়ূন আহমেদ এর উপন্যাস হলে উত্তর আসতে পারত, ‘বসে আছি!! দেখতে পারছেন না? আশ্চর্য মানুষ তো আপনি!!’ -আমি এমবিএ করছি। -বাঃ! কোথায় করছেন? -ডি ইউ তে। আই মীন ঢাকা ইউনিভার্সিটি। পুলক ভাবছে অনেকক্ষণ চিট চ্যাট হয়েছে। এখন আক্রমনের সময়।

-খুবই ভালো। পড়াশোনা করছেন এবং ভালো জায়গায় পড়াশোনা করছেন। খামাখা বিয়ে করতে চাইছেন কেন? রীতা যেন কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েছে। এরকম প্রশ্ন আশা করেনি সে একদমই। -খামাখা বিয়ে করতে চাইছি কেন মানে? -মানে, পড়াশোনা করছেন।

নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। তার আগে বিয়ে করে ফেললে ঝামেলা না? ছেলেপক্ষ যতই লিবারেল হোক। আর বিয়ের আগে সবাই লিবারেল ভাব দেখায়। পরে দেখবেন পড়তে দিচ্ছে না, চাকরি করতে দিচ্ছে না। আগ বাড়িয়ে এরকম ঝামেলায় জড়ানোর কি দরকার? রীতার হঠাৎ করে কেন জানি খুব মজা লাগলো।

লোকটা তাঁকে ভয় দেখাচ্ছে। ঘটনা কী? প্রেমিকা আছে নাকি এনার? নাটক সিনেমায় যেমন হয়, প্রেমিকা থাকে তাও মায়ের অনুরোধে মেয়ে দেখতে আসা? ইন্টারেস্টিং!! -কেন? আপনি আমাকে চাকরী করতে দেবেন না? -আমি? মানে আমি আমার কথা বলছি না। আমি তো ইন জেনেরাল বলছি। মানে এখন বিয়ে করাটা আপনার জন্য বোকামি না? এই অর্থে বলছি আর কি! -কেন? আমরা তো ‘বিয়ে’ নামক আনুষ্ঠানিকতার উদ্দেশ্যেই এখানে বসা। সো আপনি ইন জেনেরাল না বলে, নিজের কথা বলুন।

-আমার কথা? -হম! আপনার কথা। পুলক দেখলো যে কোথায় সে আক্রমণ করবে। উলটা তার দিকেই আক্রমণ হচ্ছে। ইটস টাইম টু রিটালিয়েট। -ওকে।

আমি পাত্র হিসেবে মোটেও সুবিধার না। -তাই? কীরকম? রীতা কৌতুকময় চোখে জিজ্ঞেস করলো। -আমি খুবই বদরাগী ধরনের লোক। ধুরুম ধারুম রাগ উঠে যায়। গায়ে হাতও তুলতে পারি।

খুবই পসসেসিভ। দেখা যাবে আপনি অন্য ছেলের দিকে তাকাতেও পারছেন না। এদিকে আমি অন্য মেয়ের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছি। এই নিয়ে কিছু বললেও মহাবিপদ। ভয়ানক রেগে যাবো।

রোমান্টিকতার ‘র’-ও নাই আমার মাঝে। বরং ত্যাড়া ব্যাকা কথা বলে রোমানটিক মুড দূর করার আশ্চর্য ক্ষমতা আমার আছে। আমার যেটা ঠিক মনে হয়, সেটা পৃথিবী যদি উলটায়ে যাওয়ার ভানও করে তবু আমারটাই ঠিক। এইটুকু বলে পুলক ভাবছে আর কী যোগ করা যায়! তখন রীতা তার কৌতুকময় চাহনি নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো -শেষ? পুলক মনে মনে নিজেকে গালি দিচ্ছে। আরও কত কিছু বলবে সে ঠিক করে রেখেছিল।

একটাও মনে পরতেসে না। ড্যাম!!! -হুম! মোটামুটি। রীতা মুচকি হাসল। তারপর সরাসরি পুলকের দিকে তাকিয়ে বলল, -আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে। আপনার ইচ্ছা হলে আমাকে এই নাম্বার এ কল দিতে পারেন।

আর আপনার নাম্বার আমার কাছে আছে। আমিও আপনাকে কল দিয়ে দিতে পারি কিন্তু!! এখন আমি যাই। পুলক বেশ হতভম্ব হয়ে রীতার যাওয়া দেখল। তৈরি করে আসা পুরোটা না বলতে পারলেও যতটুকু বলেছে, একটা মেয়ের তাতে ভয় পাওয়ার জন্য যথেষ্ট মনে হয়েছিল তার। মেয়েটা দেখি ডেঞ্জারাস।

এসব ভাবতে ভাবতে পুলক উঠে দাঁড়ালো। (চলতে পারে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.