আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প : শেকড়

জলের অহং

গল্প : শেকড় ০১. বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে সে। মাঝে মাঝে ফেরিঅলার হাকডাক শোনা যায়। একদল কাক জটলা পাকিয়েছে ডাস্টবিনের ওপর। লোকটা এসে রাস্তায় বসে পড়ে। চোখদুটো লাল টকটকে।

ডাস্টবিনে উঁকি দেয়, হয়তো খাবারের খোঁজে। ক্লান্ত দেহ এলিয়ে শুয়ে পড়ে দোকানের সিঁড়িতে। সে লোকটাকে দেখে। কে এই লোকটা... শুধু ভাবে মনে মনে। তুমি কে? টুকু, টুকুসোনা, তুমি কোথায়? শোনো, মা ডাকছে।

যেওনা কিন্তু , আমি আসছি এখনি। টুকু ভেতরে যায়। টুকু সকাল থেকে কিছুই খাওনি, শিগগিরি কিছু খেয়ে নাও, দিদা জানতে পারলে বকা দেবে কিন্তু। মা, দিদা শুধু খেতে বলে কেনো? না খেলে তুমি বড় হবে না যে ! আরতি পাউরুটিতে জেলি মেখে প্লেটে রাখে। টুকু এক দৌড়ে বারান্দায় এসে পড়ে, তুমি রুটি খাবে? নাহ! তোমার নাম কী? টুকু তুমি কার সাথে কথা বলো ? নাস্তা শেষ করে যাও।

আসছি মা। আমার নাম টুকু, তোমার নাম বলো না কেনো? নাম নাই, কোনো নাম নাই! বিড় বিড় করে বলে লোকটা। আমি তোমায় কী বলে ডাকবো? আরতি ছেলের পাশে এসে দাঁড়ায়। জটাধারি লোকটার দিকে চোখ পড়ে তার। লোকটা এক দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

আরতি দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নেয়। শাড়ির আঁচলটা ভালোভাবে টেনে রাখে। টুকুর হাত ধরে ঘরে নিয়ে যায়। তোমাকে না বলেছি অচেনা কোনো লোকের সাথে কথা বলবে না। ঘরে বসে খেলো।

টুকুর মন খারাপ হয়ে যায়। খেলনাগুলো একপাশে পড়ে আছে। ০২. অফিস থেকে ফিরছে সে। তার অপেক্ষায় আছে ছেলেটা। তপন ট্রাফিক সিগনালে বসে ভাবে আজ টুকুর সাথে কী গল্প করবে।

একরত্মি টুকুসোনা, আজকাল অনেক কথা শিখেছে। প্রতিদিন নতুন নতুন গল্প শুনতে চায়। তপনের গল্পের ভাণ্ডার সব শেষ। মাঝে মাঝে অফিসের কথা বলে টুকুকে। আরতি হাসে আর বলে , এসব কী বলছো , ওকি কিছু বোঝে? আমার আর কোনো গল্প নেই যে! ওকে কিন্ডারগার্ডেনে পাঠাতে চেয়েছিলো আরতি।

তপন রাজি হয় নি। এটা খেলার বয়স টুকুর, এমনিতে ভালো আছে আমার ছেলে! একবারে সামনের বছর স্কুলে ভর্তি করবো। কী বলো ? ০৩. দরজা খোলার শব্দে এক দৌড়ে বাবার কাছে পৌছে যায় সে, বাবা বাবা আমরা কি এখন বেড়াতে যেতে পারি? নিশ্চয়ই! আমি তোমার দিদার সাথে চা খেয়ে তারপর বেরুবো, কেমন ? তপন ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে। বাবাকে ছাড়ো , ছাড়ো টুকু, যা তুই হাত মুখ ধুয়ে নে। জয়াকে ফোন করিস, বেশ ক'বার খুঁজেছে তোকে, তোর মোবাইল কি বন্ধ ছিলো? ছেলের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলেন উমা দেবী।

একমাত্র মেয়েটিকে হোস্টেলে পাঠিয়ে ঢাকায় ছেলের সংসারে আছেন। এবাড়িতে টুকুর সবচাইতে কাছের মানুষ তিনি। তবে অভিমানটাও দিদার সঙ্গেই বেশি। তাঁর শাদাশাড়ির আঁচল ধরে বসে থাকে টুকু। মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে পড়ে দিদার কোলে।

আরতি তোমার ছেলেকে নিয়ে যাও দেখি, ও আমার শাড়ির ভাঁজ নষ্ট করে দিলো যে। আরতো মুখ টিপে হাসে। আর টুকু... ঘুম থেকে জেগেই দিদাকে খোঁজে। ওকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো বলে চিৎকার করে কাঁদে। আরতি ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ছেলেরা কাঁদে না মা।

কে বলেছে, ঐ লোকটাতো রোজ কাঁদে, ঐ যে ঐ রাস্তার ধারে। মতি ফিক করে হেসে বলে ঐ ব্যাডাতো পাগল, কান্দে হাসে, কতো কিসু করে! পাগল কী, মা ? কিছু না বাবা, তুমি ঘুমাও। মতি যা এখান থেকে। কাজের ছেলেটাকে তাড়িয়ে দেয় সে। লোকটার কথা মনে করতেই গা শিউরে ওঠে আরতির।

চলবে........

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.