আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃষ্টিগুলো......

An Engineer needs not to be a perfectionist or a fastidious intellect. An Engineer needs to be someone who can keep pursuing the goal with whatever resources available at a particular moment.

বাঙ্গালির বৃষ্টির প্রতি কিছু দুর্বলতা আছে। ছেলেমেয়েদের নাম দেখা যায় অহরহ বৃস্টি/বর্ষা/শাওন/ এইসব দিয়ে ভরিয়ে দেয় (ইয়ে... আমিও কিন্তু এই শ্রেণীর ভুক্তভোগী... আমার নামের পিছনে আমার কোনো হাত ছিলোনা, বিশ্বাস করেন!!!) এই ভালোবাসার কারনে। অন্যদের কথা জানিনা, কিন্তু আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর সঙ্গে বৃষ্টির direct link আছে (এইখানে লুল-রা মনে করতে পারেন বৃষ্টি কে? ভাই, তোরা আকাশের দিকে চায়া থাক!!! তাইলে বুঝবি...)। কোনো বিচিত্র কারনে বৃষ্টিতে ভিজতে আমি অসম্ভব পছন্দ করি। ফ্যানাটিক এর মত।

স্কুলে যখন ছিলাম বৃষ্টির দিনে টিফিন পিরিয়ড গুলোতে বের হয়ে মাঠে ধামাধাম ফুটবল খেলতাম। তখন পিচ্চি সাইজ ছিলো, মিনিয়েচার, আর রিফ্লেক্স ছিলো রোডসের মত ( আর এখন দানব হয়েচি, মানুষজন দেখলে গডঝিলা মনে করে, আর শামুকের ন্যায় শ্লথ )। স্কুলের মাঠে বৃষ্টীতে ভিজে কাদামাটিতে একাকার হয়ে বন্ধুদের ল্যাং দিয়ে ফালায়ে গালি খেয়ে কাদায় শার্ট একাকার হয়ে পিছনের বেঞ্চে বসে সারের হাতে মাইর খাওয়ার ভয়ে মতান্তরে ঠান্ডাতে কাপতে কাপতে sensored jokes করা অথবা successfully Operation "স্কুল-পালানো" commence করে সংসদ ভবন মাঠে ভিজা ঘাসের মধ্যে দৌড়াতে থাকা ছিলো বর্ষাকালের স্কুলজীবন। আগেই স্বীকার করে নেই যে স্কুলে থাকতে পড়াশুনা বাদে সব করেছি... সত্যি... আমার eccentricity স্কুলে বিশেষ নামে পরিচিত ছিলো । আর তখন বাসার সামনে এখনকার মত urban jungle হয়ে উঠেনি... বিশাল বিশাল মাঠ সব... রেগুলার ক্রিকেট/ফুটবল/সাতচারা সহ গুস্টিশুদ্ধা সব খেলার আসর আর বিশাল বিশাল সব আড্ডা বসত।

আর বৃষ্টীর দিনগুলোতে তো কথাই নেই। সব পাপীরা একসাথে আকাশের দিকে হা করে চেয়ে বৃষ্টীর পানি গেলায় মগ্ন... দেখলে মনে হবে চিলির Atacama Desert এ ২০ বছর কাটানোর পরে প্রথমবার বৃষ্টী দেইখা মাথায় শর্ট খাইসে। কিছুক্ষন পরে শুরু হইতো পাপীদের হিমু-হাটা। হাটতে হাটতে ইস্টার্ন হাউজিং এর কাদাভরা রাস্তা ধরে চলে যেত ভেড়ীবাধে, নদীর পাশে। চায়ের দোকানে বসে চা আর টা খেতে খেতে নদীর বুকে বৃষ্টি দেখে পাপীরা কবি হওয়ার পাপে লিপ্ত হত।

পাপীদের জাহান্নাম অবধারিত তারা যে পরিমান কবিতাস্রোত বর্ষাতে ভাসিয়েছে আর নিরীহ শুস্ক মানুষগুলোর কাব্যহীন brain এ বারোটা বাজিয়েছে। ( ইয়ে... আসলে আমিও এদের মধ্যে ছিলাম... ) আসল কথা হলো, বৃষ্টি তে ভিজার চান্স আমি most of the times মিস করিনি। বাসার ছাদে হোক, কলেজের / স্কুলের মাঠে হোক/ EME বিল্ডিং এর সামনের অথবা নতুন ক্যাম্পাসের রুক্ষ রাস্তা হোক, পরনে যা থাকুক কোনো বিচিত্র কারনে বৃষ্টী আসলে পা গুলো আমাকে কিভাবে জানি খোলা আকাশের নিচে টেনে আনে। এই রহস্যভেদ আমি আজকেও করতে পারিনি, তবে বিজ্ঞ বৃষ্টি-ভেজক দের মতানুসারে, এর পিছে দায়ী আমার (কু)নাম। নাম পরিবর্তন করলে এই সমস্যা ছুটতে পারলেও পারতে পারে... ভাই, মাফ চাই, নামটা পরিবর্তন অনেক hassle. এর চাইতে বৃষ্টিই সই।

একবার একজন আমাকে বলেছিলো, বৃষ্টিতে পারলে হুডফেলে রিকসায় চড়তে। বাচ্চা ছিলাম, রিপ্লাইএ বলেছিলাম : "পাগলে কামড়াইসে নাকি তুমারে? লোকে কি কইবে?" হায়রে লোক... যেদিন থেকে মজা বুঝলাম , বৃষ্টি নামলে হুড ফালায়া চলি। রাস্তায় মানুষ চায়া দেখে, WHO CARES!!! আরেকজন বলেছিলো, "যখন চোখের অশ্রুধারা লুকাতে চাও বৃষ্টিতে হাটো। দেখবে প্রকৃতি নিজের হাতে চোখের জল মুছে দিচ্ছে তোমার। " ।

হ্যা, কারো হাত ধরে হেটেছি, একসাথে ভিজেছি, হেসেছি, আর যেদিন চলে গিয়েছিলো, পানিগুলো লুকাতে একা একা হাটতে হাটতে ভিজেছি। সেদিন কথাটির অর্থ খুজে পেয়েছি; আর সেদিন থেকে অনেক কস্ট হলে আকাশের দিকে তাকায়ে মেঘের প্রার্থণা করি; কারন, অনেক দূর্বল আমি। কস্টগুলো সবাইকে দেখাতে চাই না। বৃষ্টিতে ভিজার disease নিয়ে আমাকে অনেক ভুগতে হইসে। কলেজে থাকতে একবার বাইরে তাকায়ে ঝড় হচ্ছে ভর-দুপুরে, আর আমি তা দেখছিলাম বারান্দার ফাকে দিয়ে।

ঝড় আর আমার মাঝে............ দুঃখের সহিত জানাতে বাধ্য হচ্ছি, ছিলো মেয়েদের সারি। আর তখন মাত্র ১ম বর্ষ, সবার পাঙ্খা গজাইসে... উদাস দৃষ্টিতে আমাকে তাকায়ে থাকাতে নারীকূল আমাকে লুল-শ্রেণীতে classify করলেন। তাহাদের ভাষ্যমতে, আমি নাকী বিশাল হা করে তাদের দিকে চায়া ছিলাম!! নাউজুবিল্লাহ মিন জালেক!!! জিন্দেগিতে কথা কইনা, আমারে খাইসে তো? কোনো বুদ্ধিমতি গিয়ে আমার নামে নালিশ ভি দিলেন লুল-আক্ষায়িত করে। ওই জটিলতা থেকে মুক্তি পাইতে গিয়ে আমার ঘন্টিতে ১২ টা বেজেছিলো, সত্যি... আরেকবার , কোনো পহেলা বৈশাখের রাত্রে... হায়রে, কালবৈশাখি ঝড়ের বৃষ্টির মধ্যে রাত ১১ টার সময় রাগের চোটে ১ থেকে বাসায় হেটে আসতে গিয়েছিলাম। বাসায় এসে দেখি... আমার মোবাইল... আমাকে সালাম জানাইয়া বিদায় গ্রহন করিয়াছেন ( ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন... মৃত্যুর পূর্বে উনার বয়স হইয়াছিলো মাত্র ১ বছর।

)। তবে, সুখস্মৃতিও কম নয়। স্কুলের পরে সবচেয়ে প্রিয় ২ বন্ধু আবির আর রাকিব কে ফিরে পেয়েছিলাম বুয়েটের ফরম কিনতে গিয়ে, সেদিনও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিলো। ফর্ম কিনে ৩ বন্ধু এক রিক্সায় ( তখন আমি কিন্তু অনেক ছিলিম ছিলাম, সত্যি...) উঠে খিচুড়ির খোজে ভিজতে ভিজতে এবং স্কুলের বন্ধুদের বিশেষ ডায়ালেক্টে সম্বোধন করতে করতে রাজপথে চলার স্মৃতি আমরা ৩ জনের কেউই এখনো ভুলিনি। এখনো কথায় কথায় ৩ জনের মুখে সেই দিনের কথা ফিরে আসে... যখন আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলো মুক্ত, স্বাধীন, বোতলে বন্দি জ্বীন নয় ।

অথবা ঘন বৃষ্টির মধ্যে আমার আর মাহফুজের হল থেকে ১-২ তে জিনিস মুভ করানো... তার হাতে বিশাল এক স্যুটকেস, কখনো ও কখনো আমি, আর রাস্তায় একটি খালি রিক্সাও নেই, আকাশেও লিকেজ... আর আমাদের নিজেদের দিকে তাকায়ে হাসিও থামেনা। অথবা স্কুলের "রাস্কেল" গুলোর সাথে বরিশালে ঝটিকা ভ্রমনের সময় ভ্যানে চড়া অবস্থায় সেই এক পশলা বৃষ্টী, সবার বুকের বোতাম টা খুলে আর চশমটা টা পকেটে রেখে চোখ বুঝে সেই পরশ অনুভব করা... আর মাঝে মাঝে চোখ খুলে বৃষ্টিস্নাত সবুজ দেখা। অথবা সমূদ্র সৈকতে বসে পায়ের কাছে ঢেঊ ভাঙ্গতে দেখা আর মৃদু বৃষ্টিতে ভিজে দূরে ঝাউবনের দুলুনি দেখা। অথবা ব্রক্ষপূত্রের বুকে নৌকার দুলুনিতে দুলতে দুলতে দূরে বৃষ্টিতে ঢাকা পড়ে যাওয়া রেলসেতুর আবছা অবয়ব দেখা। অথবা ঘেরের মাইলের পর মাইল জলাতে আকাশ ভেঙ্গে নামা বৃষ্টির শব্দ টিনের ছাউনির তলে বসে শোনা... অথবা দূরপাল্লার বাসে জানালার পাশে বসে থেকে বৃষ্টির ছাট অনুভব করা... অথবা বৃষ্টিভেজা কোনো দিনে জানালার পাশে বসে থেকে কোডিং করার খেতা পুড়ে রবীন্দ্র সংগীত শোনা... অথবা শিলা কুড়াতে বাসার পাশের বাচ্চাগুলোর সাথে নেমে বাচ্চা হয়ে যাওয়া... বলতে থাকলে শেষ হবেনা।

আর শেষ হোক, তাও চাইনা। কারন বৃস্টির সাথে ভাগ করেছি পাওয়া না পাওয়ার বেদনা , কিছু স্বপ্নের অপমৃত্যু , কিছু অবর্নণীয় আনন্দের মূহুর্ত, আর কিছু একাকীত্তের ঘন্টা। মুছতে চাইলেও, বৃষ্টির দিনগুলো মুছে ফেলাতে পারবো না মস্তিস্ক থেকে; কেনো, এই রহস্যের সমাধান খুজতে বাকি জীবন মনে হয় আরাম করে কেটে যাবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।