একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সামপ্রতিক জরিপে এসেছে, রাজধানী ঢাকা বসবাসের জন্য পৃথিবীর দ্বিতীয় নিকৃষ্টতম নগরী। ঢাকার এই অবস্থা অর্জনের নেপথ্যে বেসরকারি আবাসন কোম্পানিগুলোর ভূমিকা মূলত দায়ী।
বড় ভূমিকা রয়েছে সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষেরও (রাজউক), যাদের দায়িত্ব আবাসন সংক্রান্ত অনিয়ম খতিয়ে দেখা। রাজধানী ঢাকাকে বসবাসের অনুপযোগী করতে রাজউক ও আবাসন কোম্পানিগুলোর এই প্রতিযোগিতা হয়তো শিগগিরই ঢাকাকে নিকৃষ্টতার বিচারে এক নম্বরে নিয়ে যেতে পারে।
এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঢাকার চারপাশের খাল-জলাশয় দখল করে যেমন বেসরকারি আবাসন কোম্পানিগুলো তাদের প্রকল্প করছে, তেমনি করছে সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (রাজউক)।
এ পর্যন্ত রাজউক যতোগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে তার সবগুলোই কোনো না কোনোভাবে জলাশয় সংরক্ষণ আইন অমান্য করে গড়ে উঠেছে। কেরানীগঞ্জে ঝিলমিল প্রকল্পের জন্য যেখানে মাটি ভরাট করা হচ্ছে, সেখানে এক সময় জলাশয় ছিল।
ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা দূর করতে এ জলাশয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতো। সেই জলাশয় ভরাট করে বালি ফেলা হয়েছে। দেখে মনে হয় যেন কোনো মরুভূমি।
শুধু ঝিলমিল প্রকল্পই নয়, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প, উত্তরা আবাসিক প্রকল্প (তৃতীয় পর্ব), নিকুঞ্জ, বারিধারা ও বাড্ডা পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য প্রায় ৯ হাজার একর জমি ভরাট করা হয়েছে। এসব জায়গায় ছিল খাল-জলাশয়-পুকুর-ফসলি জমি।
ঢাকায় বন্যার সময় পানি নেমে যেতো এসব নিচু এলাকা দিয়ে। আবাসিক এলাকা তৈরির নামে এসব জমি থেকে হাজার হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
পরিবেশ বিধ্বংসের অভিযোগ তো আছেই, ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকের অভিযোগ জমির ন্যায্য মূল্যও পাননি তারা।
নব্বইয়ের দশকে যখন দেশে হাউজিং ব্যবসা শুরু হলো তখন থেকে আবাসন কোম্পানিগুলো ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের সব ভূমি গ্রাস করতে থাকে। এমনকি কোম্পানিগুলো যে গরিব মানুষকে তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করেছে তাদের বেশিরভাগকেই উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। ঠিক একই অভিযোগ যখন তদারককারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ওঠে তখন বিস্মিত হতেই হয়।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব আবাসন কোম্পানিগুলোর অনিয়ম তদারকি করা। আবাসন কোম্পানিগুলো আইন অমান্য করলে রাজউককে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
বিশেষ করে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ক্ষেত্রে রাজউক তার উপর প্রদত্ত দায়িত্ব ও ক্ষমতা প্রয়োগ তো করছেই না, উপরন' নিজেই আইন অমান্য ও অনিয়মের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। আবাসন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে মিলে রাজউকও নানা পরিবেশ বিপর্যয়কর প্রকল্প নিয়ে রাজধানীকে বসবাস অযোগ্য করে তুলছে।
এ প্রসঙ্গে রাজউকের চেয়ারম্যানের বক্তব্য হলো- এতোদিন রাজউকে কিছু খারাপ লোক ছিল। তারা বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম করেছে। এখন সেসব অনিয়ম খতিয়ে দেখা এবং নতুন করে যাতে কোনো অনিয়ম না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
বলাবাহুল্য, রাজউক নিজে অনিয়মমুক্ত হলেই তাদের নৈতিক জোর থাকবে অন্যদের অনিয়ম তদারকির।
সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও আবাসন ব্যবসায়ী পরিচয়ধারী ভূমিদস্যুদের ক্ষমতা ও দাপটের ব্যাপারে অসহায়ত্ব প্রকাশ দেখে বিস্মিত হতে হয়। ভূমিদস্যুদের প্রতি ভূমি প্রতিমন্ত্রীর জেহাদ ঘোষণা, খোদ প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি উচ্চারণের পরও পত্রিকার পাতায় রাজধানীতে গুলশান লেক দখলের খবর থাকে। তবে এ অবস্থা কোনোভাবেই বহাল থাকতে পারে না। কারণ মাথায় পচন ধরলে শরীর বাঁচে থাকে না।
তাই রাজধানীকে বসবাসযোগ্য ও সচল রাখার কথা বিশেষভাবে ভাবা জরুরী সরকারের নীতিনির্ধারকদের। রাজধানীর খাল, জলাশয়, মাঠ দখল ও দূষণমুক্ত করা, অপরিকল্পিত নির্মাণ প্রতিহত করা, সেই সঙ্গে রাজধানীর মানুষের স্বাভাবিক ও নিরাপদ চলাফেরার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।