আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দারিদ্রতার আরেক নাম - অম্মানের জীবন......

সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায়......

আমরা কি দায়বদ্বতা এড়াতে পারি???????? শুধু রিপোর্ট আর প্রতিবেদন দিলে কি কাজ হয়? তাদের জন্য আমরা কি কাজ করলাম মূল্যায়নের সময় কী আসনি???? চাঁদনী (ছদ্মনাম)। বয়স ২৭। বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানায়। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। বাবা ছিলেন কৃষক।

পাঁচ ভাই ও দুই বোনের সংসার। সংসারের খরচ জোগাতে হিমশিম খেতেন বাবা। অনেক সময় দিনের পর দিন না খেয়ে কেটেছে পরিবারের সবার। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত পরিবারের হাল ধরতে এক সময় ঢাকায় চলে আসে চাঁদনী। চাকরি নেয় একটি গার্মেন্টে।

পরিচয় হয় এক গার্মেন্ট কর্মীর সঙ্গে। তারা একই বাসায় ভাড়া থাকতো। ওই সহকর্মীই এক দালালের মাধ্যমে চাঁদনীকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ময়মনসিংহের যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দেয়। শুধু চাঁদনী নয়, দারিদ্র্যের কারণে প্রতিনিয়ত এমন ঘটনার শিকার হচ্ছে অসংখ্য মেয়ে। নেত্রকোনার কলমাকান্দা থানার রুমা, নারায়ণগঞ্জের শাপলাসহ ২৪৯ যৌনকর্মী রয়েছে ময়মনসিংহ পতিতালয়ে।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ‘পতিতালয়ে অবস্থানরত নারীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা’ শীর্ষক গবেষণা থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। অভিশপ্ত দারিদ্র্য : গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পতিতালয়ে যৌনকর্মে নিয়োজিত মেয়েদের বেশিরভাগই আসে মূলত গ্রামের দরিদ্র পরিবার থেকে। গ্রামের ভ‚মিহীন, দরিদ্র কৃষক, দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা ছোটখাটো গ্রামীণ কারুশিল্পনির্ভর পরিবারের মেয়েরাই এ পেশায় জড়িয়ে পড়ে। তাদের একটি বড় অংশ অন্তত দুই পুরুষ ধরে দরিদ্র। অনেক মেয়ে আসে দেশের চরম দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলগুলো থেকে।

বাংলাদেশের পতিতাদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ আসে কৃষিজীবী ও ভ‚মিহীন নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। বর্তমানে বাংলাদেশে পতিতা নারীর সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে যৌন বাজারে শিশু, কিশোরী থেকে শুরু করে তরুণীর পরিমাণ আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপুলসংখ্যক নারীর পতিতাবৃত্তিতে আসার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ দারিদ্র্য বা আর্থিক দৈন্যদশা। পাশাপাশি পারিবারিক কলহ, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অভাব, হতাশা, শারীরিক নির্যাতন এবং ধর্ষণের কারণেও অনেক মেয়ে এ অন্ধকার জীবনে জড়িয়ে পড়ছে।

এছাড়া গ্রামের মেয়েরা বিভিন্ন সময় কাজের সন্ধানে শহরে এসে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে শেষ পরিণতি হিসেবে পতিতাবৃত্তিকেই বেছে নেয়। একশ্রেণীর দুষ্টচক্র বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের কাজ বা চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়। এরপর ওইসব মেয়ের জীবনে নেমে আসে অমাবশ্যার অন্ধকার। তাদের জীবনের চিরসবুজ ¯^প্নগুলোর মৃত্যু ঘটে। আর্থিক দৈন্যের কারণে নারী ও অল্প বয়সী মেয়েরা পতিতাবৃত্তিতে যুক্ত হতে বাধ্য হয়।

কোনো রকমে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার তাগিদে নিজের ইচ্ছাটাকে বিসর্জন দিয়ে নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে হয়। উচ্ছেদ নয়, পুনর্বাসন : বিভিন্ন এনজিও যৌনকর্মীদের জন্য কাজ করলেও তাদের পুনর্বাসন ও অন্ধকার জীবন থেকে ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রতি জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের আহŸান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আলোর পথে আনতে সরকারের আশু পদক্ষেপ কামনা করেন তারা। এ গবেষণার তত্ত¡াবধায়ক সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আল আমিন রাব্বী বলেন, দারিদ্র্যের পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক কারণে নারীরা ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় এ পেশার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এ পেশায় জড়িতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

তাই এ ব্যাপারে সরকারের অবিল¤ে^ দৃষ্টি দেয়া উচিত। গবেষণা সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রায় ১২টির মতো পতিতালয় রয়েছে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সর্বত্র কিশোরী-তরুণী, বিশেষ করে যাদের বয়স ১৩-৩৫ এর মধ্যেÑ পতিতাবৃত্তিতে তাদের বড় রকমের চাহিদা রয়েছে। ১৯৯৯ সালে উচ্ছেদকৃত টানবাজার পতিতালয় নিয়ে একটি গবেষণা হয়। ওই গবেষণা থেকে জানা যায়, নারীদের অধিকাংশই অপ্রাপ্ত বয়সে পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত হয়।

আইনে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দিয়ে পতিতাবৃত্তি করানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ আইনের রক্ষকরাই এ কাজে সহায়তা করে। আইন আছে, প্রয়োগ নেই : বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮নং অনুচ্ছেদের ২নং উপ-অনুচ্ছেদ, দ্য বেঙ্গল সাপ্রেসন অফ ইম্মরাল ট্রাফিক অ্যাক্ট ১৯৯৩ অনুযায়ী, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬-এর ৭৪ ধারাবলে, ১৯৯৫ সালের ১৭ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন সম্পর্কিত কিছু অপরাধের জন্য বিশেষ বিধানকল্পে প্রণীত আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ প্রণয়ন করা হয়। এর ৮নং আইনে বিভিন্ন শাস্তির উল্লেখ থাকলেও তা ঠিকমতো প্রয়োগ হয় না। নারী পাচার ব্যবসা : বিভিন্ন গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, পতিতাবৃত্তিকে কেন্দ্র করে নারী পাচারের মতো জঘন্য ব্যবসা গড়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ থেকে পাচার করা নারী ও শিশুদের ভারতের কলকাতার সোনাগাছি, কালীঘাট, বউবাজার, যোতপুরসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন পতিতালয়ের বিক্রি করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় পতিতালয় সোনাগাছির ১৬ হাজার মেয়ের মধ্যে চার হাজার বাংলাদেশি। কালীরঘাট মন্দিরের পাশে গড়ে ওঠা পতিতালয়ে ১ হাজার ২০০ মেয়ের বসবাস। তাদের ৩০ ভাগই বাংলাদেশি। এইচআইভি-এইডসের ঝুঁকি : একাধিক সূত্র জানায়, পতিতাদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ঘাতক ব্যাধি এইচআইভি-এইডস রোগ সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ছে।

যদিও সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে এইডস আক্রান্তের হার কম, কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যে তা সমাজে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ও বাস্তব সম্ভাবনা এখানে খুবই বেশি। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০০০ সাল নাগাদ এইচআইভি সংক্রমিত হয়েছে মাত্র ১২৬ জন (ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেটেড পপুলেশন অ্যান্ড হেলথ প্রোগ্রাম)। বর্তমানে সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০০৮ সালের ডিসে¤^র পর্যন্ত দেশে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৪৯৫ জন। এইচআইভি-এইডসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণগোষ্ঠী হলো পতিতালয়ের যৌনকর্মী। যুগের পর যুগ অতিবাহিত হলেও পতিতারা নিষ্পেষিত, ঘৃণিত।

তাদের অবস্থান অন্ধকার গলিতে, যেখানে পরিবেশ নোংরা ও কর্দমাক্ত। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে পতিতা সমস্যা সমাধানে ‘উচ্ছেদ’ই প্রধানপন্থা হিসেবে অবল¤^ন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পতিতা হওয়ার পেছনে পূর্বাপর অবস্থা বিবেচনা না করেই সমাজ তাদের বিতাড়িত করছে। অথচ তাদের মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেন না কেউই। তারাও সব সময় সমাজে ¯^াভাবিকভাবে বেঁচে থাকার ¯^প্ন দেখে।

তাদের এ ¯^প্ন বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেÑ এমনটিই আশা করে ময়মনসিংহ পতিতালয়ের ২৪৯ যৌনকর্মী।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।