আগের একটা পর্বে উল্লেখ করেছিলাম , সৌদি আরব থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমান সারা বিশ্ব থেকে যত রেমিট্যান্স বাংলাদেশে যায় তার সম্মিলিত যোগফলের বেশি । ফলে এখানকার অনাবাসীদের অন্য সবার থেকে বেশী সুযোগ-সুবিধা পাওয়া উচিত । আর এ সুযোগ পাওয়ার একমাত্র উপায় দক্ষ ও শক্তিশালী দুতাবাস । ইউরোপ আমেরিকার দেশসমুহে পররাস্ট্র মন্ত্রনালয়ের দক্ষ ও মেধাবীদের নিয়োগ দেয়া হয় । সেখান থেকে রেমিট্যান্স তো আসেই না বরংটিউশন ফি হিসেবে বিশাল অংকের টাকা দেশ থেকে বেরিয়ে যায় ।
তাই, উন্নত সেবা দিতে হলে ফারুখ চৌধুরী কিংবা ড। ইফতেখার আহমেদ চৌধুরির মতো কর্মঠ রাষ্ট্রদুত নিয়োগ দেয়া উচিত । অথচ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পোড়খাওয়া , দুর্নিতীবাজ অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেলদের সৌদি আরবে রাষ্ট্রদুত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় । তারা পেশাদারিত্বের পরিবর্তে টাকা কামানোর ধান্ধায় থাকে ।
সাবেক রাস্ট্রদুত মেজর জেনারেল (অব) ইকরাম যেখানেই যেতেন সংবর্ধনা নেয়ার নামে সোনার মুকুট ,স্বর্নের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রি ঊপঢৌকন হিসেবে নিতেন ।
বিনিময়ে বিভিন্ন অন্যায় সুবিধা দিয়ে দাতাদের সন্তূষ্ট করতেন । তার সময়েই বড় বড় কোম্পানীর ভিসা , বাঙ্গালিদের ভিসা ট্রান্সফার বন্ধ হয়ে যায় । তিনি নিজের উন্নতিতে মনোযোগী ছিলেন ।
শুধু তিনিই নয় ,দুতবাসের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী যে যেমনে পারে টাকা কামাচ্ছে ।
একা কোন শ্রমিক বিপদে পড়ে দুতাবাসে গেলে কোন পাত্তাই পায় না ।
তার উপর আছে দুর্ব্যবহার । দুতাবাসের ড্রাইভার,দারোয়ান,পিয়নের দুর্ব্যবহার-অসহযোগিতায় নাজেহাল হয়নি এমন বাঙ্গালী কমই আছে ।
মাঝে মাঝে একদল শ্রমিক প্রতারিত হয়ে এমন নিঃস্ব পর্যায়ে পৌঁছায় যে , সংঘবদ্ধ হয়ে দুতাবাসের সামনে আশ্রয় ও দানাপানির জন্য অবস্থান নেয় । তখন সৌদি বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা থেকে খাবার মেলে ,আর দুতাবাসের সামনের রাস্তায়খোলা আকাশের নীচে ঘুমিয়ে থাকতে হয় । পত্রপত্রিকায় ছবিসহ খবর টা ফলো আপ করা হয় , ফলে সৌদি কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে ।
তারা তদন্ত করে যথারিতি বাংলাদেশী আদম ব্যবসায়ীদের নাম পায়, বাংলাদেশ দুতাবাসকে জানায় । তখন আদম ব্যবসায়ীরা বিশাল অংকের টাকা দিয়ে দুতাবাস কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে । এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে , ঘুরেফিরে একই আদম ব্যবসায়িদের নাম আসছে,আর কর্মকর্তাদের বাড়তি কিছু রোজগার হচ্ছে । শ্রমিকের স্বার্থ তাদের কাছে বড় নয় । নিজেদের ও আদম ব্যবসায়ীদের লাভটা এখানে মুখ্য ।
আপনারা সবাই জানেন মিয়ানমারের প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পার্সপোর্টে সৌদি আছে । এদের হিসাব ও পরিচিতি দুতাবাসে আছে । কেঊ কেঊ সপরিবারে আছেন । এদের পাসপোর্ট নবায়নে ও নতুন শিশুর পাসপোর্ট তৈরিতে বিপুল অংকের আর্থিক লেনদেন হয় ।
সবচেয়ে যেটা জঘন্য ও মানবতা বিরোধী তা হল মৃতদেহ জিম্মি করে টাকা আদায় ।
কোন শ্রমিক দুর্ঘটনা বা অন্য কোনভাবে মৃত্যু হলে দেশে লাশ পাঠাতে দুতাবাসের কিছু করনীয় থাকে । সেজন্য নিহতের স্বজনদের টাকা দিতে হয় । একবার পত্রিকায় দেখেছিএর পরিমান ১০০০০ রিয়াল ।
মক্কায় বাংলাদেশিদের দেয়া সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এসব অভিযোগ জানালেও এখন পর্যন্ত পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি ।
অথচ ভারতীয় বা ফিলীফাইনি কোন শ্রমিক বিপদে পড়লে বা কোম্পানী কর্তৃক বঞ্চনার শিকার হলে পুরো এম্বাসী তার পক্ষে দাড়ায়-পত্রিকায় বিশদভাবে তার সমস্যা ছাপা হয় ।
সৌদি কফিল বা কোম্পানী বুঝে যায় বাঙ্গালীদের সাথেই দুই নম্বরি করা যায় অন্য কারো সাথে নয় ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় টিভি খবরে দেখেছিলাম আবুধাবী দুতাবাসে অনিয়মের তদন্ত হচ্ছে এবং পর্যায়ক্রমে মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশের দুতাবাসে হবে বলে ঘোষনা দেয়া হয়েছিল । অজানা কারনে আমরা এরপর কি হয়েছে তার কিছুই জানি না ।
বর্তমান রাষ্ট্রদুত ফজলুল করিম ইতালি থেকে সফল হয়ে এসেছেন । কিন্তু এখানে এখনো কোন সফলতা দেখাতে পারেননি ।
হয়ত দুতাবাসের অন্য দুর্নিতিবাজদের কারনে পারছেন না । কিংবা তিনিও হয়ত তার পুর্বসুরিদের পদাংক অনুসরন করছেন ।
(ক্রমশঃ)
বি। দ্র ঃ আমার লেখার কোন অংশে দিমত থাকলে মতামত দিন সংশোধন করা হবে ।
ঐ ব্যপারে কেন লিখিনি সে প্রশ্ন না করে , যেদিক নিয়ে লিখিনি আপনি লিখুন , যোগ করে নিব ।
(৪র্থ পর্ব ) (৬ষ্ঠ পর্ব )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।