আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মালেতে কয়েক ঘন্টা



কলোম্ব থেকে মালে যেতে ঘন্টা খানেকের মত লাগে। মালেতে ল্যান্ড করার আগে প্লেনের জানালা দিয়ে নীচে তাকালে অসাধারণ দৃশ্য চোখে পরবে। হালকা নীল পানিতে অনেক গুলো ছোট ছোট দ্বীপ। আমাদের সাথে যারা মালেতে এল, বেশীর ভাগই ট্যুরিস্ট। এয়ার পোর্ট থেকে বের হওয়ার সময় দেখলাম, আগে থেকে যারা রিসর্ট বুক করে রেখেছিলেন তাদেরকে রিসিভ করার জন্য রিসর্ট থেকে লোকজন এসে অপেক্ষা করছে।

এয়ারপোর্ট একটা আলাদা আইল্যান্ডে। এখান থেকে ইন্জিনওয়ালা বড় নৌকায় করে মালেতে যেতে হয়। সময় লাগে ১০-১৫ মিনিট। মালেতে ছিলাম মাত্র ৪-৫ ঘন্টা। এর মধ্যে মালের যে সামান্য অংশ দেখলাম, তাতে কোন পিচ ঢালা রাস্তা দেখিনি।

পুরা রাস্তা টালী বিছানো। বেশীর ভাগ রাস্তাই অনেক চিকন (অনেকটা পুরোনো ঢাকার সরু গলির মত), তারপর আবার এক পাশ দিয়ে সারিবদ্ধ মোটরবাইক আর গাড়ী পার্ক করা। কোথাও কোথাও ৫০-৬০ টা বাইকও পার্ক করা থাকে। যার কারণে ওয়ানওয়ে রাস্তাগুলোতে গাড়ি খুব ধীরে চালাতে হয়। বেশীর ভাগ মানুষই হেটে অথবা বাইকে চলাফেরা করে।

মালেতে ছেলে মেয়ে সবাই শার্ট/টিশার্ট আর প্যান্ট পড়ে। বেশীর ভাগ মেয়েই মাথায় স্কার্ফ পড়ে চুল ঢেকে রাখে। কাছাকাছি মসজিদ দেখা যায়। নামাজের সময় দোকান গুলো বন্ধ হলেও হোটেলগুলো খোলা থাকে। হোটেলগুলোতে অনেক বাংলাদেশী কাজ করে।

হোটেলে খাবারের দাম মোটামুটি। দোকান গুলোতে জিনিস পত্রের দামও নাকি তুলনামূলক কম (এটা অবশ্য আমার কলিগের পর্যবেক্ষণ)। যাই হোক দূপুরে খেয়েদেয়ে অফিসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে একটু পরেই আমাদের দুজনকে মেডিকেল চেক আপের জন্য একটা ক্লিনিকে নিয়া যায়। ট্যাক্সীতে করে যেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম, সামনেই একটা বাসার নির্মাণ কাজের জন্য রাস্তা ব্লকড্। পরে ট্যাক্সিটা পাশের একটা চিকন গলি দিয়ে ঢোকে।

যেহেতু গলির ভিতরের সব রাস্তাই ওয়ানওয়ে তাই সামান্য একটু যেতে অনেক রাস্তা ঘুরে আসতে হয়। যাই হোক, মেডিক্যাল চেক আপের পরে অফিসে ফিরে এলাম। আমি তখন মাগরীবের নামাজ পড়ছি, হঠাৎ মালে ব্রাঞ্চের অ্যাডমিন উইপোকা (আসল নাম হল উইপুলা) এসে বলে, আমাকে এখনি যেতে হবে। আমার জন্য ধুনি (মাল বাহী নৌকা) অপেক্ষা করছে। আমাকে পাঠানো হবে ইধাফুশী আইল্যান্ডে আর আমার কলিগকে ২ দিন পরে মুলী আইল্যান্ডে ।

উইপোকা আমাকে নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে ট্যাক্সী খুজতে থাকে। এদিকে আমার সাথে বড় একটা সুটকেস একাই টানতে টানতে হাতের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু উইপোকার কোন বীকারই নাই। যাই হোক ট্যাক্সীতে করে জেটীর দিকে যাওয়ার সময়ই ২ বার ফোন আসে যে, ধুনী অলরেডী ছেড়ে দিয়েছে। উইপোকা বারবার অনুরোধ করে ধুনী আবার জেটীতে ভেড়াতে বলে। জেটীতে পৌছে দেখি ধুনি এখনও ভিড়ানো হয়নাই।

সন্ধার হালকা আলোতে মালপত্র নিয়ে আমি জেটীতে উইপোকার সাথে দাড়িয়ে থাকি। আস্তে আস্তে ধুনি জেটীর কাছে এলে আমার ব্যাগ গুলো আগে তুলে দেই। এরপর ধুনির একজন আমার হাত ধরে টেনে তোলে। ধুনিতে উঠার সাথে সাথেই ধুনী জেটী ছেড়ে দূরে সরতে থাকে। উইপোকা আমাকে বলে যে, পিছনে কোম্পানীর কয়েকজন লংকান স্টাফ আছে।

আমি যেন ওদের কাছেই থাকি । তখন সন্ধা সাড়ে ৬টা বাজে। যাই হোক উইপোকা কে হাত নেড়ে বিদায় দিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি প্রায় ১০-১৫টা ছায়া মূর্তি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কে যেন আমার মালপত্র নিয়ে পিছনে হাওয়া হয়ে গেছে। আমিও পিছনে যাওয়ার জন্য এগোই।

কিন্তু দুইপাশে যে চিকন রাস্তা আবার ধরার জন্য কোন হাতলও নাই, তাই একটু ভয় ভয় লাগে। আমাকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ কে যেন বলে উঠে, ধইরা নি ... আবার পইড়া যাইবো। বাংলায় কথা শুনে মনের অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি কিন্তু অন্ধকারে কে বাংলায় কথা বলল খুজে পাইনা। তাই আমিও বলি, বাংলায় কে কথা বলল? এবার অবার হওয়ার পালা ওদের। এরপরে বাংলায়ই কথাবার্তা চলে।

এই ধুনিতেই ওরা প্রায় ৩৫ জন বাংলাদেশী শ্রমিক আছে। তাও আবার বেশীর ভাগই টাংগাইল জেলার (আমার দেশের বাড়ীও টাংগাইল)। পরে ওদের কাছে জেনেছি যে , ওরাও নাকি আমাকে বিদেশী ভেবেছিল। অনেকক্ষণ ওদের সাথে গল্প করে একবার পিছনে গিয়ে ধুনী ঘুরে এলাম। এরপর আবার ভাবলাম সামনে বসে থাকি।

সামনে এসে দেখি একজন ছাড়া কেউ নেই। একা একা অনেকক্ষণ সামনে বসে বসে আকাশের তারা দেখলাম , মাঝে মাঝে দূরে কিছু আইল্যান্ডের আলো দেখা যাচ্ছিল। এভাবে কতক্ষণ বসে ছিলাম জানিনা। একসময় মনে হলো নৌকা অনেক বেশী দুলছে। ঢেউ গুলোও আমাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে।

পিছনে ফিরে দেখি এখন আমার সাথে কেউই নেই। সবাই পিছনে চলে গেছে। অনেক সাবধানে হাতল বিহীন নৌকার দেয়াল ধরে ধরে পিছনে চলে আসি। এরপরে ভিতরে ঢুকে একটা ঘুম দেই। ঘুমের মাঝেও টের পাই ঢেউয়ের তালে নৌকা দুলছে।

একবার আমার মাথা উপরে উঠে যাচ্ছে আরেকবার পা। মাঝে একবার বৃষ্টিও হয়। অনেকক্ষণ পরে ধুনি চালকের ডাকাডাকিতে উঠে শুনি যে আমাদের ধুনী ইধাফুশীর জেটীতে এখনই ভিড়বে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত ২.৩০ বাজে। এই নৌকা গুলোকে ধুনী বলে।

এটা ইধাফুশী আইল্যান্ডে তোলা মালদ্বীপের সব জায়গায় এই ধরণের বাইকই দেখা যায়। এই ছবিটাও ইধাফুশীতে তোলা মালেতে আমার মোবাইলের চার্জ ছিলনা তাই কোন ছবি তুলতে পারিনাই অনেক তাড়াতাড়ি আর সংক্ষেপে লিখলাম.... কষ্ট করে পড়ার জন্য অগ্রীম ধন্যবাদ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.