সিদ্ধার্থ আনন্দ
(গতকাল ব্লগে হাইব্রীড বীজের উপর মহাত্না ফরহাদ মজহারের একখানা সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম । সাক্ষাৎকারটি নিয়ে ছিলেন কাজী সায়েমুজ্জামান । গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার । হাইব্রীড সম্পর্কিত একটা লেখা প্রকাশিত হয়েছে আজকের কালের কন্ঠে। ঘটনাটি ভারতের।
কিন্তু যে অপবিজ্ঞান এবঙ রাজনীতি এতে জড়িয়ে আছে, তা আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই লেখাটি এখানে শেয়ার করলাম। )
জিনপ্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবিত 'বিটি বেগুন' বাজারজাত করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত। ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিবাদের মুখে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দেশটির পরিবেশমন্ত্রী জয়রাম রমেশ এ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেন। গত অক্টোবরে ভারত সরকারের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাপ্রোভাল কমিটি (জিইএসি) জিনপ্রযুক্তির বেগুনের বীজ বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতকরণের অনুমোদন দেয়।
দেশটির বিভিন্ন মহল এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে। বিটি বেগুনই জিনপ্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবিত প্রথম সবজি হিসেবে বাজারজাতের অনুমতি পেয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ জিনপ্রযুক্তির সয়া, ভুট্টা, তুলা উৎপাদন করলেও কোনো দেশই এ প্রযুক্তির সবজি চাষের অনুমতি দেয়নি।
জয়রাম রমেশ গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভারত নিরপেক্ষভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে বিটি বেগুন বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করতে দেবে না। তিনি বলেন, জিনপ্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবিত এ বেগুনের বীজ বাজারে ছাড়তে কোনো তাড়া নেই ভারতের।
তাই নিরপেক্ষ বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে জনগণের সন্দেহ দূর হলেই কেবল এ বীজ বাজারে ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হবে। গবেষণার মাধ্যমে মানুষের শরীর ও পরিবেশের ওপর এ বেগুনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব দেখা হবে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, 'জনগণের নিরাপত্তার খাতিরে এ উদ্যোগ নিচ্ছি আমি। '
বর্তমানে ভারতে প্রায় আড়াই হাজার ধরনের বেগুন উৎপাদিত হয়। অন্যান্য সবজির মতোই এসব বেগুনের ক্ষেতে পোকামাকড়ের প্রকোপ দেখা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান মোনসান্টো ও ভারতের প্রতিষ্ঠান মাহিকো যৌথভাবে জিনপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিটি বেগুন উদ্ভাবন করে দাবি করে, এ বেগুনে কীটনাশকের ব্যয় অর্ধেক কমে যাবে, ফলনও হবে বেশি। জিইএসি এ বীজ বাজারে ছাড়ারও অনুমতি দেয়। সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরই এর বিরোধিতা শুরু করে পরিবেশবাদী ও কৃষকরা। তারা অভিযোগ করে, জিনপ্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবিত এ সবজি উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ভারতকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ সবজির মাধ্যমে মানুষের শরীরে ক্যান্সারের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়বে।
এ বেগুনের সত্যিকার প্রভাব জানার জন্য নিরপেক্ষ গবেষণারও দাবি জানায় তারা। বাজারে এ বেগুন ছাড়ার একজন বিরোধী বলেন, 'আমরা গিনিপিগ নই। আমাদের গবেষণার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। ' সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ১১টি রাজ্যের সরকারও বিটি বেগুন বাজারে ছাড়ার বিরোধিতা করে। ভারতের শীর্ষ বেগুন উৎপাদনকারী এসব রাজ্যের সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, এ বেগুন চাষের অনুমতি দেবে না তারা।
জনগণের বিরোধিতার কারণেই বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য মাঠে নামেন পরিবেশমন্ত্রী নিজে। গত কয়েক সপ্তাহে জয়রাম রমেশ পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, বিহার, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, চণ্ডিগড়, কর্নাটক ও হায়দ্রাবাদ রাজ্যে সফর করে স্থানীয় মানুষের জনমত যাচাই করেন। এ সময় জিনপ্রযুক্তির এ বেগুনের বিরোধীদের পাশাপাশি পক্ষের কথাও শোনেন তিনি। এক মহিলা কৃষক মন্ত্রীকে বলেন, 'বিটি তুলা আমাদের উৎপাদন বাড়িয়েছে। বিটি বেগুনও কারো ক্ষতি করবে না।
' জনমত যাচাইয়ের পরই গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বিটি বেগুন বাজারজাত করার সিদ্ধান্ত স্থগিত করার ঘোষণা দেন তিনি।
কেন বিরোধিতা
কৃষকরা সাধারণত নিজেদের ফসল থেকেই পরবর্তী বছরে চাষের জন্য বীজ সংগ্রহ করেন। জিনপ্রযুক্তির শস্য চাষের জন্য বিশেষ বীজের প্রয়োজন। ফসল থেকে এ ধরনের বীজ সংগ্রহ করা যাবে না। বীজের প্রযুুক্তি উদ্ভাবকরাই কেবল তা উৎপাদন করতে পারবে।
ফলে প্রতিবছরই নির্দিষ্ট একটি কোম্পানির কাছ থেকে বীজ কিনতে হবে কৃষকদের। কৃষকরা আশঙ্কা করছেন, বীজের ওপর একাধিপত্যের কারণে ইচ্ছামতো দাম বাড়াবে উৎপাদক কোম্পানি। পরিবেশবিদরা বলছেন, জিনপ্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবিত বিটি বেগুন মানবশরীরে দীর্ঘমেয়াদি রোগের তৈরি করতে পারে। পরিবেশেরও ক্ষতি করবে এ বীজ।
ভারতে অবশ্য ২০০২ সাল থেকে জিনপ্রযুক্তির শস্য উৎপাদিত হচ্ছে।
তবে এ প্রযুক্তির কেবল তুলাই চাষ হয় ভারতে। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে জিনপ্রযুক্তির সবজি উৎপাদন না হওয়ায় বিটি বেগুনের বিরোধিতার অন্যতম কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের লবিং!
বিশ্বে জিনপ্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবিত শস্যের সবচেয়ে বড় বীজ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান হলো যুক্তরাষ্ট্রের মোনসান্টো। কেবল গত বছরই এ প্রতিষ্ঠান বীজ বিক্রি করে এক হাজার ১৭০ কোটি ডলার আয় করে। ভারতে বিটি বেগুন বাজারজাত করারও মূল উদ্যোক্তা ওই কোম্পানি।
তাদের দাবি, জিনপ্রযুক্তিতে বেগুন চাষ করলে আগের তুলনায় অনেক বেশি ফলন হবে।
ভারত বিটি বেগুন বাজারজাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় প্রতিষ্ঠানটির অর্থনৈতিক ক্ষতি হলো। ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যম জানিয়েছে, বিটি বেগুনবিরোধী সিদ্ধান্ত ঠেকাতে গত সোমবার রাতে ভারতে আসেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের বিজ্ঞানবিষয়ক উপদেষ্টা নিনা ফেডোরফ। তবে তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন জয়রাম রমেশ। এর আগে তিনি বলেছিলেন, বুধবার (্আজ) 'বিটি বেগুন' নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হবে।
অনেকে ধারণা করছেন, ফেডোরফের আগমনের খবর পেয়ে তড়িঘড়ি করে গতকালই সংবাদ সম্মেলনে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন রমেশ। সূত্র: বিবিসি অনলাইন, এএফপি, জিনিউজ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।