মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত।
কমরেড জ্যোতি বসু স্মরণে নাগরিক শোক সভায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্ঠা বিচারপতি হাহিবুর রহমান বলেন, রাজনীতিতে ভারসাম্য কিভাবে সৃষ্টি করা যায়, তার জলন্ত কমরেড জ্যোতি বসু। তিনি তা তাঁর জীবনাচরণ ও কাজ দিয়ে আমাদের শিখিয়ে গেছেন। সেই শিক্ষা নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করা মধ্যদিয়েই আমরা তাঁর প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবো। বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত নাগরিক শোক সভায় তিনি সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
জ্যোতি বসুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতীয় অধ্যপক কবির চৌধুরী বলেন, আমি তাঁর বক্তব্য শুনে আজীবন অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমি যতবার কলকাতায় গিয়েছি, ঠিক ততবারই তাঁর সাথে দেখা করেছি। তাঁর কাছে মানুষের জন্য রাজনীতি করার শিক্ষা পেয়েছি।
জ্যোতি বসুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ভাষা সৈনিক আব্দুল মতীন বলেন, উদাহরণ সমাজতন্ত্র ও মানবমুক্তির সংগ্রামের মহান নেতা ছিলেন তিনি। তাঁর দেখা পথ ধরে আমাদেরকে মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করে যেতে হবে।
জীবনের একটু সময়ও বিনা কাজে ব্যয় করা উচিত না।
জ্যোতি বসুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, পৃথিবীতে ৬শত ৬০ কোটি মানুষ। এই মানুষের মধ্যে জ্যোতি বসু একজন মানুষ ছিলেন। তিনি সর্বাধিক মানুষের জন্য সর্বাধিক মঙ্গলের জন্য পক্ষ নেয়া উচিত ছিল, সেই পথ নিয়ে তিনি আজীবন মানুষের মুক্তির জন্য, মঙ্গলের জন্য কাজ করে গেছেন। আমাদেরও একজন মানুষ হিসেবে সেই পথ নিয়ে কাজ করা উচিত।
এই শিক্ষাই আমরা তার কাছে পাই।
জ্যোতি বসুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা সিপি আই এম নেতা অমিতাভ বসু বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর তাঁর সাথে থেকে মানুষের জন্য রাজনীতি কি তা আমি শিখেছি। তাঁর সাথে যুক্ত থেকে দেখেছি, তিনি আজীবন মানুষের মঙ্গলের জন্য রাজনীতি করেছেন। তাঁর ধ্যান-জ্ঞান ও সাধনা শ্রমজীবী মানুষকে সামনে রেখে তাদের মুক্তির জন্য কাজ করা।
জ্যোতি বসুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (মন্ত্রী) বলেন, আজীবন কৃষক-শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের সংগ্রামকে অগ্রসর করে নিয়েছেন।
তিনি বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন। তিনি সারাজীবন মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। তার জীবন থেকে অনেক কিছু শিক্ষা নিয়ে আমাদের রাজনীতি করা উচিত।
বিচারপতি হাহিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের পরিচালনায় এ নাগরিক শোক সভায় বক্তব্য রাখেন, শিল্পকলা একাডেমীর পরিচালক কামাল লোহানী, খেলাঘর সভাপতি অধ্যাপিকা মাহাফুজা খানম, শিক্ষক সমিতির সভাপতি খন্দকার বদরুল আলম, গণ আজাদী লীগের সভাপতি আব্দুস সামাদ, সাংবাদিক ফয়েজ আহম্মেদ, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ড. ওয়াজেদুল ইসলাম, গ্রুপ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক জুনো চৌধুরী, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ আফজাল, সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ব্যরিস্টার রফিকুল হক, মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মহিউদ্দিন খান আলমগীর, আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জেল হোসেন মায়া, সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কুদ্দুস, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আমেনা আহম্মেদ এমপি, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, পুনর্গঠিত ওয়ার্কার্স পার্টির আহব্বায়ক হায়দার আকবার কান রনো, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি মনজুরুল আহসান খান।
এই নাগরিক শোক সভার শুরুতে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ঋষিজ ও ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী কমরেড জ্যোতি বসু স্মরণে গণসংগীত পরিবেশন করে।
নাগরিক শোক সভায় কমরেড জ্যোতি বসুর সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি।
বক্তরা বলেন, পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-এর পলিটব্যুরোর সাবেক সদস্য কমরেড জ্যোতি বসুর মৃত্যুতে আমরা একজন অভিভাবক হারালাম।
বক্তরা গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, জ্যোতি বসুর মৃত্যুতে উপমহাদেশের কমিউনিস্ট ও প্রগতিশীল আন্দোলনের একজন নিবেদিত প্রাণ দেশপ্রেমিক, বিপ্লবী ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতাকে হারাল।
বুর্জোয়া রাষ্ট্রের ভিতরে একটি রাজ্যে কমিউনিস্ট ও বামপন্থীরা ক্ষমতায় থেকে কীভাবে শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষের স্বার্থে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে কমরেড জ্যোতি বসু তার বাস্তব দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।
বক্তরা বলেন, জ্যোতি বসুকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, দেশ ও জনগণের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই তৎকালীন পূর্ববঙ্গের রাজনীতি ও শ্রমিক আন্দোলনে তাঁর অবদান অপরিসীম।
বক্তরা বলেন, টানা প্রায় ২৩ বছর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তিনি বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ সফর করেন। গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি, ভারত-বাংলাদেশ দ্বি-পাক্ষিক সহযোগিতাসহ নানা বিষয়ে তাঁর বিষিষ্ট ভূমিকা এদেশের মানুষ কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।