আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাত্রলীগঃ নিজেদের দ্বন্দ্বে এক বছরে নিহত ৫

থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখবো এবার জগৎটাকে

বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দুর্বৃত্তায়ন বেড়েছে ছাত্ররাজনীতিতে। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থন থাকায় এই দুর্বৃত্তায়ন প্রক্রিয়ায় সব চেয়ে বেশি জড়িত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। টেন্ডারবাজি, হল দখল, চাঁদাবাজির মতো দুর্বৃত্তপনায় কোনো অংশেই কম যাচ্ছে না তারা। আর এসব করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না আসতেই এই ছাত্র সংগঠনটির ভেতরে শুরু হয়েছে আধিপত্য আর নেতৃত্বের কোন্দল। যার ফলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তারা করে চলেছে মারপিট, হত্যা ও খুন-জখমের মতো কাজ।

ছাত্রলীগের এই অপতৎপরতা বন্ধ করতে খোদ আওয়ামী লীগ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কোনো ধমক বা পদক্ষেপই কাজে আসছে না। তাদের আগ্রাসী আচরণে ইতিমধ্যেই হুমকিতে পড়েছে দেশের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম। এই সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে গত এক বছরে নিহত হয়েছে ৫ জন ছাত্র। আহত হয়েছে এক হাজারেরও বেশি। রাজনীতির নামে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস ও ভর্তি বাণিজ্য করে কোটিপতি বনে গেছে ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী।

সরকার ক্ষমতা নেয়ার শুরুতেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ক্যাম্পাস ছাড়তে হয় অন্য গ্রুপকে। বিতাড়িত গ্রুপের প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন এখন হুমকির মুখে। গত বছরের ১৪ জানুয়ারি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জের ধরে ১৮ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ তাদের পছন্দের ভিসি নিয়োগের দাবিতে ১৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তা-ব চালায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩ মার্চ শিবিরের সাধারণ সম্পাদক নিহত হওয়ার জের ধরে বন্ধ হয়ে যায় শহরের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সংঘাত এড়াতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী সরকারি কলেজ, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী নিউ সরকারি ডিগ্রি কলেজ, রাজশাহী সিটি কলেজ, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার পর উত্তেজনা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি মোকাবিলায় চট্টগ্রাম ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন ১ মাসের জন্য ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। ৩১ মার্চ গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডা. ফজলে রাব্বি হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আযাদ রাজীব। পরেরদিন দুপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ। বন্ধ হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ।

অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের কারণে খুলনা বিএল কলেজ, সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-ধাওয়ির ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক ছাত্র আহত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায়ই ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের হামলার শিকার হচ্ছে। অশান্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাসগুলো।

বর্তমানে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নোংরা রাজনীতির জন্য হল ও ক্যাম্পাস ছাড়া হয়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। অবস্থা বেগতিক দেখে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ছাত্রলীগের এসব কর্মকা-ে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বিব্রত হয়ে ৪ এপ্রিল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ধানমন্ডির কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বৈঠক বসে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেতৃত্ব ছেড়ে দেন।

প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেয়ার পরেও সংঘর্ষ চলছে। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে ক্যাডার হিসেবে খ্যাত গ্রুপটি আধিপত্য আর টাকার ভাগবাটোয়ারা ও দখলবাজি করতে গিয়ে খুনখারাবি করে যাচ্ছে। সম্প্রতি ৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রমৈত্রী নেতা নিহত হন। এতে আহত হন আরো ২ জন। একই দিনে ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষে ৫ জন আহত হন।

সব মিলে বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে ছাত্রলীগের কোন্দল ও সংঘর্ষের কারণে কমপক্ষে ৫ ছাত্রনেতা প্রাণ হারান এবং আহত হন এক হাজারের বেশি। দেশের ৩০টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৩১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯৯টি সরকারি কলেজসহ প্রায় সবটিতেই কোনো না কোনোভাবে উত্তেজনা ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। দৈনিক ডেসটিনিঃ ০৪.০২.২০১০

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।