মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত।
আজ বরেণ্য শিল্পী পটুয়া কামরুল হাসানের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশের চিত্রশিল্পের ইতিহাসে পটুয়া কামরুল হাসান এক অবিস্মরণীয় নাম। ১৯৮৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় কবিতা উৎসবে সভাপতিত্ব করার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি জন্মেছিলেন ১৯২১ সালের ২ ডিসেম্বর, কলকাতার শহরতলিতে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে শিল্পীর আঁকা “ইয়াহিয়ার দানব মূর্তি “এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে’ মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে তেমনি বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পক্ষ জনমত গড়ে তুলতে ভূমিকা রেখেছে। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে “দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে’ কার্টুনচিত্র এঁকে সে সময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নতুন বেগের সঞ্চার করেছিলেন তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে জেনারেল ইয়াহিয়ার মুখের ছবি দিয়ে আঁকা পোস্টারটি খুব বিখ্যাত। এই শিল্পী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রবাসী সরকারের তথ্য কেন্দ্রের প্রধান শিল্পী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭২ সালে শিবনারায়ণ দাশ কর্তৃক ডিজাইনকৃত বাংলাদেশের প্রথম পতাকা কামরুল হাসান কর্তৃক পরিবর্তীত করণের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেন।
তিনি ড্রইং -এ দক্ষতা অর্জন করে বিশ্বব্যাপী সুনাম কুড়িয়েছিলেন। কামরুল হাসানকে সবাই শিল্পী বললেও তিনি নিজে 'পটুয়া' নামে পরিচিত হতে পছন্দ করতেন।
তাঁর বাবার নাম মুহাম্মদ হাসিম। তিনি ছিলেন কলকাতার শহরতলির একটি স্থানীয় কবরস্থানের তত্ত্বাবধায়ক। কামরুল হাসান কলকাতা মডেল এমই স্কুলে , কলকাতা মাদ্রাসা এবং পরবর্তী কালে কলকাতা ইন্সটিটিউট অফ আর্টসে পড়াশুনা করেন।
তিনি ১৯৪৭ সালে ফাইন আর্টসে পাস করেন। তিনি ভৌত অনুশীলন প্রতিযোগিতাতে ১৯৪৫ বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হন। কামরু হাসান পাকিস্তান বিরুধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হওয়ার কামরুল হাসান ঢাকাতে আসেন। ১৯৪৮ সালে জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে একত্রে তিনি গভর্নমেন্ট ইন্সটিটিউট অফ ফাইন আর্টস (বর্তমানে, ইন্সটিটিউট অফ ফাইন আর্টস) প্রতিষ্ঠা করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
কামরুল হাসান কমিউনিস্ট পার্টিতে যুক্ত ছিলেন। গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল আন্দোলনসহ প্রতিটি রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রামে তিনি ছিলেন সক্রিয় সংগঠক। বামপন্থী স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি ১৯৬৯ সালে আইয়ূব খানের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও রেডিও এর কলা বিভাগের পরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
কামরুল হাসান প্রেসিডেন্ট'স গোল্ড মেডাল (১৯৬৫), নস্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৭৯), বাংলাদেশ চারু শিল্পী সংসদ সম্মাননা (১৯৮৪),বাংলা একাডেমীর ফেলো (১৯৮৫) পুরস্কার পান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।