আমি সত্য জানতে চাই
আবহমান বাংলার গ্রামীণ সমাজের রূপ, বাংলার নিসর্গ, শোষক-অত্যাচারী ও স্বৈরশাসকদের চেহারা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর গণহত্যা উজ্জ্বলভাবে মূর্ত হয়ে উঠে যাঁর ক্যানভাসে তিনি বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান। সমাজ সচেতন ও প্রতিবাদী এই চিত্রশিল্পী ১৯৮৮-সালের ২রা ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরন করেন। আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী। মানবপ্রেমিক শিল্পী কামরুল হাসানের মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায় ।
সমাজ সচেতন ও প্রতিবাদী চিত্রশিল্পী পটুয়া কামরুল হাসান ১৯২১ সালের ২ ডিসেম্বর তিনি ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর বাবা মুহাম্মদ হাসিম ছিলেন সেখানকার একটি কবরস্থানের তত্ত্বাবধায়ক। কামরুল হাসান কলকাতা মডেল এমই স্কুলে, কলকাতা মাদ্রাসা এবং পরবর্তীকালে কলকাতা ইন্সটিটিউট অফ আর্টসে অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি ১৯৪৭ সালে ফাইন আর্টসে পাস করেন। তিনি ড্রইং-এ দক্ষতা অর্জন করে বিশ্বব্যাপী সুনাম কুড়িয়েছিলেন। কামরুল হাসান ভৌত অনুশীলনে খুব কৌতূহলী ছিলেন এবং একটি ভৌত অনুশীলন প্রতিযোগিতায় ১৯৪৫ সালে বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হন।
পাকিস্তান আন্দোলনের সময় সমসমায়িক অনেক মুসলিম যুবকের মতই তিনি এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। ভারত বিভাগের পরে, কামরুল হাসান ঢাকাতে আসেন, যা ছিল সদ্যস্থাপিত পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী। ১৯৪৮ সালে জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে একত্রে তিনি গভর্নমেন্ট ইন্সটিটিউট অফ ফাইন আর্টস (বর্তমানে, ইন্সটিটিউট অফ ফাইন আর্টস) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জীবিকাসূত্রে তিনি ১৯৪৮ থেকে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করেন এবং ১৯৬০ থেকে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের নকশা কেন্দ্রের পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রচার বিভাগের শিল্প বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
রাজনৈতিকভাবে বামপন্থী হাসান অনেক রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন যা স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি ১৯৬৯ সালে আইয়ূব খানের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুজিব নগর সরকারের তথ্য ও বেতার দফতরের শিল্প বিভাগের প্রধান পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
এ সময় পাকিস্তানের সামরিক ঘাতক জেনারেল ইয়াহিয়ার রক্তপায়ী, হিংস্র ও রাক্ষুসে মুখমন্ডল অঙ্কন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন কামরুল হাসান। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে জেনারেল ইয়াহিয়ার মুখের ছবি দিয়ে আঁকা পোস্টারটি খুব বিখ্যাত।
কামরুল হাসান ১৯৭২ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে শিবনারায়ণ দাশ কর্তৃক ডিজাইনকৃত জাতীয় পতাকার বর্তমান রূপ দেন।
(বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা (কামরুল হাসান কর্তৃক পরিবর্তীত)
কামরুল হাসানকে সবাই শিল্পী বললেও তিনি নিজে 'পটুয়া' নামে পরিচিত হতে পছন্দ করতেন।
দেশে-বিদেশে তিনি বহু একক এবং যৌথ চিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। একক প্রদর্শনীগুলো হলো : ১৯৫৪ এবং ১৯৫৫ ঢাকা; ১৯৫৭ রেঙ্গুন, মিয়ানমার; ১৯৬৯ পাকিস্তান; ১৯৭৫ ঢাকা; ১৯৭৯ লন্ডন; ১৯৯১ ঢাকা। উল্লেখযোগ্য যৌথ প্রদর্শনীসমূহ হলো : ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৯ ঢাকা, করাচি, লাহোর এবং রাওয়ালপিন্ডি; ১৯৭৫-৮৮ বাংলাদেশে ৬টি জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী; ১৯৭৮ জিডিআর; ১৯৮০ ফুকুওকা, জাপান; ১৯৮১ হংকং; ১৯৮৫ মালয়েশিয়া; ১৯৮৭ ভারত; ১৯৮১, ১৯৮৩ ও ১৯৮৬ দ্বি-বার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী, বাংলাদেশ।
চিত্রকলায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ১। প্রেসিডেন্ট'স গোল্ড মেডাল (১৯৬৫),
২। স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৭৯), ৩। বাংলাদেশ চারু শিল্পী সংসদ সম্মাননা (১৯৮৪),
৪। বাংলা একাডেমীর ফেলো (১৯৮৫) পুরস্কার লাভ করেন।
(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে শায়িত কামরুল হাসানের কবর)
১৯৮৮ সালে কামরুল হাসান জাতীয় কবিতা উৎসবে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত থাকাকালীন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি তারিখে মারা যান। তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন গোরস্থানে সমাহিত করা হয়। আজ এ মানবপ্রেমিক শিল্পীর মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।