আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঙলাদেশে আসছে এয়ারটেল



যোগাযোগের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন একটি সাড়া জাগানো প্রযুক্তি। বাংলাদেশে এটা যথেষ্ট পরিবর্তনের সূচনা করেছে। বাংলাদেশে কয়েকটি মোবাইল অপারেটর ক্রমাগত গ্রাহক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে দুবাইয়ের ধাবি গ্রুপের ওয়ারিদ টেলিকম একটি। বাংলাদেশে ওয়ারিদের আগমন খুব বেশিদিন হয়নি।

এই মোবাইল অপারেটরের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে এর সঙ্গে যোগ দিচ্ছে ভারতীয় মোবাইল অপারেটর এয়ারটেল। বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা গত ১৮-০১-২০১০ তারিখে রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে ‘ভারতি এয়ারটেল’ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও যুগ্ম ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোজ কোহলি বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন ভারতি এয়ারটেলের উপপ্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কাপুর, পরিচালক নরেন্দ্র গুপ্ত, বাংলাদেশে নিযুক্ত নতুন সিইও ক্রিস টবিট ও ওয়ারিদ টেলিকমের বর্তমান সিইও মুনীর ফারুকী। এয়ারটেল ধাবি গ্রুপের নিকট হতে ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছে। আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে তারা মালিকানা হস্তান্তর সম্পর্কিত সব কাজ সম্পন্ন করতে পারবে বলে জানা গেছে।

বিনিয়োগ হবে ৩০ কোটি ডলার ওয়ারিদ টেলিকমের কার্যক্রম সমপ্রসারণের লক্ষ্যে ভারতি এয়ারটেল নতুন করে ৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। এতে করে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় ভারতি এয়ারটেলের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে। ধাবি গ্রুপ ৩০ শতাংশ অংশীদারিত্ব নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে কৌশলগত সহযোগী হিসেবে থাকবে এবং পর্ষদেও প্রতিনিধিত্ব করবে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার মাত্র ৩২ শতাংশ টেলিযোগাযোগ সেবার আওতায়। তাদের মতে, বাংলাদেশের বাকি বাজার উন্মুক্ত হওয়ায় তাদের জন্য যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

তাদের বক্তব্য হচ্ছে, প্রাথমিকভাবে তারা মুনাফার দিকে দৃষ্টি রাখতে চায় না। বিভিন্ন ধরনের সেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করতে চায়। এক নজরে এয়ারটেল ভারতীয় এয়ারটেল আগে ভারতী টেলি-ভেঞ্চারস লিমিটেড নামে ছিল যার ব্রান্ড নাম এয়ারটেল। এয়ারটেল ভারতে বৃহত্তম সেলুলার সার্ভিস প্রোভাইডার। ২০০৯ সালে তাদের গ্রাহক সংখ্যা ১১০ মিলিয়নের অধিক ছিল।

বর্তমানে এয়ারটেল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এবং ৬ষ্ঠ বৃহত্তম ইন্টিগ্রেটেড টেলিকম অপারেটর। তারা মোবাইল সার্ভিস ছাড়াও ফিক্সড লাইন এবং ব্রডব্যান্ড সার্ভিস প্রদান করছে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে এয়ারটেল ভারতে তিনটি ইউনিটে বিভক্ত হয়ে কাজ করে যাচ্ছে— ১. মোবাইল সার্ভিস, ২. এয়ারটেল টেলিমিডিয়া সার্ভিস এবং ৩. এন্টারপ্রাইজ সার্ভিস। মোবাইল বিজনেস সার্ভিস জিএসএম টেকনোলজি ব্যবহার করে ২৩ টেলিকম সার্কেলে মোবাইল ও ফিক্সড ওয়্যারলেস সার্ভিস প্রোভাইড করছে। এয়ারটেল টেলিমিডিয়া সার্ভিস সারাদেশে ৯৫টি শহরে ব্রডব্যান্ড ও টেলিফোন সার্ভিস প্রদান করছে।

সম্প্রতি এন্টারপ্রাইজ সার্ভিসে এয়ারটেল একটি ডাইরেক্ট-টু-হোম (DTH) ডিজিটাল টিভি (৯ অক্টোবর ২০০৯ হতে) সম্প্রচার শুরু করেছে। এয়ারটেল ভারতে ফাইবার অপটিক ব্যাকবোন-এর মাধ্যমে কর্পোরেট গ্রাহকদের জন্য এনড্-টু-এনড্ ডেটা সার্ভিস প্রোভাইড করছে। ২০০৯ সালের আগস্ট থেকে এয়ারটেল নতুনভাবে আইফোন থ্রিজি (১৬ গিগাবাইট ও ৩২ গিগাবাইট) সার্ভিস প্রদান করছে। ভারতে ওয়্যারলেস সার্ভিস মার্কেটে এয়ারটেল ২৪.৬০% , রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস ১৭.৭০% এবং ভোডাফোন এসার এর ১৭.৪০% শেয়ার রয়েছে। শ্রীলঙ্কায় এয়ারটেল ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে এয়ারটেল শ্রীলঙ্কায় থার্ড জেনারেশন বা থ্রিজি সার্ভিস প্রদানে কার্যকর ভূমিকা রাখে সিংটেলের সহায়তায়।

শ্রীলঙ্কায় এয়ারটেল ‘এয়ারটেল লঙ্কা’ নামে পরিচিত। ২০০৯ সালের ১২ই জানুয়ারি হতে তাদের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করে। বাংলাদেশে এয়ারটেল ২০১০ সালের জানুয়ারির শুরুর দিকে বাংলাদেশ সরকারের বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন বা বিটিআরসি ঘোষণা দেয়, ভারতীয় এয়ারটেল ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০% শেয়ার নিতে পারবে। ওয়ারিদে এ পর্যন্ত ৬০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। আগামীতে পরিকল্পনা অনুযায়ী ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ বাড়ানো হবে।

এখনও বাংলাদেশের টেলিকম সেক্টরে রয়েছে বৃহত্ মার্কেট। আর এই মার্কেটে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে এয়ারটেল ধাবি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করেছে। চুক্তি অনুযায়ী ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ শতাংশ এবং বাকি ৩০ শতাংশ ধাবি গ্রুপের। ওয়ারিদ টেলিকম বাংলাদেশে চতুর্থ বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর। তারা আমাদের দেশের ৬৪টি জেলায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

তাদের গ্রাহক সংখ্যা ২.৯ মিলিয়ন অর্থাত্ ২৯ লাখের উপরে। চুক্তি অনুযায়ী ভারতীয় এয়ারটেল প্রাথমিকভাবে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে যা কভারেজ ও ক্যাপাসিটির জন্য নেটওয়ার্ক বৃদ্ধিকরণ এবং প্রোডাক্টের সার্ভিস বাড়ানোতে ব্যয় করা হবে। পরবর্তী ৩/৪ বছরে এয়ারটেল এবং ধাবি গ্রুপ এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ বাড়াবে ওয়ারিদ টেলিকমের নেটওয়ার্ক বৃদ্ধিকরণে। বিবেচনা করতে হবে গ্রাহকদের সন্তুষ্ঠি অর্জন এয়ারটেল ভারতে বৃহত্তম টেলিকম কোম্পানি। কিন্তু বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু হলে যে বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে তা হলো—গ্রাহকদের সন্তুষ্ঠি অর্জন।

ভারতে টেলিকম সেক্টরে খুব শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিতা অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে, ভারতে মোবাইল ভয়েস কল বিশ্বের মধ্যে খুবই সাশ্রয়ী। ০.০০০২ ডলার প্রতি সেকেন্ডে। বাংলাদেশে মোবাইল সার্ভিস ছাড়াও অন্যান্য সেবায় সম্ভাবনা কম নয়। ওয়্যারলেস প্রযুক্তিতে মোবাইল অপারেটর ইন্টারনেট সেবা প্রদান করলেও এর গতি অনেক শ্লথ।

এখনই সময় আইপি ফোন, আইপি টিভি, ডিজিটাল টিভি ইত্যাদি অগ্রসরমান সেবা প্রদানে উদ্যোগী হওয়া। ভারতীয় কোম্পানি এয়ারটেল এসব বিষয়ে কতটুকু উদ্যোগ গ্রহণ করবে এসব দেখার বিষয়। বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন বাংলাদেশ-নরওয়ে, একটেল মালয়েশিয়া-জাপান এবং সিটিসেল বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর যৌথ উদ্যোগে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। তবে এক্ষেত্রে ভিন্ন কেবল মিশরীয় কোম্পানি বাংলালিংক এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান টেলিটক। এবার ওয়ারিদ দুবাই-ভারতীয় যৌথ প্রয়াসে বাংলাদেশের এই যোগাযোগ ব্যবস্থায় কী ধরনের পরিবর্তন ও প্রভাব আনবে তা দেখার বিষয়।

অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা জমজমাট, বিভিন্ন সেলফোন অপারেটরদের বিরুদ্ধেও রয়েছে অভিযোগ । দেশের লোকসংখ্যা প্রায় ১৬০ মিলিয়ন অর্থাত্ ১৬ কোটি। মাত্র ৩২ ভাগ মানুষ টেলিফোন সুবিধা পেয়ে আসছে। এখানে গ্রাহক বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে অনেক সেলফোন অপারেটরের বিরুদ্ধে।

বিগত তত্বাবধায়ক আমলে এজন্য অনেক অপারেটরকে কোটি কোটি টাকা জরিমানা করা হলেও এখন আর এসব বিষয়ে সরকারের কোন ভুমিকাই পালিত হচ্ছে না। বর্তমানে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা জমজমাট। ঠিক এই মূহুর্তে ভারতি এয়ারটেলের আগমন হতে যাচ্ছে দেশে। এসব বিষয়কে কতটুকু এড়িয়ে যেতে পারবে তা-ই এখন দেখার বিষয়। সুত্র : আমার দেশ , ২৬-০১-১০


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।