আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুমীর খোঁজে কেউ আসেনি

নিহত পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমানের সঙ্গে সুমীকেও রাখা হয়েছে গাজীপুরের কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে।
পুলিশ বলছে, তারা দুজনই হাকিমের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ঐশী একাই ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বাবা-মাকে হত্যা করার পর সুমীকে চাপ দিয়ে লাশ সরাতে সহযোগিতায় বাধ্য করে বলে পুলিশের দাবি।  
কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক এই গৃহকর্মীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সমালোচনার মুখে পড়েছে পুলিশ। রিমান্ডে নেয়া পর্যন্ত সুমী কেন আইনজীবী সহায়তা পায়নি, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।


সুমী কে, কোথায় তার বাড়ি, এসবি কর্মকর্তা মাহফুজের চামেলীবাগের বাসায় সে কীভাবে কাজ পেল, কতোদিন ধরে সে ওই বাসায় কাজ করছিল- এসব প্রশ্নে পুলিশ বা মাহফুজের স্বজনরা নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
মাহফুজুর রহমানের ভগ্নিপতি আব্দুর রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সুমীর ঠিকানা বা তার পরিবারের বিষয়ে কোনো তথ্য তাদের জানা নেই। যারা জানতেন, সেই মাহফুজ আর স্বপ্নাও বেঁচে নেই।
মাহফুজের বাসার আগের গৃহকর্মী গত বছর রোজার ছুটিতে গ্রামের বাড়ি গিয়ে আর ফিরে না আসায় ‘দালালের মাধ্যমে’ সুমীকে ওই বাসায় আনা হয়। তার বাড়ি রাঙামাটি জেলায় বলে শোনা গেলেও গত এক বছরে সে গ্রামের বাড়িতে যায়নি বা বাড়ি থেকে কেউ তাকে দেখতে আসেনি বলে আব্দুর রাজ্জাক জানান।


এ বিষয়ে রাঙামাটি জেলার পুলিশ সুপার আমেনা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, সুমীর বাড়ি যে রাঙামাটিতে- সে বিষয়ে ঢাকা থেকে তাদের কিছু জানানো হয়নি।
আর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের রাঙামাটি প্রতিনিধিও স্থানীয়ভাবে খোঁজ করে সুমীর পরিবারের কোনো সন্ধান বের করতে পারেননি।
 

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুমীর বাড়ি রাঙামাটি জেলায়। তবে ঘটনার পর থেকে তার কোনো স্বজন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। ”
সুমীর বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি গাজীপুর কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রের সুপার শংকর সরণ সাহা।

তবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানিয়েছেন, সুমীর পরিবারের কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি বা দেখা করতে যায়নি।
গত ১৬ অগাস্ট সন্ধ্যায় চামেলীবাগের ওই বাসা থেকে মাহফুজ ও স্বপ্নার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বড় মেয়ে ঐশী, ছেলে ঐহী (৭) ও গৃহকর্মী সুমীকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন তারা।
অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ও লেভেলের ছাত্রী ঐশী ১৫ অগাস্ট সকালে ঐহী ও সুমীকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় বলে ওই বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক জানান। দুই দিন নিখোঁজ থাকার পর ১৭ অগাস্ট ঐশী নিজেই পল্টন থানায় ধরা দেন।

এর আগে ছোটভাইকে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে ফেরত পাঠান ঐশী।
পুলিশ বলছে, বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরদিন একটি অটোরিকশায় করে ঐশী ও সুমী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যায়। সুমীকে ওই অটোরিকশা চালকের দায়িত্বে রেখে থানায় আত্মসমর্পণ করেন ঐশী। কিন্তু বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই চালকই সুমীকে বাড্ডা থানায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকেও পল্টন থানায় নেয়া হয়।

গ্রেপ্তার করা হয় ঐশীর বন্ধু রনিকে। তাদের তিনজনকেই ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
৫ দিনের রিমান্ড ও আদালতে ‘স্বীকারোক্তিমূলক’ জবানবন্দি দেয়ার পর গত শনিবার ঐশী ও সুমীকে কারাগারে পাঠায় আদালত। ওই দিন রাতেই ঐশী ও সুমীকে গাজীপুর কিশোরী উন্নয়ণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
রিমান্ড শেষে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্মকমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৪ অগাস্ট রাতে বাবা-মাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ঐশী।

মাকে হত্যার সময় ছোট ভাই দেখে ফেললে তাকে ঐশী বাথরুমে আটকে রাখে। আর ভয় দেখিয়ে ঐশী গৃহকর্মী সুমীকে সহায়তা করতে বাধ্য করে।
পুলিশের দাবি, ‘মাদকাসক্ত’ ঐশীর ‘উচ্ছৃঙ্খলতায়’ বাধা দেয়ায় বাবা-মায়ের প্রতি তার ক্ষোভ ছিল। হত্যাকাণ্ডের পর খোয়া যাওয়া কিছু গয়নাও ঐশীর কাছে পাওয়া গেছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এদিকে স্কুলের রেকর্ড অনুযায়ী ঐশীর বয়সও ১৮ বছরের কম।

অপ্রাপ্তবয়স্ক ঐশী ও সুমীকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেয়া শিশু অধিকারের লঙ্ঘন বলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানিয়েছেন।
ঐশীর অন্যতম আইনজীবী প্রকাশ বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রিমান্ডে নেয়া পর্যন্ত সুমীর পক্ষে আদালতে কেউ লড়েনননি। তবে পরে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি ঐশী ও সুমী দুজনকেই আইনি সহায়তা দেয়ার বিষয়ে আদালতের অনুমতি পেয়েছে।  
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিচালক (লিগ্যাল) রেহানা সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা কেইসটা মাত্র নিয়েছি। সুমী তো আসলে ঘটনার শিকার।

সে ওই পরিস্থিতিতে থাকতে বাধ্য হয়েছে। এটা খুবই অন্য রকম একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আমরা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। ” 

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।