আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজামীরে খেদাইছিলাম যেবার।

কতো কী করার আছে বাকি..................

ঘটনাডা হুট কইরা সেদিন মনে পড়লো। মনে পড়লো মানে মনের তলায় ঘন একটা আবেগের স্তরও জমা হইলো। ভিতরটা কেমন আঠা আঠা লাগলো। যাই হোক অন্তত একটা আমেজতো পাইছি। ঘটনার কোন রাজনৈতিক গুরুত্ব হয়তো নাই, উল্লেখযোগ্য কিছুও হয়তো না।

কিন্তু সুখস্মৃতিতো। এমুন কিছু একটা জীবনে হয়তো আর আইবো না। তখন হাতে সময় আছিলো, সুযোগ আছিলো। ডাক দিলেই হাজির হওনের মতো লোকজন আছিলো, তা-ই ঘটনা ঘাটায়া ফালাইছি। অহন অতো সময় নাই, পাকস্থলীতে জীবন বাধা, শক্তিগুলানও সব ঝিমায়।

আছে খালি স্বপ্ন আর জাবর কাটা। সেদিন ভিড় বাসে হঠাৎ কইরা দাঁতের তলে গন্ধটা পাইলাম। হা হা, নিজামীরে একবার বাইর কইরা দিছিলাম ক্যাম্পাস থাইকা। ঘটনাডা বিস্তারিত কই। বেশি লম্বা হয়া গেলে দোষ দিয়েন না।

বছরডা তখন ২০০৪। নিজামী নতুন সরকারের কৃষিমন্ত্রী। আমাগো ক্যাম্পাসে ভর্তী পরীক্ষা চলতাছে। এই সময়ে আমাগো কাজ হইলো সারা ক্যাম্পাস ঘুইরা বেড়ানি। সন্ধ্যা হইলে প্রান্তিকে গিয়া আড্ডা।

আমাগো ক্যাম্পাসেও তখন নতুন প্রশাসন। প্রশাসন জামাত ঘরাণার বইলা আমরা বেশ তক্কে তক্কে আছি, সুযোগ দেয়া যাবে না কোন। জামাত সম্পর্কিত কোন আলামত দেখলেই তোড়জোড় শুরু কইরা দিতে হইবো। তাছাড়া জামাত ক্ষমতায়, শুরুতেই তারা জাহাঙ্গীরনগরের দখল নিয়া নিতে পারে। আতংক উত্তেজনার মাইধ্যে বেশ ভালোই আছি।

তহনই এক সন্ধ্যায় ছাত্রদলের একজন খবর দিলো নিজামী আইতাছে জাহাঙ্গীরনগরে। কি কয়, আপনে ক্যামনে এই খবর পাইলেন। সে তহন কয় আর কাউরে কইয়েন না আমার কথা। কাইল গেরুয়া গ্রামে নতুন প্রজাতির আমের চারা সম্পর্কিত কোন একটা বিষয়ে ব্যাটা এই ক্যাম্পাসের ওপর দিয়া যাইবো। হায় হায়, আমাগো উত্তেজনা আর সইলো না।

ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের গ্রুপিং এর কারণে নিজামীর এই আগমন এবং তার সাথে প্রশাসনরে যুক্ত কইরা ঘোলাটে কোন পরিবেশে ইনফরমার সেই ছাত্রদল কর্মীর গ্রুপ হয়তো কোন সুবিধা নিবে। কিন্তু তাতে আমাদের কি। আগে আমরা শিওর হই যে নিজামী এই ক্যাম্পাসে আইবো। তারপর কি করা যায় ভাবতে হইবো। ফলে আমরা নানা গোপন মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করলাম।

তখন বাজে রাইত প্রায় ৮টা কি ৯টা। খবর নিতে দিয়া আমরা একদম চুপ। কারণ আমরা জানি খবর আউট হয়া গেলে প্রশাসন সাবধান হয়া যাইবো, পরে দেখা গেল নিজামী কোন ফাঁকে আইসা ক্যাম্পাস ঘুইরা গেছেগা আমরা জানতেই পারুম না। এমন একটা উত্তেজনা চাপা দিয়া থাকাটা খুব কষ্টকর। যাই হোক-খবর সত্য বইলা জানা গেলো।

এখন কি করা যায়। সবাই মিইল্যা ভাবা শুরু করলাম। ঠিক করলাম রাইতেই হলে হলে মিছিল করতে হইবো। কাইল সে আইবো আটটায়। ঢুকবো এমএইচ হলের গেইট দিয়া।

বাইর অইবো ডেইরি গেইট দিয়া। আমরা ওরে ঢুকতেই দিমু না। অন্য কোন গেইট দয়া যদি ঢোকে তাইলেও ক্যাম্পাসে মুভ করতে দিমু না, বাইর কইরা দিমু। এমএইচ গেইটে আগে থাইকাই ব্যানার লাগায়া রাখতে অইবো। ছাত্রী হলেও রাইতেই মিছিল করতে হইবো।

মিছিলের খবর পায়া হেয় যদি না আহে তাইলেতো ভালোই। কিন্তু এরপরও যদি আসে তাইলে প্রশাসনরে ধরতে হইবো। প্রশাসনরে অন্তত তার আসা উপলক্ষ্যে একটা প্রতিবাদী বিবৃতি দিতে হইবো। সব প্ল্যান ঠিক এহন খালি বাস্তবায়ন করতে হইবো। রাইতে খায়াদায়া আমরা আলবিরুনি এক্সটেনশন থাইকা মিছিল বাইর করলাম।

অল্প কয়েকজন মাত্র লোক। তারপরও শুরু করলাম, কারণ আমরা জানি শুরুটা আমাদেরই করতে হয়। বামপন্থী সংগঠনগুলার সাথে অন্যান্য আরো লোকজন ছিল যারা সাংস্কৃতিক সংগঠন করতো অথবা কিছুই করতো না। মিছিল ঘুরতে থাকলো। সালামবরকত হলে গিয়াই ছাত্রদলের বাধা।

বামের মিছিল চলবে না হলে। আমাদের মধ্যে কয়েকজন আইসা বললো এটা বামের না সবার মিছিল। তাছাড়া নিজামী আইতাছে, ওরে ঠেকাইতেই এই মিছিল। বিপদে পড়লো ছাত্রদল, মিছিল ঢুকতে না দিলে অগোরে শিবিরের লগে জড়ায়া ফালাইবো এই ভয়ে হলে মিছিল ঢুকতে দিলো। তারপর সেই মিছিল সবগুলা হল ঘুরতে ঘুরতে আকারে প্রকারে অনেক বড়ো হইয়া গেলো।

এখন অপেক্ষা পরদিনের। টেনশনে ঘুম হারাম। যাউকগা। রাইত পোহাইছে কি না সেই খেয়াল নাই। ঘড়িতে আটটা বাজতে না বাজতেই মিছিল শুরু।

নিজামী যেই গেইট দিয়া ঢুকবো ওই গেইট অভিমুখে মিছিল। মিছিল গেইটের কাছে যাওনের আগেই দেখলাম নিজামী গাড়ি নিয়া অন্য গেইট দিয়া ক্যাম্পাসে ঢুকতেছে। তারমানে রাতের মিছিলের খবর সে পাইছে। কিন্তু প্ল্যান বাতিল করে নাই। চুরি কইরা অন্য গেইট দিয়া ক্যাম্পাসে ডুকবে।

এবং এর সাথে প্রশাসনের যোগাযোগ পরিষ্কার। তো এখন-এখন প্রশাসনরে ধরতে অইবো। আর সে পাশ্ববর্তী গ্রাম দিয়া ঢুইকা কোন দিক দিয়া বাইর অইবো সেই রাস্তায় খেয়াল রাখতে অইবো। আমাদের টার্গেট ক্যাম্পাস-কোন গ্রামে গেলো না গেলো এই বিষয়ে মাথা ব্যাথা নাই। আমরা আবারো মিছিল নিয়া ক্যাম্পাসে আসলাম।

যে রাস্তা দিয়া সে পাশরে গ্রামে গেছে। মিছিলটা ওই রাস্তার মুখে আসলো মাত্র। তখনই দেখলাম বঙ্গদেশের মন্ত্রীসভার কোন এক যানে চাপিয়া আমাদের সেই মন্ত্রীমহোদয় মূল ক্রাম্পাসে প্রবেশ করিতেছেন। সামনে পুলিশের গাড়ি। মাঝখানে সেই জাদরেল মন্ত্রী।

ইতিহাসের রক্ত যার নীচের পাটির দাঁতে এখনো লেগে আছে। গাড়ির বহর আর মিছিল তখন মুখোমুখি। আমরা সাথে সাথে রাস্তায় শুইয়া পড়লাম। সব গাড়ি দাঁড়ায়া গেলো। রাস্তায় আরো যারা ছিলো সবাই যার যার জায়গায় খাড়ায়া গেলো।

কেউ বুঝতেছে না কি হইতাছে। পুলিশের গাড়ি থেকে ওসি না কে যেন নাইমা আসলো। আমাগো হাতে পায়ে ধরলো রাস্তা ছাইড়া দিতে। কিন্তু কে শোনে তার কথা। আমাদের তখন গগণ বিদারি স্লোগাণ- নিজামী তুই রাজাকার, এই মূহুর্তে ক্যাম্পাস ছাড়।

আরো এমন অনেক স্লোগাণ। আমাদের মধ্যে জীবনেও স্লোগাণ দেয় নাই এমন কয়েকজনরে দেখলাম স্লোগাণ লিড দিতাছে। তাদের গলার রগ যেন ফাইটা পড়বো। চোখ যেন ঠিকরায়া বাইর হয়া আইবো। আবাক লাগছিলো সেদিন, এতো রাগ আর ক্রোধ থাকতে পারে মানুষের।

তো কাকুতি মিনতিতে কাজ হইলো না দেইখা নিজামীর গাড়ি পালানি শুরু করলো। দুই পাশের গাড়ি রাইখা-উল্টা দিকে টার্ণ। আমরাও উইঠা খাড়াইলাম। যাগো হাতের কাছে ঢিল আছিলো তারা ঢিল আর যাগো হাতে ঢিল আছিলো না তারা জুতা যাগো কিছুই আছিলো না তারা থু থু মারতে মারতে সেই গাড়ি ক্যাম্পাসের বাইরে দিয়া আসলাম। পরের কাহীনিতে আমাদের ক্ষানিক টেনশন আছিলো।

মাষ্টররা আইসা আমাগো পাশে খাড়াইলো দেইখা সেই টেনশান কইমা গেলো। পরদিন পত্রিকায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি ছাপলো। তাদের বক্তব্য নিজামীরে কেউ ভাগায় নাই। তিনি জাহাঙ্গীরনগর থেকে বের হওয়ার পথে কতিপয় উছৃঙ্খল যুবক যুবতি মিছিল করছিলো দেখে তিনি অন্য পথে ক্যাম্পাস থেকে চলে আসেন। আমরা খালি পড়ি আর হাসি।

ভিসির সাথে দেখা করার উছিলাম তার ওই পথে গমনের চেষ্টা। কিন্তু পথিমধ্যে আমাদের প্রতিরোধ তার সেই আশার গুড়ে বালি ছিটিয়ে দিলে তিনি পালিয়ে যান। পরে সাভার থানার ওসিও আইসা আমাদের অনেক অনুরোধ করলেন-তার চাকরি যায় যায়। আমরা যেনো একটা বিবৃতি দেই, নিজামীরে ঠেকাইতে না অন্য কারণে আমরা রাস্তায় শুয়ে ছিলাম। আর যেন এই নিয়ে মিছিল মিটিং না করি।

(সময়ের অভাবে ভালো কইরা লিখতে পারলাম না। প্রায় দশ পনেরো দিন ধইরা একটু একটু কইরা লিখলাম। এটা আসলে ডায়রি লেখার মতোই। জীবনের একটা সুখস্মৃতি। আপনাদের জানাইলাম আরকি।

কিন্তু অনেক মজার ঘটনা বাদ গেছে। পরে কখনো মনে পড়লে যোগ কইরা দিমু। আর ঘটনার স্থান যে জাহাঙ্গীরনগর এটা বুঝতে নিশ্চয়ই সমস্যা হয় নাই। )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।