বাংলার সাংস্কৃতিক, নৈতিক, মানবিক ও ধর্মতাত্ত্বিক বৈভবে গর্বিত সাধারণ বাংলাদেশী
ইনকিলাব, ২৬শে মে ২০০৯ - বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন রাজনীতিতে ৩৩% নারীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করলে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও ইসলামী বুদ্ধিজীবি ফ্রÏেটর নেতৃবৃন্দ বলেছেন - ‘‘এ প্রস্তাব ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক’’। খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মওলানা ইউসুফ আশরাফ বলেছেন ‘‘এ প্রস্তাব শরীয়ত-সম্মত নয়’’। তাঁদের মতে এ প্রস্তাব নাকি ‘‘দেশের মুসলিম জনতার অনুভুতিতে আঘাত হানবে’’, ‘‘দেশের জন্য অশুভ হবে’’ এবং এটা ‘‘ইসলামী দলগুলোকে কোণঠাসা করার চক্রান্ত’’।
এসব কথা নুতন কিছু নয়, ‘‘ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক’’ ও ‘‘শরীয়ত-সম্মত নয়’’ বলে আমরা বিভিন্ন দেশে নারীর ভোট দেয়া, গাড়ী চালানো, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিচারক হওয়া, গান-নাটক-নাচ নিষিদ্ধ করেছি। বিয়ে-তালাক-বাচ্চার অধিকার-খরপোষ-উত্তরাধিকার-সাক্ষ্যে সমান অধিকার, ক্যারম দাবা থেকে শুরু করে ছবি তোলা শহীদ মিনারে ফুল দেয়া, মুক্তিযুদ্ধের শিখা অনির্বাণ, নারীর শাড়ী-টিপ পরা, এমনকি বাজার করতে যাওয়া পর্য্যন্ত কিছু লোকের দৃষ্টিতে ‘‘ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক’’ ও ‘‘শরীয়ত-সম্মত নয়’’।
সব মিলিয়ে এক হাস্যকর ও আত্মঘাতী অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ভুলটা করেন তাঁরা কিন্তু তার মূল্য দেন নারীরা এবং তার দায় চাপে ইসলামের ঘাড়ে। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে নারীদের কাছে তাঁরা এঁরা ভয়ংকর ও পরিত্যাজ্য হয়ে উঠেছেন। এটাও ক্ষতি কারণ অন্যান্য বিষয়ের মতো ধর্মীয় ক্ষেত্রেও সুস্থ নেতৃত্বের দরকার আছে এবং সে নেতৃত্ব তাঁদেরই দেবার কথা।
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব মোটেই ইসলামি দলগুলোকে কোনঠাসা করার চক্রান্ত নয়, ইসলাম-বিরোধী তো নয়-ই বরং উন্নতির প্রধান চাবিকাঠি।
দেশে পুরুষ-নারীর অনুপাত ১০৪০/১০০০ - (ডততপ://রসড.সাগপেুব.চমৈ/চগ/িচনৈতনেত/াবসতরাচত/১২৫/২/৯৩)। তাই ৩৩% নয় সমান হওয়াটাই দরকার। কোটা নিয়েও মতভেদ আছে। অনেকে বলেন কোটা না হলেই বরং ভালো, যে যাতে যোগ্য সে তাতে অংশ নেবে। আবার কেউ বলেন নারীরা পিছিয়ে আছে বলে কোটা দিয়ে ওদের পুরুষের স্তরে আনা দরকার।
এ বিতর্ক ছাড়াও বিশ্বে সাধারণভাবে নারীরা সংখ্যায় ৫২% এবং দেশে-বিদেশে জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাঁদের নৈপুণ্য ও সাফল্য অসাধারণ। তাঁদের কোন সাহায্য দরকার নেই - শুধু তাঁদের বাধা না দিলেই তাঁরা অসাধ্য সাধন করে দেখিয়েছেন, দেখাবেনও।
মুখে মিষ্টি কথা ও আইনে নারী-বিরোধীতার ধুর্ততা বন্ধ হওয়া দরকার। অনেক মুসলিম বিশেষজ্ঞ বহুবার দেখিয়েছেন কিভাবে শাারিয়া আইনের নারী-বিরোধী আইনগুলো ইসলামি পদ্ধতিতেই পরিবর্তন করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায়। যে শারিয়া আইনে নারীর সম্মান ও অধিকার রক্ষা বা ধ্বংস হয় তাতে নারীর মতামত অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
পুরো ইতিহাসে একজনও নারী শারিয়া-ইমাম নেই। অথচ নির্বাচন কমিশনের কিংবা নারী-অধিকারের যে কোন প্রস্তাব-পদক্ষেপ ‘‘ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক’’ কিনা ও ‘‘শরীয়ত-সম্মত’’ কিনা সে সিদ্ধান্ত নারীদের মতজরীপ ও রায় ছাড়া একতরফা হতে পারে না।
আমাদের মা-বোনেরা কারো চেয়ে কম মুসলমান নন। যত বাগাড়ম্বর বা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করা হোক, যত হুংকারই দেয়া হোক না কেন নারীর ওপরে পুরুষের মতামত একতরফা চাপিয়ে দেবার অধিকার কোরাণ-রসুল কাউকে দেন নি।
হাসান মাহমুদ
১২ জানুয়ারী ৪০ মুক্তিসন (২০১০)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।