বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে ভারতপন্থী করার পরামর্শ দেয়া শুরু করেছে দেশটির থিংক ট্যাংক ও কূটনীতিকেরা। চানক্যপুরীর নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশে তারা বলছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা শাখার একটি অংশ ঐতিহ্যগতভাবেই ভারতবিরোধী। কিন্তু বিডিআর বিদ্রোহের পর তাদের মানসিক গড়নে কিছু পরিবর্তন এসেছে। নয়াদিল্লির এখন উচিত হবে বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করা এবং সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীতে যোগ দিতে উত্সাহ দেয়া। এটা তাদের ক্ষমতা দখলের ইচ্ছা থেকেও বিরত রাখবে।
ভারতীয় সাবেক কূটনীতিক গোপালাপুরাম পার্থসারথী ট্রিবিউন ইন্ডিয়া ডট কম-এ এক নিবন্ধে এ পরামর্শ দেন। নয়াদিল্লির পক্ষ হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনকারী এই কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর সামনে রেখে দিল্লি-ঢাকা সম্পর্ক উন্নয়নে নানা পরামর্শ দেন। ৭ জানুয়ারি লেখা এ নিবন্ধে তিনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিগত জোট সরকারের বিরুদ্ধে নানা সমালোচনা এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের প্রশংসা করেন।
‘ঢাকার সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি : ভারতবিরোধী মনোভাবের পরিবর্তন হচ্ছে’ শীর্ষক নিবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় বলা যায়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিধারা দ্রুত পরিবর্তনশীল। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের চাহিদা মেটাতে না পারলে বিএনপি আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারে।
নয়াদিল্লির বুঝিয়ে দেয়া উচিত, বাংলাদেশের জনগণের উন্নয়ন ও কল্যাণে ভারত তখনই সহযোগিতা করবে যখন ঢাকা দিল্লির উদ্বেগের বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেবে।
জি পার্থসারথী হিসেবে পরিচিত এই কূটনীতিক আরও লিখেছেন, চলতি দশকের প্রথম অতিথি হিসেবে নয়াদিল্লি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষা করছে। নানা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ক্ষমতায় আরোহণ করেন। ক্ষমতায় আসার পর হাসিনা শুধু ডানপন্থী দল বিএনপি থেকেই নয়, পাকিস্তান-সৌদি আরব মদতপুষ্ট জামায়াতে ইসলামী থেকেও নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এই গ্রুপ আরও শক্তিশালী হয়েছে কট্টর মৌলবাদী দল জামা’আতুল মুজাহিদিন (জেএমবি) এবং হরকাতুল জিহাদুল ইসলামী যোগ দেয়ায়।
এই দলগুলো ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন প্রচেষ্টার প্রচণ্ড বিরোধী।
পার্থসারথী বিডিআর বিদ্রোহের নানা দিকও তার লেখায় তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনা তার মেয়াদের প্রথম বছরের বিডিআর বিদ্রোহ দমনের মতো মহা ঝুঁকি মোকাবিলা করেছেন। বিডিআর বিদ্রোহের যথেষ্ট কারণ থাকলেও বিদ্রোহের পর এটা ধারণা করা হয়েছে যে, এই বিদ্রোহের পেছনে বিএনপি ও জামায়াতের হাত ছিল।
বিডিআর বিদ্রোহ দমনে শেখ হাসিনার সরকারকে নয়াদিল্লি ব্যাপক সহযোগিতা করে।
বিদ্রোহীরা যাতে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য সীমান্ত সিলগালা করে দেয়। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। বিডিআরের নতুন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মইনুল ইসলামের কথায় তা ফুটে উঠেছে। তিনি এই ঘটনাকে ভয়াবহ অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি পাকিস্তান ও এর বন্ধু বিএনপি ও জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, বাংলাদেশে এখনও অনেক বিদেশি শত্রু রয়েছে।
বিডিআর বিদ্রোহে ভারতের সহযোগিতার প্রতিদানে হাসিনা সরকার উলফা নেতা অরবিন্দ রাজখোয়া, ডেপুটি সামরিক কমান্ডার রাজু বড়ুয়াসহ অনেককে নয়াদিল্লির হাতে তুলে দেয়। ঢাকার এই সিদ্ধান্ত উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এই সতর্ক বার্তা দিয়েছে, বাংলাদেশ তাদের নিরাপদ স্বর্গ নয়। শেখ হাসিনা জেএমবি ও লস্কর-ই-তৈয়বার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং আন্তঃসীমান্ত হামলা ও ভারতীয় হাইকমিশনে হামলার পরিকল্পনাও রুখে দিয়েছেন।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার সীমান্ত এখনও চিহ্নিত করা হয়নি।
১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুযায়ী ছিটমহল বিনিময় এখনও কার্যকর হয়নি। বাংলাদেশের মধ্যে ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে। ভারতের ভেতরে রয়েছে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল। এ সমস্যার সমাধান করা জরুরি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
ট্রানজিটের পক্ষে তিনি লিখেছেন, দিল্লির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ট্রানজিট। এটা পেলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে (সেভেন সিস্টারে) আমাদের যোগাযোগ অনেক সহজ হবে। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরের উন্নয়নে বিনিয়োগের দিল্লির আগ্রহ প্রকাশ করা এবং নেপাল ও ভুটানকে এই বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেয়া উচিত।
বাংলাদেশের জন্য মরণ ফাঁদ টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধ করার দাবি জানানোয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সমালোচনা করেন এই কূটনীতিক।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।