আগামীর স্বপ্নে বিভোর...
আমাদের এই পৃথীবিতে নানান জাতির মানুষের বসবাস। নানান বর্ণে নানান ভাষায় এসব জাতি বিভক্ত, তাদের রীতি নীতিও আলাদা। আমাদের সমাজের যে কর্মটি খুবই ঘৃণার চোখে দেখা হয়, হয়তো একই কর্মটি অন্য সমাজে সম্মানের তালিকায় রাখা হয়। বিয়ে প্রথা প্রতিটি সমাজেই আছে, কিন্তু সমাজ ও জাতি ভেদে বিবাহ রীতির অনুষ্ঠানাদি ভিন্ন ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তেমনি কয়েকটি বিচিত্র বিবাহ রীতি এখানে তুলে ধরা হলো।
পানামার “সান ব্লাস” উপজাতীয় গোত্রের বিয়ের অনুষ্ঠানে কাছা কাছি দুটি গাছে একটা শক্ত কাপড়ের দুই মাথা বাঁধা হয়, বর গিয়ে সেই ঝুলন্ত কাপড়ে শুয়ে পড়ে। এক সময়ে সাজপোষাক পরা কনে গিয়ে বরের পাশে বসে। এক মিনিট কাল বসে থাকলেই দুজনের বিয়ে হয়ে গেলো।
আফ্রিকার রুয়ান্ডাতে “ওয়াটুসি” গোত্রের মধ্যে বিয়ের রীতি বেশ অদ্ভুত। বর-কনে সকলের উপস্থিতিতে সামনা-সামনি দাঁড়ায়।
বরের মুখের কুলির পানি কনের গায়ে ছিটিয়ে দেয়, কনেও মুখের পানি বরের গায়ে ছিটিয়ে দেয়, তক্ষুনি তাদের বিয়ে হয়ে গেলো।
ভারতের গঞ্জামে বসবাসকারী “সুন্দ্রা” গোত্রের মেয়েদের বয়স বারো বছর পূর্ণ হলে (যত দিন পর্যন্ত কুমারী থাকে) তাকে প্রথমে সূর্যের সাথে বিয়ে দিতে হয়। সেদিন পুরোপুরি বিয়ের আয়োজন করে, মেয়েটিকে গয়না গাটি পরিয়ে কনে সাজানো হয়। তারপর একটি থালায় পানি রেখে কনেকে থালার পাশে রাখা হয়, তাতে বর সূর্যের প্রতিফলন পড়ে, এই প্রতিফলন পড়ার সাথে সাথে সূর্যের সঙ্গে কনের বিয়ে হয়ে যায়। এরপর থেকে মেয়েটিকে ঠিক বিবাহিতা মেয়ের মতো বিবেচনা করা হয়।
ফারমোজা বা তাইওয়ানের একটি গোত্র আছে, যাদের মধ্যে আরেক অদ্ভুত বিবাহ রীতি প্রচলিত। বর বিয়ের বেশ কিছুদিন আগে থেকে গাছের গায়ে লাথি মারার অভ্যাস করতে থাকে। বিয়ের দিন বর কনের হাঁটুর নিচে কায়দা করে লাথি মারে, তাঁর পা কনের পায়ের সঙ্গে লাগা মাত্রই তাদের বিয়ে হয়ে গেলো। তার পর অবশ্য বাকি জীবনে কোন পক্ষের আর কোন লাথা লাথি নেই।
আফ্রিকার রুয়ান্ডাতে অন্য আরেকটি সম্প্রদায়ের বর-কনের যে বিয়ে হয় তাতে কিছুটা রাজনীতির ভাব রয়েছে।
এখানে বিয়ের অর্থ মুখে চুনকাম করা। বর নিজ হাতে কনের মুখ চুনকাম করে সাদা করে দেয়। তারপর তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে।
কাশ্মীরের হিন্দুদের মধ্যে যে বিয়ে হয় সেই বিয়ের আসরে কনে নিজে উপস্থিত থাকেনা, বদলে তার একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকে। প্রতিনিধিটি হলো একটি উট।
ভারতের কোন কোন জায়গায় এমন রীতি প্রচলিত আছে যে, মেয়ে যদি পছন্দ করে কোন ছেলেকে বিয়ে করতে চায়, তাহলে বিয়ের অনুষ্ঠানে তাকে প্রথমে একটি গাছকে বিয়ে করতে হবে।
আফ্রিকার ইথিওপিয়ার “গাল্লাদের” মধ্যে যে বিয়ে হয় তা অনেকটা অপহরণ পদ্ধতির মতো। বর কনেকে কোলে তুলে নিয়ে যায় এক জায়গায়। সেখানে একটা বড় পাত্রে পানি ভরা থাকে। কনেকে তুলে পানির উপর ছেড়ে দেয় বর।
তখন ঝপ্পাস করে আওয়াজ হয়, যতো বেশী জোরে আওয়াজ হবে বিয়ে ততোই বেশী পাকাপোক্ত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।
ভারতের রাজপুতানার “বিকাণিরে” হিন্দুদের বিয়ে হয় আরেক অদ্ভূত রীতিতে। পুরোহিত কনের হাত একটি গাভীর লেজের সঙ্গে বেঁধে দেন। গাভীকে দেবতা জ্ঞান করা হয়, গাভী কোন এক সময়ে “হাম্বা” বলে ডাক দিলে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। তারপর অন্যান্ন অনুষ্ঠান শুরু হয়।
কঙ্গোতে ওলেম্বা উপজাতির মধ্যে বিবাহের সময় কুকুরেরও প্রয়োজন পড়ে। বিয়েতে বৌয়ের মূল্য ধরা হয় ৮টা তামার ক্রশ, ৩৫টা মোরগ এবং ৪টা কুকুর। কিন্তু একটি মজার ব্যাপার এখানে ভীষণ ভাবে উল্লেখ করা উচিত তা হলো এই জায়গাটায় ঐ কুকুর সংগ্রহ করা খুব শক্ত তাই সম্ভবতঃ কুকুরও উপহার হিসেবে গণ্য করা হয়।
বাহামার চনহাদের মধ্যে বন্দুকের গুলি দিয়ে বিয়ে হয়। পুরোহিত কনের মুখে দুবার গুলি করেন, কার্তুজে অবশ্য গুলি থাকেনা, ফাঁকা।
বন্দুকের আওয়াজ মিলিয়ে গেলে কনে যখন চোখ মেলে তাকায় তখন সে বিবাহিতা এবং সুখী।
শ্রীলঙ্কার বিবাহ রীতিও বেশ অদ্ভূত। পুরোহিত বর কনের বুড়ো আঙ্গুলে একটি সুঁতো দিয়ে বেঁধে দেন, তখনই তাদের বিয়ে হয়ে গেলো।
সুমন আহমদ
সিলেট।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।