আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় :

ফাস্ট নিউজে চোঁখ রাখুন

চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হ্রাস পেয়ে ১৮ ডিগ্রিতে গিয়ে দাঁড়ায় গতকাল। চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও গতকাল দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। প্রবাহমান মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আরও দু’একদিন স্থায়ী হতে পারে বলে জানিয়েছে দেশের আবহাওয়া অধিদফতর। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হচ্ছে। পানবরজের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

তীব্র শীতে চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার পানবরজে পান ঝরে পড়তে শুরু করেছে। ব্যাপক হারে পান ঝরে পড়ায় গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গাসহ এলাকার পানহাটগুলোতে পানের বাজার নেমে আসে অর্ধেকের নিচে। এলাকার বহু পানবরজে পানগাছ হলুদ হতে শুরু করেছে। এলাকার প্রধান অর্থকরি ফসল পানবরজে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় এলাকার পানচাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চুয়াডাঙ্গা, যশোরসহ উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহে শীতের প্রকোপ এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গার পানহাটগুলোতে গতকাল অন্বাভবিক দরপতন ঘটে। তীব্র শীত তথা বৈরী আবহাওয়ার কুপ্রভাবে এলাকার পানবরজে পানগাছ হলুদ হয়ে যাচ্ছে। ঝরে পড়ছে পান। যে পানের দাম গত হাটে ছিলো ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা পোন, সেই পান গতকাল একই হাটে বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২২ টাকা পোন দরে। ১৭ থেকে ২০ টাকা পোনের পান গতকাল ৩/৪ টাকা পোন দরে বিক্রি করতে হয়েছে।

তীব্র শীতে পান ঝরে পড়ার কারণে অধিকাংশ পানচাষি গতকাল পানহাটে তাদের বরজের পান নিয়ে হাজির হন। আমদানির তুলনায় ক্রেতা কম থাকায় এবং ঝরা পানের অজুহাতে ব্যাপারিরা পানের দাম কমিয়ে দেয়। পানের হাটে পানের অস্বাভাবিক দরপতনে পানচাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। কোনো কোনো পানচাষি তাদের পান বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলেও হাটের একাধিক ব্যক্তি মাথাভাঙ্গাকে জানিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের হাতিকাটার পানচাষি শাবান বরজের পান ঝরে পড়ার বিষয়ে বলেছেন, গতবছরের পানবরজের পান এবার অধিক হারে ঝরে পড়ছে।

যেসব পানবরজের পানগাছ এখন পর্যন্ত চাল পর্যন্ত বড় হয়নি, সেইসব পানবরজের পানগাছে শীতে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। পান হলুদ হয়ে ঝরে পড়ছে। কোনো কোনো পানপাতার এক দিকে পচন ধরছে। গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গার পানহাটে পানচাষিদের অধিকাংশই ঝরা পান নিয়ে আসেন। ফলে পানের বাজার A¯^vfvweKfv‡e কমে যায়।

হাজরাহাটীর তোফাজ্জেল মোল্লা, শিয়ালমারীর আনারুল ইসলাম, পাঁচকমলাপুরের রেজাউল হকের সাথে পান ঝরে পড়ার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, যেবারই শীতের তীব্রতা বেশি হয়, সেবারই পানবরজে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এবার শীতের তীব্রতা বেড়েছে। পানবরজের পান ঝরে পড়ছে। শীতের তীব্রতা যেমন বেশি তেমনই পান ঝরে পড়ার হারও হতাশাজনক। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষিরা।

তবে যেসব পানবরজ পুরোনো, পানগাছ বড় হয়ে চাল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, বরজের বেড়ায় পাটকাঠি ঘন করে দেয়া সেই সকল পানবরজে ক্ষতির পরিমাণ কম হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর দেশের যেসকল এলাকার তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে, তার মধ্যে চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ছিলো অন্য জেলার তুলনায় কম। সারাদেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কক্সবাজারে ছিলো ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে শুরু করলেও শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যেমন হ্রাস পেয়েছে তেমনই বেড়েছে শীতের তীব্রতা।

কনকনে শীতে ঢাকাসহ সারাদেশেই দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে। ¯^vfvwe‡Ki চেয়ে অনেক কম তাপমাত্রা হওয়ায় জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। গতকাল শনিবার রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক শূন্য, সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ৩, ফরিদপুরে সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ২ সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৮, চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ১, সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক ৩, কক্সবাজারে সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক ৫ সর্বনিম্ন ১৫ দশমিক শূন্য, সিলেটে সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ৫, সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ১, শ্রীমঙ্গলে সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ৫, সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৫, খুলনায় সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক ৫, সর্বনিম্ন ১২ দশমিক শূন্য, বরিশালে সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ৫, সর্বনিম্ন ১১ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড কর হয়েছে। যেসব এলাকার ওপর দিয়ে প্রধানত শৈত্যপ্রবাহ প্রবাহমান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো- চুয়াডাঙ্গা, যশোর, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, বগুড়া, রংপুর, সৈয়দপুর ও দিনাজপুর। এসব এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে এসেছে।

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সপ্তাখানেক ধরে নামতে নামতে ৬ ডিগ্রিতে গিয়ে ঠেকলেও তা আবার বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। গতকাল শনিবার চুয়ডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ১৮ দশমিক শূন্য, সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৫, রাজশাহী সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৪, সর্বনিম্ন ১০ দশমিক শূন্য, ঈশ্বরদী সর্বোচ্চ ১৯ দশমিক ৬, সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৮, বগুড়ায় সর্বোচ্চ ১৯ দশমিক শূন্য, সর্বনিম্ন ১০ দশমিক শূন্য, রংপুরে সর্বোচ্চ ১৫ দশমিক ৭ সর্বনিম্ন ১০ দশমিক শূন্য, সৈয়দপুরে সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ৫ সর্বনিম্ন ৯ দশমিক শূন্য, দিনাপুরে সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ২ সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করার খবর পাওয়া গেছে। জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, ১০ দিনের মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ শেষ হতে না হতেই গতকাল শনিবার রাত থেকে নতুন করে শুরু হওয়া কনকনে ঠাণ্ডা আর হিমেল হাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসী। পশুপাখির অবস্থা আরও করুণ। অসহায় ছিন্নমূল মানুষেরা কনকনে শীত থেকে বাঁচতে রাস্তার পাশে খড়কুটো জ্বালিয়ে রাত অতিবাহিত করছে।

গতকাল থেকে হিমেল হাওয়া নিয়ে যে কনকনে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে তা কতোদিন স্থায়ী হবে আবহাওয়াবিদরা পর্যন্ত জানাতে পারেননি। তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কারণে সকালে দিনমজুরেরা কৃষিক্ষেতে কাজ করতে যেতে না পেরে পরিবার পরিজনরা অসহায়ভাবে দিনাতিপাত করছে। বেড়ে গেছে শীত ও ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব। ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দিকাশি এবং কোল্ড ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন হাসপাতালে শীতজনিত রোগীদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

হাঁড়কাপানো তীব্র এ শৈত্যপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গা জেলার অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষ যখন ঠাণ্ডায় জবুথবু সেই মুহূর্তে গতকাল শনিবার দর্শনা প্রেসক্লাবে অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদুল ইসলাম আজাদ বিত্তবানদের অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারের একার পক্ষে বিপুল এ জনগোষ্ঠীর অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। এ অবস্থায় সামর্থ অনুযায়ী আমাদের উচিত অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাড়িয়ে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা। মেহেরপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর জেলায় শীত জাকিয়ে বসেছে। ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচলসহ জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

১ জানুয়ারি মেহেরপুর জেলায় প্রচণ্ড শীতের সাথে সাথে ঘন কুয়াশা পড়ায় ছিন্নমুল থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন শীতবস্ত্রের অভাবে প্রচণ্ড কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও সরকারিভাবে ৬ লাখ জনসংখ্যা অধ্যূষিত মেহেরপুর জেলায় মাত্র ১ হাজার কম্বল দিলেও চাহিদার তুলনায় এ শীতবস্ত্র অত্যন্ত অপ্রতুল। মেহেরপুর শহরসহ জেলার গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষ প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে। গত দুদিন ধরে আকাশে সুর্যের দেখা মেলেনি। শিশু ও বৃদ্ধরা প্রচণ্ড শীতে কষ্ট ভোগ করছে।

এদিকে শীতের পাশাপাশি যানবাহন চলাচলে ভীষণ ব্যাঘাত ঘটছে। দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় প্রচণ্ড শীতে বোরো ধানের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিটি গ্রাম এলাকায় চাষিরা বীজতলা তৈরি করার পর চারা গজানোর শুরুতে প্রচণ্ড শীত পড়ায় বীজতলা হলুদ বর্ণ হয়ে যাচ্ছে। অনেকের বীজতলা মরে যাচ্ছে। চাষিরা বীজতলা রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলায় চলতি বোরো চাষ মরসুমে হাইব্রিড জাতের ২৩০ হে. ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ২২৫০ হে. জমিতে বীজতলা তৈরি করে যা দিয়ে ৪১ হাজার ৮শ ৪৮ হে. জমিতে বোরো আবাদ করা হবে। কিন্তু বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ধান আবাদ নিয়ে শঙ্কিত চাষিরা। দ্বিগুন মূল্যে অন্যত্র থেকে ধানের চারা কিনে এনে রোপণ করতে হবে। বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চাষিরা কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। গতকাল দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহা মহা. আকরামুল হক কয়েকটি বীজতলা পরিদর্শন করেছেন।

তিনি বীজতলায় হালকা গরমপানি সেচ, সকালে চারা থেকে দড়ি দিয়ে শিশির ফেলে দেয়া, প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা গভীর নলকুপ থেকে পানি সেচ পুষ্টি, রক্ষার্থে কাঠাপ্রতি আধাকেজি জিপসাম সার, ২৫০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করা এবং সম্ভব হলে পলিথিন দিয়ে রাতের বেলায় বীজতলা ঢেকে রাখতে হবে বলে পরামর্শ দেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.