আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বাগত ২০১০

কাউকে কখন ও বেশী ভালোবাসতে নেই পরিনামে সেই দুঃখ দিতে পারে

নতুন বছরের প্রথম সূর্য উঠেছে পুব আকাশে। আজ নতুন দিন। মহাকালের চিরন্তন গতিপ্রবাহে নানা ঘটনার স্মৃতি নিয়ে বিগত হয়ে গেল আরও একটি বছর। শুরু হলো খ্রিষ্টীয় ২০১০ সালের পরিক্রমা। নতুনের প্রতি সব সময়ই মানুষের থাকে বিশেষ আগ্রহ ও উদ্দীপনা।

নতুনের মধ্যে নিহিত থাকে অমিত সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপায়ণ করার সুযোগ করে দিতে এল নতুন বছর। পুরোনো বছরের গ্লানি, ব্যর্থতা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে নতুনকে আবাহন করার কথা বলেছিলেন কবিগুরু। সেই কথা স্মরণে রেখে দেশবাসী চিরাচরিত রেওয়াজ অনুসারে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা এক মিনিটে স্বাগত জানিয়েছে নতুন বছরকে। নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।

বিগত বছরটি আমাদের জাতীয় জীবনে ছিল বিশেষ তাত্পর্যময়। বছরের শুরুতেই বহুল প্রত্যাশিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার অধিষ্ঠিত হয়েছিল রাষ্ট্রক্ষমতায়। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনও হয়েছিল বহু বছর পর। সব মিলিয়েই গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়ণে নতুন কর্মোদ্যোগের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া বছরটি মানুষের মনে বহু প্রত্যাশারও জন্ম দেয়। বিশেষ করে দ্রবমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ ইত্যাদি বিষয় মানুষের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি করে।

এর পাশাপাশি অনেক অনভিপ্রেত ঘটনাও বড় ধাক্কা দিয়ে গেছে রাজনীতি, অর্থনীতি ও মানুষের চেতনায়। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল বিডিআর বিদ্রোহ। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীতে এমন ঘটনা শুধু অভাবিতই ছিল না, দেশবাসীকে তা নানাভাবে উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত করে তুলেছিল। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আইলা। এর আগে সিডরের আঘাতে যেসব জনপদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, আইলায় প্রধানত সেসব এলাকাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

দেশবাসী বরাবরের মতো এই দুর্যোগেও মহানুভবতা ও সহমর্মিতার পরিচয় দিয়ে উদার চিত্তে হাত বাড়িয়ে দেয় সহায়-সম্পদ হারানো মানুষের প্রতি। তবু সেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা যায়নি এখনো। এরই মধ্য দিয়ে নতুন বছর এল আমাদের জীবনে। একটি সমৃদ্ধ, শান্তিময়, মানবিক মূল্যবোধে শ্রদ্ধাশীল সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে বাঙালি যুদ্ধ করেছে। সফল হয়েছে।

পরাধীনতার ইতিহাস বদলে দিয়েছে। কিন্তু স্বপ্নের সবটুকু পূরণ হয়নি। হবে না এমন নয়। নতুন শতাব্দীর একটি দশক প্রায় শেষ হয়ে এল। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা দারিদ্র্যের নাগপাশ থেকে মুক্তির জন্য পুরোনো ধ্যানধারণা, আত্মকলহ, বিদ্বেষ ত্যাগ করা জরুরি।

সবাই মিলে এক হয়ে নামলে অনেক বড় শত্রুর বিরুদ্ধেও যুদ্ধে জয় করা যায়—এ অভিজ্ঞতা আমাদের হাতে-কলমেই আছে। সেই মনোভাব নিয়ে যাত্রা শুরু করলে বাঙালিও পারবে অগ্রগামীদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে। তাদের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যেতে। নতুন বছর আমাদের এভাবে অনুপ্রাণিত করুক। বাণী: রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান তাঁর বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘নব উদ্যমে আমরা সোনালি ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাব, এ হোক আমাদের অঙ্গীকার।

’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গত বছর দারিদ্র্য বিমোচনসহ উন্নয়নের যে নবধারার সূচনা হয়েছে, তা নতুন বছরে পরিপূর্ণতা পাবে। তিনি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সবার জীবনে অনাবিল সুখ ও শান্তি কামনা করেছেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁর বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সবার সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। তিনি একই সঙ্গে পুরোনো বছরের ব্যর্থতা, হতাশা মুছে ফেলে সুন্দর ভবিষ্যত্ বিনির্মাণে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার এক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

নগরবাসীর নববর্ষ উদ্যাপ ঘড়ির কাঁটা ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে নগরবাসী খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদ্যাপন শুরু করে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তবে ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা পেছানোর কারণে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার জন্য নগরবাসীর অপেক্ষার পালা যেন শেষ হচ্ছিল না। রাত ১২টার পর উত্সবে মেতে ওঠে রাজধানীর হোটেল আর ক্লাবগুলো। রাস্তায় পটকা ও আতশবাজি ফুটিয়ে হই-হুল্লে¬াড়ে মেতে ওঠেন তরুণ-তরুণীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঢোকার জন্য শুধু নীলক্ষেত ও শাহবাগ ক্রসিং খোলা রাখা হয়। রাত আটটার পরপরই পরিচয়পত্র দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঢোকানো হয়। রাত ১২টার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শ ছাত্র রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন। তাঁরা ঢোল-বাদ্য বাজিয়ে আনন্দ-উল্লাস করেন। রাত আটটার পরপরই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসিয়ে তল্ল¬াশি শুরু করে র্যাব ও পুলিশ।

কেউ যাতে নেশা করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পয়েন্টে ডগ স্কোয়াড ছিল। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা অবস্থান নেন হোটেল, বার ও ক্লাবগুলোয়। পুলিশের প্রায় ১২ হাজার সদস্য অবস্থান নেন রাজধানীর স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে। বিপুলসংখ্যক নারী পুলিশ মোতায়েন করা হয় কূটনৈতিক জোন গুলশান, বারিধারা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। র্যাব সদস্যরা টহল দেন রাজধানীজুড়ে।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।