দরোজার কড়া ধরে বার দুই নাড়তেই কড়াটা খুলে হাতে চলে এলো ! বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে তাড়াতাড়ি কড়াটা জায়গামতো ঢোকাতে না ঢোকাতে সুমনার মা এসে দরোজা খুলে দিলেন। আমি আদাব জানিয়ে সুমনার কথা জিজ্ঞেস করতেই আস্তে করে বললেন, আছে। তারপর খোলা দরোজা আমাকে ঢোকার জন্য ছেড়ে দিয়ে সসঙ্কোচে ভেতরের ঘরে চলে গেলেন। তাঁর সাথে এ নিয়ে বার পাঁচেক দেখা হলো। প্রতি বারই আদাব পর্যন্ত।
যতোবারই তাঁর সাথে কথা বলতে চেয়েছি তাঁর সঙ্কোচের পরিমান দেখে কথা বলার সাহস পাইনি। আজ শেষবারও আর কথা বলতে পারলাম না। নি:শব্দে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়লাম।
এসেছি সহপাঠী সুমনার সাথে দেখা করতে। পরীক্ষা শেষ।
দুই জনই যার যার বাড়ী চলে যাব। কথাটা ভেবে আমি বুকের ভেতর সেই চিরায়ত ব্যথাটা অনুভব করলাম- কি যেন নেই ! এই শূন্যতাবোধ সারা চেতনাকে আচ্ছন্ন করে ফেললো। অতীত এসে নির্দয় মূর্তিতে চোখের সামনে ধরা দিলো। একত্রে ক্লাস করা, কলেজের বারান্দায় আর ওদের বাসায় ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা। এসব স্মৃতি আমার অজান্তেই দুই চোখের পাতা ভারী করে ফেললো।
এমন সময় সুমনার ''আদাব'' আমার তন্ময়তা ভেঙ্গে দিলো। সুমনার পরনে হালকা সবুজ শাড়ী। কিন্তু চোখে মুখে তেমন কোন বেদনার ছাপ আমার চোখে পড়লো না। বোধকরি পুরনোদের সাথে পুনর্মিলনের আসন্ন সুখস্বপ্ন সদ্য হারানো অতীত স্মৃতিকে ঢেকে রেখেছে। আদাবের জবাব দিয়ে খানিকটা হেসে জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছো ?
-ভালো।
আপনি কেমন আছেন ?
-এই আছি আর কি !
আমার কণ্ঠস্বরের আকস্মিকতা তাকে সিরিয়াস করে তুললো। বললো, মন খারাপ করে আছেন কেন ?
-অতীতকে বড়ো বেশী মনে পড়ছে !
- ওসব ভেবে মন খারাপ করে লাভ নেই। সবাই ফুলি নয়।
সুমনার এই এক স্বভাব। আমার মন খারাপ হলেই এজন্য ফুলির সাথে আমার ব্যর্থ প্রেমকে দায়ী করে বসে।
আমি ম্লান হেসে বললাম, সেজন্য নয়।
-তাহলে কেন ?
বেশ কিছুক্ষণ মাথা নীচু করে থেকে আমি নি:শব্দে সুমনার চোখের দিকে তাকালাম। এক জোড়া চোখের কৌতুহলী প্রতীক্ষার সামনে আমি চুপসে গেলাম।
সে আবার বললো, চুপ করে আছেন যে !
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম. জানি না !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।