আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাহবাগ জার্নাল-১

আমি এবং আরণ্যক ছাইরংয়া বধ্যভূমিতে দাড়িয়ে দেখছি শেষ সূর্যাস্ত সময়ে গর্জে উঠতে পারে যে কন্ঠ, তাকেই হয়তো স্বাভাবিকভাবে সচেতন কন্ঠের সংজ্ঞায় ফেলা যায়। আমি বরাবরই একটি ধীর প্রকৃতির মানুষ । গত কয়েকদিনের ঘটমান আন্দোলনের হাজারো মানুষের ভীড়ে নিজের একজোড়া পা’কে নগন্যই মনে হতে পারে নিজের কাছে । আপাতদৃষ্টে এটির কাজ সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া কিছু নাইবা মনে হতে পারে । তবু জানি আগুনের পাশে থাকলে ঠিকই একদিন আগুন হতে পারবো।

ঘরে বসে টিভি চ্যানেল কিংবা সংবাদপত্রে নাক ডুবিয়ে বসে থাকেন যারা তারপর ঘটমান অবস্থাদৃষ্টে একসময় হয়তোবা আনমনেই দ্বীর্ঘশ্বাসের সাথে সাথে বাতাসে ঢেলে দেন এক চিলতে ক্ষোভের বিষ, যাকে ঠিক গর্জনের তালিকায় ফেলা যায়না । সেক্ষেত্রে সচেতন কন্ঠের সংজ্ঞার পরিসীমায় তাদের অবস্থান মেনে নিতে বেশিরভাগ মানুষেরই হয়তো কষ্ট হবে । কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এই বিষটুকুও আমাদের অনেক বড় অর্জণ । গতকয়েকদিনের শাহবাগ চত্ত্বরের হাজারো মানুষের ভীড়কে বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ বিভিন্নভাবে কাঁটাছেড়া করছে। কারো কাছে এসবই লোক দেখানো, কেউ বলছে একটি বিশেষ শ্রেনীর মদদ দাতা তারুন্যের সেন্টিমেন্ট কে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করছে, কেউ বলছে গাঁজার আসর কিংবা এই সুযোগে হালের তরুনীরা রাতভর তাদের ছেলে বন্ধুর সাথে কাটানোর মোক্ষম সুযোগ পাচ্ছে।

বিষয়টাকে কে কিভাবে দেখবেন জানিনা কেননা বাজারের সবচেয়ে দামী চালেও আজকাল কাকরের টুকরো পাওয়া যায়। চালে কাঁকর মেশানোটা আমাদের স্বভাবজাত কিন্তু আমার কেন জানি মনে হয় যা দিনকাল পড়েছে তাতে কাঁকরকে আর কষ্ট করে মেশাতে হয়না, এক অলৌকিক চলন প্রক্রিয়ায় সে নিজে নিজেই চালের সাথে মিশে যেতে ছুটে আসে। কেননা জীব বা জড়র ধর্ম নিজের অস্তিত্ত্ব সগৌরবে জানান দেয়া । যাদের নিজস্ব অসতিত্ত্ব প্রশ্নের মুখে তাদের একাংশ পরগাছার মতো অন্যের শরীরে নিজের জায়গা খুঁজতে মরিয়া হয়ে ওঠে, বাকি অংশ দুর থেকে নিজেদের অসতিত্ত্বহীন অবস্থাকে নিয়মসিদ্ধ করতে গিয়ে পরগাছাকে গাছ বলে গাছের অবস্থান বিচার করতে করতে দিনাতিপাত করেন। আমার এক বন্ধু আমাকে সেদিন বললো যে ‘দোস্ত সেদিন শাহবাগের মেলায় গিয়েছিলাম , পুরো রাস্তা জুড়ে আনন্দের ছড়াছড়ি, তরুনীরা সুন্দর সাজুগুজু করে শরীর দেখিয়ে বেড়াচ্ছে , দেখলাম গাঁজার গন্ধে জায়গাটা কেমন ম ম করছে” কথাটা শুনে মাথার ভেতরে রক্তপ্রবাহ বেড়ে গিয়েছিলো অনেক কষ্টে নিজেকে সামাল দিয়ে বললাম “ দ্যাখ এইটা নিয়া তোর সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছা আমার নাই” ।

ওকে যুক্তিতর্ক দিয়ে বোঝানোর চেষ্টাটা বৃথা বলেই সেদিন কথা বাড়ায় নি” । গত কয়েকদিনে আমিও বেশ কয়েকবার শাহবাগ চত্ত্বরে গিয়েছি , পুরো রাত গনমানুষের সাথে স্লোগান দিয়েছি । রিকশাওয়ালা, মুটে, মজুর, নারী, শিশূ, বৃদ্ধের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে নিজের অস্তিত্ত্বের ঘোষনা দিয়েছি । স্বচক্ষে ৫২,৭১,৯০ এ সামিল হতে না পারার আফসোসকে লাঘব করবার চেষ্টা করেছি । ছোটখাটো টুকরো ঘটনা আমারও চোখ এড়ায়নি, ১ লা ফাল্গুনে একদিকে যেমন লাকির বজ্রকন্ঠে দাবী আদায়ের আগুন দেখেছি, তেমনি তারই ঠিক পাশেই হলুদ শাড়ী খোপায় ফুল গুজে হালের সুন্দরী তরুনীদেরকে দেখেছি তাদের ছেলে বন্ধুকে বগলদাবা করে ফাল্গুন উৎসব পালনে ।

কিন্তু আমি ওর মতো বিপ্রতীব অনুভূতি নিয়ে শাহবাগ থেকে ফিরতে পারিনি । আমার ভাবনা রুদ্ধ হয়ে গেছে যখন দেখেছি প্রাইমারী কিংবা হাইস্কুল পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা গলায় রাজাকারের ফাঁসির দাবী সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে স্লোগান দিতে । আমি ওদের চোখে আসন্ন বারুদ দেখেছি, আমি এই বিশ্বাস নিয়ে ফিরেছি যে কন্ঠ আজ স্লোগান দিতে শিখেছে, যে হাত দাবী আদায়ের সংগ্রামে উদ্ধত হতে শিখেছে, সময়ে সেই কন্ঠ,সেই হাত ঠিক তার পাওনা আদায় করে নেবে । সুতরাং সেই বিশেষ মদদদাতা গোষ্ঠি যারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য হাজার হাজার মানুষের আবেগকে ব্যবহার করছেন তারা কি জানে যে অগোচরে ওরা নিজেরাই ওদের গোরখোদকের বীজরোপন করছে?? সবশেষে নিজের অবস্থানটা ব্যাখ্যা করবার ভার কয়েক লাইন কবিতার উপর ছেড়ে দিলাম- আমি আছি মানুষের মাঝখানে ,ভালোবাসি মানুষকে, ভালোবাসি আন্দোলন, ভালোবাসি চিন্তা করতে আমার সংগ্রাম কে আমি ভালোবাসি -নাজিম হিকমাত (চলবে) ১৯.০২.১৩ অফিস (তেজগাও) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.