সৈয়দ আলী আহসানের একটা উক্তি দিয়ে শুরু করি---
"...এর কোন ক্রমিকতা নেই, নিশ্চিন্ত একনিষ্ঠতা নেই। অনবরত পুনর্নির্মাণ, অস্বীকার এবং অনিবার্য লোক-মানস-নির্ভর আনন্দের প্রশ্রয়ে যুগে যুগে এর নতুন বিকাশ ঘটেছে। "
কোন এক সুদূরে, কোন এক অতীতে এর উদ্ভব। এরপর নতুন পাতা এলো, ফুল ধরলো নতুন আলোয়। মানবজীবনের প্রতিচ্ছবিটি আঁকা হয়ে গেলো সেই রঙে।
আমি আমাদের চিরসবুজ লোকসাহিত্যের কথা বলছি।
বুনো ফুল যেমন অযত্নে অবহেলায় অলক্ষ্যে ফোটে আবার অলক্ষ্যেই ঝরে যায়--কেউ তার খোঁজ রাখেনা, তেমনি লোকসমাজের মানুষের জীবনের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, কামনা-বাসনা--এ সবই অলিখিত পড়ে রয়। কত নিভৃত মনের গোপন ইতিবৃত্ত, কত কত রঙের মেলায় চুড়ির রিনিঝিনি অলক্ষ্যেই টেনে নিয়েছে মহাকালের স্রোত, কে ই বা তার হিসেব রাখে। কিন্তু হিসেব না রাখলেও তা হারিয়ে যায়নি। অপরিসীম মমতায় লোকসাহিত্য সেগুলোকে জীবন্ত করে রেখে দিয়েছে।
ছড়া, ধাঁধা, প্রবাদ-প্রবচন, পুঁথিপাঠ--এগুলোর মধ্যে নৃতাত্ত্বিক এবং জাতিতাত্ত্বিক অনেক মূল্যবান উপাদান লুকিয়ে থাকে।
খুব বেশি তাত্ত্বিক কথাবার্তাতে আর না যাই। বেশ ক'দিন ধরে মাথার ভেতর লোকছড়া, ধাঁধা ঘুরোঘুরি করছিলো। সংগ্রহে থাকা এই চিরসবুজ ছড়াগুলোকে তুলে রাখি আমার খেরোখাতায়। এই ভেবেই এই পোস্ট।
আজকের পর্বে থাকবে কিছু ছড়া। কারো সংগ্রহে আরো কোনো ছড়া থাকলে আশা করি সেগুলোও পাবো কমেন্টে।
১.
আয় আয় চাঁদ মামা
টিপ দিয়ে যা
ধান ভানলে কুড়ো দেবো
মাছ কুটলে মুড়ো দেবো
এক থাল ভাত দেবো
এক বাটি দুধ দেবো
চাঁদের কপালে চাঁদ
টিপ দিয়ে যা।
২.
টুনি নাচে আড় পায়
ঘুঙুর কিনে দেবো পায়
কোন ব্যটারা বা'য়ে যায়
টুনির নাচন দেখে যায়।
৩.
টুনি নাচে আলুর গাছে
ফ্যাঁপ ধরেছে বোয়াল মাছে
টুনি সেথায় কি করে?
ফুল তোলে আর গান করে।
৪.
চিৎ হয়ে শুয়ে হাঁটু ভেঙে উঁচু করে এর ওপর বাবুকে উপুড় করে শুইয়ে মা বলছেঃ
তাল ঘুঘুসি
পিড়ে চাচ্ছে।
-কে বসপে?
:বউ বসপে।
-বউ কোথায় গেছে?
:পানি আনতে।
-পানি কোথায় গেছে?
:হাটে গেছে।
-হাট কোথায় গেছে?
:মিলে গেছে।
এই রাজার মা, হাড়িকুড়ি সরাও
তালগাছ প'লো প'লো----------
--এই বলতে বলতে বাবুকে কাৎ করে একপাশে আস্তে করে শুইয়ে দেয়া হয়।
৫.
শাক তুললাম খুটে মুটে
বাগুন তুললাম জালি
শিশু মেয়ে বিয়ে দিয়ে
ঘর করলাম খালি।
ঘর ভরা ধান চাল
পুকুর ভরা পানি
শিশু মেয়ে বিয়ে দিয়ে
ঘর করলাম খালি।
৬.
আম খাইলাম পচা পচা
কাঁঠাল খাইলাম না
দ্যাশে আইলো বর্ষার পানি
মা-রে দেখলাম না।
৭.
ইচকিন মিচকিন চাপোর দানা
কাল বিয়ানে ছাতিয়ানা
জামাই এলো ঘামিয়ে
ছাতি ধরো টানিয়ে।
৮.
বরই তলায় চরই ফুল
মামুবাড়ি বহুৎ দূর
মা তুমি কাইন্দো না
জামেলারে বাইন্দোনা।
দখিন ঘরে বিছান দ্যাও
হুড়ুম ধুয়ে নাস্তা দ্যাও
কলা ছুলে পাতে দ্যাও
মিয়া ভাইরে আগে দ্যাও
হাড়ির তলে বিসকুট
তাই খায় কুটকুট।
৯.
মণি ঢুলে ঢুলে
শান্তি বুড়ির কোলে
সাগর ছেঁচে পাইছি মণি
দেবোনা কারো কোলে।
১০.
আমলামতী স্বরস্বতী
কাল আমলার বিয়ে
আমলারে নিয়ে যাবে
কাজীতলা দিয়ে।
কাজীতলার পথ ঘিরেছে
হীরের কাঁটা দিয়ে
হীরের শাক তোলবো আমি
পায় মুন্দি দিয়ে।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।