আমাদের অর্থনীতির মূলচালিকা শক্তি বৈদেশিক শ্রমবাজার হতে অর্জিত আয় যাকে আমরা বলে থাকি রেমিট্যান্স, সরকারের চরম ঔদাসিন্যে আর কিছু দালাল চক্রের কবলে পড়ে তা আজ ধ্বংস হতে চলেছে।
যতদিন যাচ্ছে ক্রমশই সংক্ষিপ্ত হয়ে আসছে আমাদের বৈদেশিক শ্রমবাজার । আনুমানিক ৭০ লক্ষ প্রবাসী কর্মীর মধ্যে-২০ লক্ষ প্রবাসী শ্রমিক কাজ করে সৌদি আরবে,১৪ লক্ষ আরব আমিরাতে, আর ১৪ লক্ষ ওমান ও কুয়েতে। গত ১৫ মাসে সৌদি আরবে নিয়োগ পেয়েছে ১৫০০০ শ্রমিক আর সেখান হতে ফিরেছে ৩১,০০০ শ্রমিক। বিগত বৎসরগুলোতে প্রতিবছর যেখানে সৌদি আরবে ১-২ লক্ষ শ্রমিক কাজ নিয়ে যেত, সেখানে এই অবস্থা কোনক্রমেই মেনে নেয়ার নয়।
কুয়েতে ও ঠিক একই অবস্থা। যেখানে প্রতিবছর ৩০,০০০-৪০,০০০ লোক কাজ নিয়ে যেত
সেখানে শ্রমশক্তির রপ্তানীর পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে।
মালেশিয়া ২০০৬ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ১ লক্ষ শ্রমিক নেয়ার কথা থাকলেও জনশক্তি রপ্তানী এজেন্সীগুলোর অনিয়মতান্ত্রিকতা এবং সরকারের ব্যক্তিত্ত্বপুর্ণ ও দায়িত্ত্বশীল ভুমিকার অভাবে মালেশিয়া অন্যান্য সকল দেশ থেকে শ্রমিক আমদানী করলেও বাংলাদেশ থেকে তাদের শ্রমিক আমদানী সম্পূর্ন বন্ধ করে দিয়েছে।
সূত্রঃ Click This Link
আমাদের দেশে গার্মেন্টস খাতে পোশাক রপ্তানি করে আসে বছরে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা আর রেমিট্যান্স খাতে প্রবাসী শ্রমিকেরা পাঠান প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা।
অর্থাৎ দেশের সবচেয়ে বড় আয় আসে, খেয়ে না খেয়ে বিদেশের মাটি কামড়ে পড়ে থাকা, আমাদের সেসব অভাবী হতদরিদ্র শ্রমক্লান্ত ভাইদের ঘামের প্রতিটি ফোঁটা থেকে।
আর রেমিট্যান্স থেকে প্রাপ্ত এই আয় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ নিরাপদ রেখে বড় ধরনের সংকট থেকে আমাদের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা করেছে।
সূত্রঃ Click This Link
এই সকল্ দেশে যারা কাজ করতে যান, তারা কেউ উপরতালার বাসিন্দা নন। এরা আমার, আপনার ভাই। গ্রামের খেটে খাওয়া মানু্য, জীবনের শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে, ধার-দেনা করে বিদেশে পাড়ি জমান মা-বাবা,স্ত্রী-সন্তান, প্রিয়জনের মুখে আহার জোটানোর অন্তিম অভিলাষ থেকে । যারা বিদেশে অবস্থান করেন,তারা বাংলাদেশী দুতাবাস থেকে ন্যুনতম সাহায্য ও পান
না।
তাদের পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে নেয় নিয়োগপ্রদানকারী কোম্পানী, ফলে তারা কার্যত হয়ে পড়েন এক প্রকার শ্রমদাসে। এতে সরকার ও রিক্রুটিং এজেন্সীগুলোর দায়বদ্ধতা কোন ক্রমেই এড়ানো যায় না।
আবার যখন তারা বেশী মজুরির আশায় অন্যত্র পালিয়ে যান, হয়ে পড়েন পাসপোর্টবিহীন-ভিসাবিহীন এক ভবঘুরে। যখন ধরা পড়েন বিশেষতঃ মালেশিয়ায় তাদের কোমরে দেয়া হয় “বোতান” নামের এক বেত্রাঘাত। এতে তাদের নিন্মাংশ অচল হয়ে যায়।
যখন তারা দেশে ফেরেন সবার কাছে হয়ে পড়েন অপাঙতেয় এক পঙ্গু। স্ত্রী-পুত্র,পরিবার-পরিজন কেউ তাদের আর দেখে না। বিশাল পৃথিবীতে তারা হয়ে পড়েন নিঃস্ব,অসহায়। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে তাদের। আর যারা কিছুটা সুস্থ অবস্থায়ও ফেরেন তারা সবার কাছে মূল্যহীন এক মানুষ হিসেবে পরিগণিত হন।
সুত্রঃ Click This Link
প্রসঙ্গ মালেশিয়াঃ
এশিয়ায় বৃহত্তম অভিবাসী শ্রমিক গ্রহণকারী দেশ মালয়েশিয়ায় ১৬টি দেশের প্রায় ২৫ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। নেপাল বা অন্যান্য দেশের একজন শ্রমিকের মালেশিয়া আসতে গড়ে সর্ব্বোচ্চ খরচ পড়ে বাংলাদেশি টাকায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, উড়োজাহাজ ভাড়া এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ মিলে মালেশিয়া গমনে সর্বসাকুল্যে একজন শ্রমিকের সর্বোচ্চ খরচ হতে পারে ৪০ হাজার টাকা এবং পাশাপাশি মালেশিয়া গমনে সরকার নির্ধারিত ফি-৮৪ হাজার টাকা। মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার শ্রমিকদের আসতেও প্রায় একই রকম অর্থ লাগে। ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়ার শ্রমিকদের খরচ হয় এর অর্ধেক।
আর কম্বোডিয়ার শ্রমিক আনতে হলে উল্টো নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকেই এ জন্য অর্থ খরচ করতে হয়। আর সেখানে বাংলাদেশের একজন শ্রমিকের মালেশিয়া আসতে গড়ে খরচ পড়ে ২-২.৫ লক্ষ টাকা,অনেকক্ষেত্রে এইদামে পাওয়াও দুষ্কর। নেপাল বা অন্যান্য দেশের একজন শ্রমিকের আসার খরচ কম হলেও বেতন বাংলাদেশি শ্রমিকের চেয়ে বেশি, দিনে ৩০ রিঙ্গিত (এক রিঙ্গিতের বিনিময় হার বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ২২ টাকা)। আর বাংলাদেশিরা দিনে পান ১৮ রিঙ্গিত।
সরকারী অভিবাসন কর্মকর্তাদের তর্থ্যঞ্জানে অঞ্জতা, উন্নাসিকতা , দায়িত্ত্বঞ্জানতা ও তদারকিতে সীমাহীন অবহেলায় এবং দেশী-বিদেশী রিক্রুটিং এজেন্সী তথা দালালচক্রগুলোর অর্থলোলুপতার কারণে জনশক্তি রপ্তানীতে, আমাদের শ্রমিকদের যেমন অন্য দেশের তুলনায় ৪-৫ গুণ বেশী টাকা খরচ করতে হচ্ছে আর ঐ দেশে পৌঁছার পর ও আমাদের শ্রমিকরা অন্যদেশের তুলনায় যথেষ্ট কম বেতন পাচ্ছেন।
যে টাকা তারা খরচ করে বিদেশ যান, বছরের পর বছর কাজ করে ও তারা সে টাকা তুলতে পারেন না। এতে তারা ভিসার মেয়াদ চলে গেলে ও যোগ-বিয়োগের হিসাব মেলাতে থেকে যেতে চান সে দেশে, কোন অসতর্ক মুহুর্তে ধরা পড়লে তার পরিণতি আবার “বোতান” যার পরিণাম আগেই বলা হয়েছে।
আমরা সুকৌশলে আমাদের এক একটি ভাইকে শুধুই কর্মহীন আর পঙ্গু করছি না, একইসাথে এক একটি পরিবারকে ও কর্মহীন আর পঙ্গু করে দিচ্ছি।
সুত্রঃ Click This Link
প্রসঙ্গ মধ্যপ্রাচ্যঃ
প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি,খাগড়াছড়ি,কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশের ধোপাছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছে। আর দেশের বিভিন্ন এলাকার কতিপয় অসাধু জনপ্রতিনিধিরা তাদের ভোট ব্যাংক বাড়াতে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ করে দেয় রোহিঙ্গাদের।
আর কিছু দুষ্কৃতিকারী অভিবাসন কর্মকর্তা নগদ অর্থের বিনিময়ে তাদের পাসপোর্ট পাইয়ে দেয়। এতে তারা মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অনায়াসে চলে যেতে পারে।
আর জাতিগতভাবে অসহিষ্ণু বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী এই রোহিঙ্গারা বিদেশে গিয়ে চুরি,ছিনতাই করে বেড়ায়। অতঃপর যখন ধরা পড়ে , বাংলাদেশী নামে অভিযুক্ত হয়। এক হিসবামতে, শুধুমাত্র সৌদিআরবেই ৫০ হাজার বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গা রয়েছে, তবে অপর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী দীর্ঘদিন যাবৎ সৌদি আরবে শ্রমিক হিসাবে কাজ করছে যারা প্রতিনয়িত আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করে চলছে।
এইকথা গুলো অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলোর ক্ষেত্রেও কম-বেশী প্রযোজ্য।
সূত্রঃ
Click This Link
Click This Link
Click This Link
বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে সহায়-সম্বলহীন দরিদ্র শ্রমিকদের যে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়, তা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনা যেমন জরুরী,তেমনি বিদেশ গিয়ে তারা যাতে কোনরকম বেতন বৈষম্যের শিকার না হন কিংবা কোনরুপ পাসপোর্ট হয়রানি বা পুলিশি নির্যাতনের মুখোমুখি না হন,পঙ্গু বা দেশের বোঝা না হয়ে দেশে ফিরতে হয়- তার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
অর্থলোলুপ দেশীয় রিক্রুটিং এজেন্সী বা দালাল চক্রের অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কুমতলব সরকারই নস্যাৎ করে দিতে নিতে পারে,কিন্তু বিদেশী দালাল চক্রের সিন্ডিকেট ভেঙেগ দিতে
দু’দেশের সরকারের একসাথে কাজ করাটা একান্তই জরুরী।
বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে অন্যকোন অবাংলদেশী জাতি বা গোষ্ঠী যাতে আমাদের সুনাম বা
সুখ্যাতি নষ্ট করতে না পারে সে দিকে সরকারের সজাগ দৃষ্টিও অতিশয় আবশ্যক।
উপরের এসব সমস্যা নিরসনকল্পে অন্তঃসারশূন্য কয়েকটি বিদেশ সফর ব্যতীত সরকারের আর কোন অর্জন নেই।
বিদেশ সফর শেষে, দেশে ফিরে বড় বড় দু’একটি কথা বললেও কার্্যতঃ এগুলো বাস্তবে কোনরুপ প্রতিফলিত হয়নি। বরং সবক্ষেত্রেই অবাস্তব, অবান্তর আর অসফল প্রতিপন্ন হয়েছে।
আত্মকলহে নিমগ্ন আমাদের সরকার নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি প্রমানের চেষ্টায় এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারে যে শ্রম দিচ্ছে, তার চেয়ে অনেক কম সময় ও শ্রম ব্যয়িত হচ্ছে বৈদেশিক বাণিজ্য ও কুটনীতিতে,এতে শ্রমবাজার সম্পর্কে আমাদের সরকারের চরম উদাসীনতায় এবং বৈদেশিক আন্তঃযোগাযোগে দুর্বলতায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ যেমন- সৌদি আরব,আবুধাবী,কুয়েত,কাতার,ওমান এবং নিকট প্রাচ্যদেশসমুহ যেমনঃ মালেশিয়া, সিংগাপুর ও কোরিয়াসহ অন্যান্য দেশে আমাদের আমাদের শ্রমিক রপ্তানী আকস্মিকভাবে হ্রাস পেয়েছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার একটি সামগ্রিক ইস্যু । আমাদের জাতীয় নেতাদের স্মর্তব্যঃ স্বাধীনতার প্রাক্কালে বাংলাদেশকে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আরব রাষ্ট্রসমুহ ছিল উন্নাসিক,তারই ধারাবাহিকতায় ইসলামপন্থী দলগুলোর সাথে তাদের সম্পর্ক অনেক নিবিড়। সুতরাং “যুদ্ধাপরাধের বিচার” এবং “রেমিট্যান্স নামক জাতীয় স্বার্থরক্ষা”র এ দু’য়ের সমন্বিত প্রচেষ্টায় মুসলিম ভাতৃপ্রতিম দেশগুলোর সহানুভুতি ও সমর্থন আদায়ের প্রচেষ্টা না করে সরকার বরং একরোখা ও বেপরোয়া সিদ্ধান্তে স্বেচ্ছা নিবার্সনে গিয়েছে।
এতে আমরা একদিকে যেমন শ্রমবাজার হারাচ্ছি, অপরদিকে এই শ্রমবাজার দখল নিচ্ছে ইন্ডিয়া,ফিলিপাইন,নেপাল,ভুটান,শ্রীলঙ্কাসহ আফ্রিকার অন্যান্য দেশ। আর কর্মহীন ও বিদেশফেরত শ্রমিকভাইদের অনাহুত আগমনহেতু রেমিট্যান্সের হঠাৎ পতনও দেশে চুরি-ছিনতাই,চাঁদাবাজি,দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ দেশকে নানা সমস্যায় ফেলে দিবে যা থেকে পরিত্রানের উপায় কারো জানা নেই। এখনি কোন তরিৎ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে, যেদিন ওসব দেশে শ্রমের চাহিদা পূর্ণ হয়ে যাবে কিংবা অন্য দেশগুলো এ বাজারে তাদের নিজ নিজ আধিপত্য বিস্তার করে বসবে,তখন হতবিহব্বল শূন্য দৃষ্টিতে আমাদের বুকচাপড়ানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না ! ! !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।