shamseerbd@yahoo.com
ভার্সিটির ল্যাবটা তখন সবে মাত্র আমরা নিজেদের মত করে ব্যবহার করতে পারছি, সিনিয়ররা আমাদেরটাতে আসেন না, আসলেও তারা অনেক ফ্রী। সো যে যার যার মত ব্যবহার করছে।
২০০২ সালের শুরুর দিকের কথা। বাংলাদেশী চ্যাট সাইট গুলো তখন বেশ জনপ্রিয়তা পাইছে। সবাইরে দেখি চান্স পাইলে চ্যাট উইন্ডো খুলে বসে।
একদিন আমিও বসে লগইন করলাম, নিজের নামেই।
আফসোস কেউ আমারে নকতো করলইনা, আমি নক করলেও জবাব দেয়না। কিছুক্ষন পর মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। ভদ্রলোকের দেখি কোন দাম নাই। মাথায় একটা শয়তানী বুদ্ধী আইসা হাজির হল।
তখন ম্যাট্রিক্স এর যুগ, ট্রিনিটিরে বড় ভালা পাই, তার নামেই নতুন করে লগ ইন করলাম।
কইরা সারি নাই, সাথে সাথে নক পাইলাম। মেজাজতো আরও খারাপ হয়ে গেল। ঠিক আছে, আমিও দেখি কতদূর যাওয়া যায়। নিজের নামে যেহেতু বেইল পাইলামনা, সো এইবার একটু মজা করি।
দুই জনের সাথে কথা চলতে লাগল। তার মাঝে একজন তো গলে গলে পড়ে দেখতেছি।
কথায় কথায় জানা গেল সে একটা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ঢাকায় থাকে.............আরও কত আওফাও কথা। হঠাৎ করে সে আমার মেইল এ্যাড্রেস চেয়ে বসল।
এতো প্রবলেম এ পড়ে গেলাম। তার সাথে চ্যাট করার ফাঁকে ফাঁকে হট মেইল খুললাম। ট্রিনিটি নাম দিয়ে একটা আইডি খুললাম। সে আবার চাওয়াতে দিয়ে ও দিলাম। সে মেইল করবে জানাল।
চ্যাট উইন্ডো ক্লোজ করতে না করতে তার একটা মেইল ও পেয়ে গেলাম। রিপ্লাই দিলাম। সেই থেকে শুরু ।
তার প্রতিদিনকার গল্প সে লিখে পাঠাত, আমিও লিখতাম, আর দারুন মজা পেতাম। ভাবতাম নেটে মানুষকে বোকা বানানো কত সোজা।
অথবা এমন ও হতে পারে সেও এমনি এমনিই করছে, সেও হয়ত মজাই করছে।
মিথ্যা আর অন্যায় এর মধ্য দিয়ে প্রতিদিনই আমি কিছু সময় পার করতে লাগলাম। মেয়ে হিসাবে অভিনয়ও আমি ভালই করে যেতে লাগলাম। গল্প লম্বা হতে লাগল নিয়মিত। সে আমাকে মেসেন্জারে আসতে বলে, সময় বলে দেয়, আমি যায়না, কপট রাগ করে মেইল দেয়, আমি সরি বলি।
এভাবেই চলে, চলতে থাকে। একদিন সে তার একটা ছবি পাঠায়। আমার ছবি পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে । আমি ছবি পিসিতে নাই বলে পাশ কাটায়। তাকে ঝুলিয়ে মজা পাই, আর নিজে নিজে হাসি।
একদিনের সাময়িক রাগ যে একটা ফান কে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে আমি বুঝতে পারছিলাম না। গল্প চলে মেইলে। সে নিয়মিত একটা ছবি পাঠানোর অনুরোধ করে। তার সাথে করা এই মেইল মেইল খেলা একটা মজার নেশায় পরিনত হয়। প্রতিদিন জানি একটা মেইল আসবে।
আমিও রিপ্লাই দিই। একদিন আমাদের বন্ধু বান্ধবীদের একটা গ্রুপ ফটো তাকে পাঠিয়ে দিই, আরও বেশী মজার আশায়। তাকে বলি এই ছবিতে আমি আছি, দেখি তুমি ধরতে পার কিনা, আমি কোনজন। মেইল করে আমি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাই নিজে নিজে।
সে মহা দ্বন্দে পড়ে যায়, আমি কোন জন জানতে চায়, আমি ভাব ধরি, বলি বলবনা, তুমি যদি আমার ভাল বন্ধু হও তবে ঠিকই বুঝবে আমি কোনজন।
সেত আরও জটিলতার মাঝে গিয়ে পড়ে।
কিছু দিন পর সে আমার ফোন আছে কিনা জানতে চাই। বলি নাই, তবে আমার এক ছেলে বন্ধুর আছে, ক্লাশ টাইমে করলে পেতে পার। আমি আমার নিজের নাম্বারটা দিয়ে দিলাম। বললাম অন্য সময়ে কিন্তু পাবানা।
এক বান্ধবীকে বলেও ফেললাম এই কথা যে একটা ছেলে আমারে ফোন দিলে তরে দিব, তুই হ্যাঁ না কইরা কথা শেষ করে দিস।
সে একদিন সন্ধ্যায় ফোন করল। করেই বেচারা বুঝতে পারল ভুল হয়ে গেছে, কারন সে তো আসল নাম জানেনা, মেইল আইডি জানে। তবুও বলল এই মেইল আইডি ইউজ করে, আমাকে আপনার নং দিয়েছে।
বললাম ও আচ্ছা, ওর সাথে আপনার পরিচয় কিভাবে।
তিনি বললেন নেটে। হুমম কিন্তু সেত এখন হলে, পরে করেন।
এইবার তার আগেই আমি মেইলে একটা ঝাড়ি দিলাম, তুমি সন্ধ্যার পরে ফোন করছ কেন, থাক আর ফোন করতে হবেনা, মেইল করো। সে জানতে চাইল কোন সমস্যা কিনা। জানালাম না, এমনিতেই।
একদিন জানাল সে সিলেটে আসতে চায়, দেখা করবে। ঘটনা দেখলাম জটিল হয়ে যাইতেছে, আর আমার নিজের ও কেমন জানি খারাপ লাগতে শুরু করেছে, কারও সাথে এই ধরনের আচরন করাটা নিজের কাছেও ভাল লাগছিলনা, এক দুই দিন ফান এক কথা, কিন্তু এভাবে দিনের পর দিন, প্রায় তিন মাস ধরে ।
কি করা যায় কি করা যায় ভাবছি, মনে হল আমি ছেলে এই কথাটা বলা ঠিক হবেনা, তাতে বেচারা হয়ত অনেক শকড হবে। মেইল করলাম তোমার সাথে আগামী এক মাস আর যোগাযোগ হবেনা। আমি বাড়ি যাচ্ছি।
কেন জানতে চাইলে বললাম ,আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আর এরপর যোগাযোগ করা হয়ত হয়ে উঠবেনা।
বিশাল একটা মেইল পেলাম, সাথে তার আরেকটা ছবি। এত অল্প বয়সে কেন বিয়ে করছি, লেখা পড়ার কি হবে.......আরও কত কি !!! ছবিটা ছিল ভয়ানক- একটা ছুরি হাতের কব্জিতে ধরা !!!
জানালাম আমার কিছু করার নেই, আর আমিতো কাউকে কোন কথাও দিই নাই, বাসার অমতে কিছু করা আমার দ্বারা হবেনা। আমি মেনে নিব তারা যা বলেন।
সে আবারও সিলেটে আসতে চাইল, বললাম তুমিত আমাকে খুজে পাবেনা, চিনবেওনা, এ ধরনের পাগলামীর কোন মানে নাই। সে পরপর বেশ কিছু মেইল পাঠাল। এড়িয়ে গেলাম। শেষ একটার রিপ্লাই দিলাম- আমি কাল বাড়ি যাচ্ছি।
এরপর মাস খানেক আর তার মেইলের কোন উত্তর দিলাম না।
সে মেইল করল অনেক গুলো।
একদিন হঠাৎ করে ঐ মেইল আইডি দিয়ে মেসেন্জারে লগ ইন করে দেখি সে নেটে। আমি আর লগ আউট করলাম না।
সে নক করল। হাই হ্যালো হল।
কেমন আছি জানতে চাইল, কেমন চলছে। সত্যিই বিয়ে করেছি কিনা জানতে চাইল। সংসার কেমন চলছে , সে কেমন। হালকা কথাবার্তা।
এরপর থেকে সে ও আর কোন মেইল করেনি, আমি ও না।
ঐ আইডিতে লগ ইন ই বাদ, সে সাথে চ্যাট নামক জিনিসটাও বাদ। এখনও খুব কমই চ্যাট করি, কদাচিৎ বন্ধুদের সাথে শুধু ইয়াহুতে।
ঘটে যাওয়া ঘটনাটা মনে পড়লেই আমার খুব খারাপ লাগে। কারও সাথে এই ধরনের আচরন করা উচিৎ হয়নি সবসময় এইটাই মনে হয়, অনুতাপ হয় মিথ্যা বলার জন্য।
আই এম সরি - এই কথাটাই বলি সবসময় মনে মনে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।