আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোট গল্প ঃ মায়ের ফ্যান্টাসি

পৃথিবীর সবচেয়ে অমানবিক শব্দ মানবতা, মানবতা কথায় থাকে না , কাজে থাকে।

আজকের দিন টিতে সৌম্য ফোন বন্ধ রেখে সে বাসায় থাকবে না, এমন কথা কল্পনা তে ও ছিল না সোমা ইসলামের । আজ সৌম্য এর ২২ তম জন্মদিন। নিজের নামের সাথে নাম মিলিয়ে রেখেছিলেন। সৌম্য এর বাবার তার অফিসের কলিগের সাথে পরকীয়া ছিল।

বিয়ের পর পর ই বুঝতে পারলে ও এক বছরের মাথায় সৌম্য জন্মা হয় । তাই সৌম্য এর মুখের দিকে তাকিয়ে মুখে বুজে ছিলেন সোমা। সৌম্য এর জন্মের দুই বছর পর তার বাবা অফিসের এক কলিগ কে বিয়ে করে আলাদা সংসার শুরু করেন। তাদের আর কোন খোঁজ খবর নেন নি। তখন থেকে খুলনা ভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স সোমা অনেক চেষ্টা করে ও একটা ভাল চাকরি যোগার করতে পারেন নি।

সবাই ঘুস চাইত। তার সে টাকা কোথায় ? একটা ছোট চাকরি করে সৌম্য কে বড় করে তুলেছেন। অর্থাভাবে সব চাহিদা পূরণ করতে না পারলে ও ছেলের প্রতি যত্নের কমতি রাখেন নি সোমা। সৌম্য ও মায়ের কষ্ট বুঝে কখনই কিছু চায় নি। পড়াশোনা করত মনোযোগ দিয়ে।

দুই বছর আগে মেডিক্যাল এ চান্স পায় সে। খুব বেশি বন্ধু বান্ধব ছিল না তার। সোমা গত বছর এর জন্মদিনে প্রথম একটা দামি মোবাইল কিনে দিয়েছিলেন সৌম্য কে। প্রচণ্ড খুশি হয়েছিল সৌম্য একটা ইন্টারনেট সহ মোবাইল পেয়ে। মাকে জড়িয়ে বলেছিল, আমি আর কিছু দিন পর থেকে টিউশনি করব মা।

তোমাকে আর চাকরি করতে হবে না। ভাগ্যক্রমে নিজের বাসার কাছের মেডিক্যাল কলেজে চান্স পেয়েছিল সৌম্য। বাসা থেকেই কলেজে যেত। ক্লাস শেষে বেশি দেরি করত না, বাসায় চলে আসত। সারাদিন বাসায় একাই থাকত, বই পড়ত।

নতুন মোবাইল কেনার পর থেকেই সৌম্য সারাদিন মোবাইল নিয়ে পরে থাকত। ফেসবুক না কি যেন করত। বলত মা এখানে আমার অনেক বন্ধু আছে, যাদের সাথে সময় কাটাই নিঃসঙ্গতা কাটাতে। সোমা বুঝতেন, সৌম্য মানুষের সাথে বেশি মিশতে পারে না, বড় হয়েছে বন্ধুদের সঙ্গ প্রয়োজন তার। কিন্তু মোবাইলের দিকে তাকিয়ে ইন্টারনেট এ কিসের বন্ধু, তা তিনি বুঝতেন না।

এমনিতেই শুনেছেন ইন্টারনেট এ নানা বাজে জিনিস থাকে। তবে সৌম্য কে তিনি বিশ্বাস করেন। কিছুদিন পর সৌম্য মার কাছে থেকে টাকা নিয়ে একটা সিম কেনে। মাকে বলে এই সিমের অফার ভাল, পড়াশোনার জন্য মাঝে মাঝে কলেজের ক্লাসমেট দের সাথে কথা বলতে হয় মোবাইলে। এই সিম এ কথা বলার খরচ কম।

এরপর মাঝে মাঝেই সৌম্য মোবাইল এ কথা বলতে দেখতেন সোমা। কিন্তু তিনি তো সৌম্য কে এত টাকা দেন ন, তারপর ও সৌম্য এত কথা বলার টাকা কোথায় পায়। সৌম্য কে একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলেন। সৌম্য বলেছিল নানা মোবাইল কোম্পানির অফারের যুগে কথা বলতে এত টাকা লাগে না মা। মাস চারেক পর ঘটে যায় এক অকল্পনীয় ঘটনা, যার কথা সোমা এমনকি সৌম্য ও ভাবে নি হয়ত।

ফেসবুকে পরিচয় হউয়া একটি মেয়ের সাথে দেখা করতে যায় সৌম্য। সেখানে অন্য একটি মেয়ে এসে কিছু ছেলে কে নিয়ে। সৌম্য এর দামি মোবাইল টা কেড়ে নেয়। সৌম্য জীবনের প্রথম একটা মেয়ের সাথে পরিচিত হয়ে অন্তরঙ্গ হয়ে গিয়েছিল মোবাইল এ কথা বলতে বলতে। সে যে প্রতারক সিন্ডিকেটের তা সৌম্য বুঝতে ও পারে নি, সহ্য ও করতে পারে নি।

কয়েক দিন পর ওই প্রতারক চক্রের সদস্যদের ধরা পড়ার খবর পেপারে আসে। গ্রাম থেকে বিয়ে করে আনা মেয়ে লিমা কে তার স্বামী বিক্রি করে দিয়েছিল ঢাকায়। অপরাধি খদ্দের দের সাথে ধীরে ধীরে সে অপরাধ জগতের সাথে জড়িয়ে যায়। প্রতারনা করে মানুষ কে ডেকে এনে সব কেড়ে নিত। যদি ও সোমা এসবের কিছুই জানতেন না।

এ ঘটনার পর সৌম্য কেমন যেন বদলে যায়। বেশির ভাগ সময় সে বাড়ির বাহিরে থাকত। মাঝে মাঝেই সোমা লক্ষ্য করেন যে সৌম্য পার্স থেকে গোপনে টাকা বের করে নিচ্ছে। তিনি কিছু বলেন নি। কিন্তু সৌম্য যে আগের চেয়ে ও চুপচাপ স্বভাবের হয়ে গেছে তা তিনি বুঝতে পারেন।

সৌম্য কে সারাদিন খুজে পাওয়া যায় না। সোমা অফিস থেকে রাতে আসেন । সৌম্য কে তাই একটা কম দামি মোবাইল কিনে দেন জোড় করে, সৌম্য নিতে চায় না। কেন চায় না, সোমা বুঝতে পারেন না। গত মাসের ২ তারিখে রাতে সৌম্য রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল বাড়ি আসার জন্য।

হঠাৎ একটা বেপরোয়া কার এসে সৌম্য এর গায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। পোস্ট মরটেম রিপোর্টে বলা হয়, সৌম্য প্রচুর গাজা খেয়ে ছিল সেদিন। সোমা বিশ্বাস করতে পারেন নি। দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষ দর্শী দোকান দারের কাছে জানতে পারেন যে, সৌম্য সে দিন এলোমেলো ভাবেই হাঁটছিল যেন নেশা করেছিল। কিন্তু তবু ও রাস্তার ধার ঘেসেই যাচ্ছিল।

সেই সময় দুটি কার প্রতিযোগিতা করে যাওয়ার সময় একটি কার সৌম্য কে চাপা দেয়। সৌম্যর মৃত্যুর ২৮ দিন পর আজ তার জন্মদিন । সোমা সৌম্য এর ডায়েরি লেখা দেখে সব জেনেছেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন না সৌম্য এর চলে যাওয়ার পেছনে দোষ টা কার? তার স্বামীর পরকীয়ার ? যে কারনে সৌম্য একটা সাধারণ জীবন পায় নি। নাকি দেশের দুর্নীতিবাজ মানুষদের যাদের কারনে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে ও তার চাকরি হয় নি।

ছোট চাকরি দিয়ে নানা কষ্টে সৌম্য কে বড় করেছেন। ওই মেয়ে টাকে কি দোষ দেয়া যায়? কিন্তু সে তো নিজে এই পথ বেছে নেয় নি। নাকি মোবাইল ফোন কোম্পানি গুলোর? যারা নিজেদের স্বার্থে নানা অফার দিয়ে চলেছে। তাদের কি কোন দায়িত্ত ছিল? কিন্তু তারা তো কম টাকায় কথা বলার সুযোগ করে মানুষের সুবিধা ও করেছে। অনেক প্রশ্নে চোখ ঝাপসা হয়ে যায় সোমার।

তবু ও মনে হয়, সৌম্য এর মত ছেলে এত সহজে মাদক খুজে পায় কিভাবে? মাদক এত সহজ লভ্য হয়, তাতে সরকার কেন কিছু করে না। মাদক টা না পেলে ও তো ছেলে অন্তত ঘরে থাকত। অথবা যারা সেই কার রেস করছিল নিজের বিলাসিতায়। তাদের পরিবার এত টাকা পায় কিভাবে? তাদের তো কিছুই হবে না। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য কোন প্রতিকার, কোন আইন নেই কেন? আছে হয়ত।

তবে সরকারের সেসব ভাবার সময় কোথায়। কিন্তু তাই বলে যারা কার রেস করছিল, তাদের কে কি তাদের পরিবার কোন শিক্ষা দেয় নি? অবশ্য সোমা ভাবেন, তিনি নিজেই তো তার সন্তান কে হয়ত তার সন্তান কে সুসিক্ষা দিতে পারেন নি। চেষ্টা তো করেছেন। সৌম্য তো ভালই ছিল। তবে কেন এমন হল? আগের প্রশ্ন গুলোই ঘুরে আসে।

প্রশ্ন অনেক। উত্তর তার জানা নেই, কারও জানা আছে কিনা তাও তিনি জানেন না। একুশ টা বছর সৌম্য কে নিয়ে তিনি জন্মদিন করেছেন মা ছেলে মিলে। আজ ২২ তম জন্মদিনে সৌম্য নেই। কেক নিয়ে বসে আছেন একা।

আবার সৌম্য এর নাম্বারে ফোন দেন, কিন্তু আগের মতই বন্ধ। কেও ফোন ধরে বলছে না, বল মা? ২৮ দিন ধরেই তো দিয়ে যাচ্ছেন। বন্ধ তাতে কি? হয়ত এক সময় না এক সময় ঠিক ই ফোন ধরে বলবে, বল মা। আমি আসছি।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।