আমার আছে জল
নয় বছরের সোভিয়েত শাসনের প্রায় শেষ পর্যায়ে উত্তর আফগানিস্তানে শেহেরজাদ আকবরের জš§। তখন আফগানিস্তানে ছিল তালেবানদের দৌরাÍ্য। তালেবান শাসনের অধীনে মেয়েদের শিক্ষিত হওয়া সত্যিই খুবই কঠিন ছিল। বই কেনাই ছিল তখন ভয়ানক একটা ব্যাপার। তালেবানদের হাতে যদি কোনও পড়-য়া মেয়ে ধরা পড়ত তাহলে তার বা তার পরিবারের ছিল মৃত্যু।
এমনকী মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করতে ওরা বোমা মারত মেয়েদের স্কুলে। আর যদি কোনও মেয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত না ঢেকে বাইরে যেত তাদের মুখ এসিডে ঝলসে দেওয়ার ঘটনা ঘটত প্রায়ই।
এমন পরিস্থিতিতেই পড়াশোনা করেছে শেহেরজাদ। তার পরিবার কাবুলে আসার পর উত্তরাঞ্চলীয় জোট রাজধানী দখল করার জন্য ৪০ দিনব্যাপী বন্দুকযুদ্ধ চালায়। এরই ফাঁকে এক ঘণ্টা যুদ্ধবিরতির সময় তার পরিবার রাজধানী ছেড়ে উত্তরে চলে আসে।
এভাবে যুদ্ধের কারণে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেত পরিবারটি। কিন্তু যেখানেই যান, বাবা সবসময়ই মেয়ের জন্য নতুন বই কিনতেন। আর নতুন বই পাওয়ার পর শেহেরজাদ সেটা গোগ্রাসে পড়ত। সবসময় বই পাওয়া সহজ ছিল না, কিন্তু তার বাবা জানতেন কাদের কাছে বই আছে। বাবা যেখানেই যেতেন, সেখানেই স্কুল খুলে প্রতিবেশীদের বাচ্চাদের পড়াতেন।
শেহারজাদের যখন নয় বছর বয়স তখন তালেবানরা তাদের শহর দখল করে। এরপর গান শোনা ওদের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যায়। মা তখন সবসময় ওদের আস্তে কথা বলতে শিখিয়েছেন।
এরপর বাধ্য হয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়ার পর চার বছর তারা সেখানেই ছিল। ১১ বছর বয়সে শেহেরজাদ নিয়মিতভাবে স্কুলে যাওয়া শুরু করে।
প্রথম থেকেই সে ভালো করত। অনেক সময় তাদের খাবার কেনার টাকা ছিল না। বাবা এজমায় ভুগছিলেন। নিজের চিকিৎসার জন্য টাকা খরচ না করে মেয়ের পড়াশোনার পেছনে টাকা ব্যয় করতে চাইতেন বাবা। শেহেরজাদের যখন ১৪ বছর বয়স তখন সে শহরের লোকদের ইংরেজি পড়ানো শুরু করে, যাতে পরিবারকে সাহায্য করতে পারে।
তবে তখন তার মনে হত যে, তালেবান অধীনস্থ মাতৃভূমিতে তাদের পক্ষে আর ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। তারপর একসময় আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হলে তালেবানরা আল-কায়েদার আশ্রয় নেয়। ২০০২ সালের ফেব্র“য়ারিতে আমেরিকান ও ব্রিটিশ বাহিনী আফগানিস্তানে আসার পর শেহেরজাদের পুরো পরিবার কাবুলে ফিরে আসে।
দেশে ফিরে ওরা দেখল, এখানে নেই বিদ্যুৎ বা গ্যাস। এমনকী বাড়িঘরগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে।
মহিলা ও শিশুদের সংখ্যা খুব কম। এরই মধ্যে নতুন করে জীবন শুরু হল। মেয়েদের তখন স্কুলে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছিল। কিন্তু তখন একটা গুজবও ছিল চারদিকে। সবাই বলছিল, তালেবানরা লুকিয়ে আছে, তারা যদি কোনও মেয়েকে বোরকা ছাড়া বাইরে দেখে তাহলে এসিড ছুঁড়ে মারবে।
কিন্তু শেহেরজাদের বাবা সবাইকে বোঝালেন, এসব কেবল গুজব, সত্যি নয়। এটা প্রমাণ করার জন্য তিনিই প্রথম নিজের মেয়েকে বাইরে পাঠালেন। সে সময় শেহেরজাদ ও তার বোন পশ্চিমা সন্ত্রাসবাদের ওপর আন্তর্জাতিক সাংবাদিকের অনুবাদক হিসেবে কাজ শুরু করে। এভাবেই তারা পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে সক্ষম হয়। ২০০৪ সালে শেহেরজাদ কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় দর্শনে পড়তে।
তারপর সে তার ডিগ্রি আমেরিকার স্মিথ কলেজে ট্রান্সফার করে। গত গ্রীষ্মে সে নৃবিজ্ঞানে øাতক শেষ করে।
এরপরই অক্সফোর্ডে স্কলারশিপ নিয়ে চলে আসে। গত মাসে অক্সফোর্ডে উন্নয়ন অধ্যয়নে তার øাতকোত্তর শুরু করেছে শেহেরজাদ। দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মেয়েটি ঠিক করেছে দেশের নারীদের উন্নয়নে সাহায্যের জন্য সে তার সব সুযোগ কাজে লাগাবে।
পড়াশোনা শেষ করে সে দেশেই ফিরতে চায়। সেখানে নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করবে শেহেরজাদ। অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ় মনোবল থাকলে যে কোনও বাধা অতিক্রম করা যায় সেটাই প্রমাণ করলেন আফগানিস্তানের এই মেয়ে। শেহেরজাদ আকবরের পরিবার খুব গর্বিত তাকে নিয়ে। কারণ তালেবান শাসনের নিগড়ে বেড়ে ওঠা প্রথম আফগান মেয়ে হিসেবে সে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে।
শেহেরজাদ নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করে। এখন আফগান মেয়েরা স্কুলে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছে এটাই সুখের কথা। এ পথ ধরে আরও মেয়ে এগিয়ে আসবে এই ভাবনাই এখন তাকে আরও সুখী করছে। শেহেরজাদ জানে জীবন থেমে থাকে না। তাই জীবনের জয়গানই গাইতে হয় সব পরিস্থিতিতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।