আমাদের ছোটবেলায় দেখা যেতো জানুয়ারী ফেব্রুয়ারি মাসেই মুসলমানী বা খত্নার ধুম পড়ে যেতো। আমি জানিনা কারন কি ছিলো। শীতকালে না হয়ে গরমকালে হলেই ব্যাপারটা ভালো হতো। কারন ভুক্তভোগী মাত্রই জানে,শীতে কাঁটাছেড়া দেরীতে শুকায়। তো ব্যাপারটা হলো, দেখা যেতো সেই সময়ে বিহারী হাজেমের দল এলাকাতে এসে যেতো।
বগলের নীচে সার্জিক্যাল ইকুইয়েপমেন্ট নিয়ে ছেলেপুলেদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে অভিভাবকদের খোঁজ করতো।
আমার ও বন্ধু রাজেশের একিই দিন মুসলমানী হয়। রাজেশের মামা ডাক্তার ,উনিই চট্টগ্রাম মেডিকেল এ এক শুক্রবার সকালে আমাদের খত্নাকরন প্রক্রিয়া শেষ করেন। সে বছর আমরা ৫ম থেকে ৬স্ট শ্রেনীতে উঠবো। আব্বা আমাকে একটা ৫০০ টাকার নোট দিলেন।
কান্নাজড়িত কন্ঠে বেদনার্ত পরিবেশের মাঝে ভাবগাম্ভীর্য অবস্থায় টাকাটা নিলাম। এটা একটা আশ্চর্য ব্যাপার,জ্ঞান হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত একমাত্র টাকা দেখলে আমি রাগ করিনা। টেক্সীতে আসার সময় ক্রন্দনরত অবস্থায় ভাবতে ভাবতে এলাম ভালো হবার পর এ টাকা দিয়ে কি কি করবো।
৪-৫ দিন পর আমার বন্ধুরা হঠাত করে ঠিক করলো,নায়ক রুবেলের কি জানি একটা মারাত্বক ক্যারাডির মুভি আসছে,আরে মনে আসছে। মুভিটির নাম বজ্রমুস্টি,কারন আমাদের সুমন অলরেডি এটা দেখে আসছে যে কিভাবে রুবেল শেষ পর্যন্ত ভিলেনের অন্ডকোষ এ লেম্বুচিপা দিয়ে তাকে মেরে ফেলে।
এ কাজটা করার সময় নাকি ইনসেটে একটা কমলা লেবু থাকে,সেখানে দেখায় কিভাবে লেবুটাকে চিপে বরবাদ করে দেয়া হয়। সুমনের প্রানঘাতি বিবরণ শুনে আমরা তা দেখার জন্য বিহবল হয়ে পড়ি। সে সময় রুবেলের ছবি মানেই হিট। কিন্তু গোল বাধালাম আমি। আমি একেবারে চিতকুর মেরে কেঁদে উঠি।
তাদের বলি-তোরা আমাকে ছাড়া যেতে পারবি না। আমি ভালো হলে এক সপ্তাহ পর যাবো। কেউ একমত হলো না। সবার কথা হলো,তখন আরেকবার যাওয়া যাবে। আর তুই এখন যে অবস্থায় আছোত,তোর আরো ২ সপ্তাহ লাগবে।
কি আর করা,শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম আমি যাবোই যাবো। তারা বন্ধুর মরনপন ইচছা দেখে রাজি হলো। কিন্তু তারা বললো-তুই লুঙগি পড়ে কিভাবে যাবি?আমি বললাম,আমি যেভাবেই যাই তোদের তো সমস্যা নাই। তোরা আমাকে ঘিরে থাকবি,তাহলেই আমি ব্যথা পাবোনা। আমি লুঙ্গি পড়ে ঐজায়গাতে লুঙগীটা ধরে উপুর করে রাখবো।
তোরা খালি খেয়াল রাখবি আমার গায়ে যেনো কোন মানুষ এসে না পড়ে।
সিনেমা হলে গেলাম। দৃশ্যটা শুধু কল্পনা করেন,আমি মাঝে লুঙ্গি আলগি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর আমাকে ঘিরে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের মতো বন্ধুরা। এর মাঝেও একটা ব্যাপার আছে আমাদের বাইট্টা মামুন তখন এতোই ছোট ছিলো যে,আমাদের মায়ন বুদ্ধি দিলো মামুন তুই আমার কোলে লাফ দিয়ে উঠে ঘুমিয়ে থাক। হলে ঢূকলে তোকে নামিয়ে দিবো।
তাহলে আমাদের একটা টিকেট কম কিনতে হবে। যথারীতি তাই হলো,দারোয়ান শুধু একবার বললো-এতোবড় বুইড়া পোলা কোলে নিয়ে আসার কি দরকার ছিলো? সিনেমা দেখলাম,কমলা চিপাও দেখলাম। এবার শো ভাংলো,বের হবার পালা।
আমি আবার লুঙগি হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছি,আমাকে ঘিরে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট। তখনই গোল বাধলো।
অতিরিক্ত জনতার চাপে আমার বাহিনী সইতে না পেরে আমারই গায়ে এসে চাপাচাপি করতে লাগলো। আমি উনার নিরাপত্তায় শংকিত হয়ে চিৎকার শুরু করি-ভাই আমারে বাঁচান,আমার মুসলমানী হইছে। আমার সঙ্গীরা চিৎকার করছে-ভাই আপনারা এভাবে চাইপেন না,ওর মুসলমানি হইছে। সবার কথা তোদের যদি মুসলমানীই হয়,সিনেমায় আসলি কেনো ফাজিলের দল। এখন মর।
কিভাবে বেচে ফিরলাম সে আরেক ইতিহাস।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।