মেদ, আ.স.ম আবদুর রব, আ. কুদ্দুস মাখন, নুরে আলম সিদ্দিকী, লতিফ সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ, আল মোজাহিদী—কাকে রেখে কার কথা বলব? লতিফ সিদ্দিকী যখন বক্তৃতা করতেন সেই সভায় হ্যালো হ্যালো করে গর্ববোধ করতেন বর্তমান স্পিকার বা মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। এর পরের স্তর আমাদের কথা বাদই দিলাম। সেই ছাত্র গণজাগরণ বিজয়ের মুখ দেখেছিল। বাংলাদেশ সৃষ্টির সেইসব জীবিত মহানায়করা আজ সবাই অবহেলিত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত। একজনও নেই, যে যথাযথ সম্মান, গুরুত্ব নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব পেয়েছেন বা পাচ্ছেন।
’৪৯-এ যেদিন আওয়ামী লীগ গঠিত হয় সেদিন মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ও জননেতা শামসুল হক বাদে বাকি সবাই ছিলেন শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের তুলনায় নবীন। আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের দিন বিনা নোটিশে সে সমাবেশে শেরেবাংলা গিয়েছিলেন। তাকে কী যে সমাদর করা হয়েছিল, কী যে গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল—তা কল্পনার সীমারও বাইরে। যা নিয়ে আজ এত তোলপাড় সেই মুক্তিযুদ্ধে নিজে মুক্তিযুদ্ধ করেছি এবং দেখেছি। ’৭০-এর নির্বাচনের পর বাংলাদেশের কাক-পক্ষীরাও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে সমর্থন জানিয়েছিল।
সেখানে সব ছিল। পি.ডি.পি. মুসলিম লীগ ছিল, নেজামে ইসলাম ছিল, এমনকি এখনকার নিন্দিত জামায়াত, কেউ বাদ ছিল না। আন্দোলন করে করে আমরা যখন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলাম তখন মুসলিম লীগের অনেক প্রবীণ নেতা হুট করে সভায় এসে গেলে তাদের সম্মান করতে করতে আমাদেরই জায়গা থাকত না। কতদিন থেকে বলছি, রাজাকার ছাড়ুন, স্বাধীনতা বিরোধীদের ত্যাগ করুন, প্রাপ্য শাস্তি তাদের পেতে দিন, কেউ শুনল না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জগতের সব বুদ্ধি রাখেন।
জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে যেদিন খালেদা জিয়ার বিএনপি হটাও আন্দোলনে প্রেস কনফারেন্স করলেন, সে সময় আমি আওয়ামী লীগের এক নম্বর সদস্য ছিলাম। ওয়ার্কিং কমিটির উপস্থিত ৩৪ জনের মধ্যে ৩১ জন আপত্তি করেছিলাম। কিন্তু তারপরও নিজামী, কাদের মোল্লার সঙ্গে প্রেস কনফারেন্স করে তিনি খালেদা জিয়া বিরোধী আন্দোলন করেছিলেন। এমনকি অনেক বাজে কথা বলেছিলেন। সেদিন যদি জামায়াত আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চড়ে খালেদা জিয়াকে হটাতে না পারত তাহলে বিএনপির ঘাড়ে চড়ে রক্তের দামে কেনা পতাকা রাজাকারের গাড়িতে উড়ত না।
কি প্রয়োজন ছিল বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে গোলাম আজমের দোয়া চাওয়ার? এগুলো তো ইতিহাস। এগুলো বদলাব কী করে? বর্তমান গণজাগরণের যেমন ভালো দিক আছে, কোনো খারাপ দিকও কি নেই? শুরুতেই বলেছি নেতৃত্ব-কর্তৃত্বহীন আন্দোলন একেবারে অর্থহীন। কেউ কাউকে মানবে না, কেউ কারও কথা শুনবে না তাহলে সমাজের নিরাপত্তা কোথায়? এ যদি সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্ত জনতার হয়, তাহলে নেতৃত্ব আর কর্তৃত্ব কার? আর তলে তলে যদি মহাজোটের হয় তাহলে সাজেদা চৌধুরীর মতো অমন শ্রেষ্ঠ নারী মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছিত, অপমানিত, অপদস্থ হবেন কেন? গণজাগরণের মঞ্চ তো মুক্তিযুদ্ধের মঞ্চ। দলমতের ঊর্ধ্বের মঞ্চ। রাজাকারের ফাঁসি চাইলে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান কোথায়? রাজনীতিকদের সম্মান কোথায়? যতকাল রাষ্ট্র থাকবে ততকাল রাজনীতি থাকবে।
যা গ্রামের অক্ষর-জ্ঞানহীনেরাও বুঝে, আর ব্লগাররা বুঝে না, তা কি হয়? আর আমি যে যাব কিন্তু কী করে যাব? আমি যে রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী! রাজাকার হয়ে রাজাকারের ফাঁসি চাই কী করে? সচেতন নাগরিকরা একজনও কি বলেছে, কাদের সিদ্দিকীকে রাজাকার বললে স্বাধীনতাকে অপমান করা হয়? কেউ বলেনি। রাজনীতির যেখানে প্রবেশ নিষেধ সেখানে গণস্বার্থের গ্যারান্টি কোথায়? আর রাজনীতিকদের এত খেলো কে করেছে? যদি বলি দুই দলের দুই প্রধান নেত্রী এতে সমভাবে দায়ী, কী জবাব দেবেন তারা? শত শত ফোন আসছে। কেউ কেউ বাড়ি পর্যন্ত ছুটে এসেছে, শাহবাগে যেতে হবে যাওয়া উচিত। কিন্তু কী করে যাই? নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর মতো শহুরে যোদ্ধা যখন মাতাব্বর তখন ওরকম ধনী যোদ্ধার সমাবেশে আমরা নগণ্যরা যাই কী করে? আমি ভীরু, কাপুরুষ, দালাল জেনারেল শফিউল্যাহকে একেবারেই পছন্দ করি না। দেশের মানুষ এক সময়ের হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মন্ত্রী এ.কে. খন্দকারকে শাড়ি পরা কাজের বুয়ার চেয়েও নিম্নমানের মনে করে।
তারপরও একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার হিসেবে তাদের সম্মান আমার কাছে সম্রাটের চেয়ে বেশি। তারা কি মর্যাদা পেয়েছেন সেখানে? তাদের কি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে? আর ওই মঞ্চ কী বলে? অত আলগা বাঁধনে যুদ্ধ হয়? অটুট বাঁধন কোথায়? রসুনের কোয়া যখন খুলে বা ছুটে যায় তখন ঝরঝর করে সব ছড়িয়ে পড়ে। বেঁধে রাখার নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব কই? আর একদিনে তো সব হবে না। দূর থেকেও তো জনতার আন্দোলনকে সমর্থন করা যায়। আমরা না হয় তাই করলাম।
মাত্র কয়েক বছর আগে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে মোটামুটি সুগঠিত একটি আন্দোলন হয়েছিল। বিরোধী দলের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বাড়িতে বসে আলাপ-আলোচনা করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গোলাম আজমকে ফাঁসিযোগ্য অপরাধী বলে সরকারের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। তখন ছিল বিএনপি সরকার। তারা ফাঁসি দেবে কেন? কী দায় পড়েছে তাদের? বরং তারা তাকে জোটে নিয়ে দ্বিতীয়বার দুর্দান্ত প্রতাপে ক্ষমতায় এসেছিল। ফাঁসির দায় সরকারের উপর চাপানোর পর মানুষ বড় আশা করে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল।
কই সেদিন তো আওয়ামী লীগ ফাঁসি কার্যকর করেনি? বরং ১৫-১৬টি আসন নিয়ে জামায়াত দুর্দান্ত প্রতাপে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেছে। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে জাহানারা ইমামের করুণ মৃত্যু আমি কি দেখিনি? আজ যারা রাষ্ট্র চালাচ্ছে তারা আন্দোলন যাতে বেশিদূর যেতে না পারে, তিনি যাতে বিকল্প নেতা হয়ে না যান তার জন্য কত ষড়যন্ত্র করেছেন। সে তো কারও অজানা নয়।
এই তো সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ কাউন্সিলে তোফায়েল আহমেদের মতো নেতাকে এতিমের মতো বসে থাকতে হয়েছে। যে ভ্রষ্ট কমিউনিস্ট লেনিন প্রেসিডিয়ামে স্থান পেয়েছেন তিনি বলেছিলেন, ‘এই তোদের বঙ্গবন্ধুকে টুকরো টুকরো করলাম।
’ বঙ্গবন্ধুর জীবিতকালে যিনি ছাগল-ভেড়া-গরু-মহিষের চামড়া দিয়ে জুতো পরতেন না, সব সময় বঙ্গবন্ধুর চামড়ার জুতো পরতেন, ডুগডুগি বাজাতেন, তিনি এখন বঙ্গবন্ধুর কন্যার খুবই আস্থাভাজন প্রিয় মহামন্ত্রী। দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে যেভাবে কথা বলেন, বাংলার মানুষ এখন ওসব দাঁত খিঁচানি থেকে মুক্তি চায়। তারই আলামত শুরু হয়েছে শাহবাগের গণমঞ্চে। আমি আন্তরিকভাবে এর সফলতা কামনা করি। এ আন্দোলন কেউ বিপথগামী করতে চাইলে সর্বোতভাবে তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করব।
কিন্তু আবার রাজাকারের ফাঁসি চাইলেও জননেত্রী না বলে বসেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে এসব হচ্ছে! কারণ তিনি তো সবকিছুতেই যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকানোর অজুহাত খোঁজেন। এভাবে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় বেশি সময় থাকা যায় না। এর একটা এসপার ওসপার হওয়াই দরকার। কিন্তু রাজনীতি বিবর্জিত নেতৃত্ব কর্তৃত্বহীন কোনো আন্দোলন অতীতে সফল হয়েছে তার নজির কোথায়? সেজন্য অবশ্যই ইস্পাতকঠিন সুদৃঢ় নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। সংগঠন এবং নেতা থাকতে হবে।
বেশি সম্মান পাওয়ার জন্য কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। আল্লাহ আমাকে প্রচুর দিয়েছেন। হঠাত্ কিছু পেতে চাই না। হবু চন্দ্র রাজার গবু চন্দ্র মন্ত্রী হওয়ার কোনো বাসনা নেই। দান করা নেতৃত্বের শখ কোনোদিনই ছিল না।
জীবনে যা কিছু পেয়েছি দুঃখ-কষ্ট করে পেয়েছি। কারও দয়ার দান নেইনি। কাউকে অনুকরণ করিনি। বঙ্গবন্ধুকে পাগলের মতো ভালোবাসতাম। তাই তার আদেশ-নির্দেশ সব সময় শিরোধার্য করেছি।
জয় বাংলা আমাদের জাতীয় রণহুঙ্কার। রাম ছাড়া সীতা, লাইলী ছাড়া মজনু, রজকিনী ছাড়া চণ্ডীদাস, শিরী ছাড়া ফরহাদ যেমন, তেমনি বঙ্গবন্ধু ছাড়া জয় বাংলার কোনো মানে হয় না। যে জয় বাংলা এক সময় ছিল বাঙালির সম্পদ, বর্তমানে তা হাসিনা লীগ হাইজ্যাক করেছে। যে জয় বাংলা না বললে আমরা বুকে চাপবোধ করি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করে আজ ১৩ বছর মুক্তকণ্ঠে জয় বাংলা বলতে পারি না। সেই জয় বাংলা যখন শাহবাগের গণজাগরণ ষ্কয়ারে বারবার শুনতে পাই, তখন অবশ্যই মনটা আনন্দে ভরে উঠতে চায়।
কিন্তু স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর নাম যখন একবারও শুনি না তখন মনটা বড় ভারি হয়ে আসে।
ব্লগার রাজীব হায়দার দুষ্কৃতকারীর হাতে নিহত হয়েছে। তাতে শাহবাগ উত্তাল। এমন হওয়াই স্বাভাবিক। কোনো সতীর্থ জীবন হারালে সহযোদ্ধাদের এমন করেই বুক ফাটে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজীবের বাড়ি গেছেন সান্ত্বনা দিতে। বলেছেন, ‘এদেশে জামায়াতের রাজনীতি করার অধিকার নেই। ’ আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে তার মুখে কথাটি মানালেও, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মানায় না। মানুষ শঙ্কায় আছে এসব করে গণতন্ত্রকে হত্যা করতে কেউ কৌশল আঁটছেন কিনা! বয়স তো আর কম হলো না, এখন যাওয়ার সময়। যে সময় মানুষ লোভে ডুবে থাকে, চোখে রঙিন চশমা পরে তখনই মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য মনে করেছি।
আজ মরণের ভয় কী? তাই আত্মার তাগিদেই কথাগুলো বলছি। শুধু পশুর মতো বেঁচে থাকার জন্য ঈমান আমান সবকিছু কেন বিসর্জন দেব। ১৪ তারিখ টুঙ্গিপাড়া গিয়েছিলাম। মাওয়ার ওপারে ফেরি ঘাটে নামতেই ৩-৪ জন বৃদ্ধ বড় উদ্বেগ নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘বাবা, নামাজ পড়তে মসজিদে নাকি যেতে পারব না!’ আমি থমকে গিয়েছিলাম। বুক ফেটে চৌচির হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু মানুষের এই শঙ্কা নিয়ে কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই। আওয়াজ উঠেছে, ইসলামী দল বাতিল করতে হবে। কিন্তু হিন্দুর দল থাকবে, খ্রিস্টানদের দল থাকবে—মুসলমানের দেশে মুসলমানের দল থাকবে না—কেমন সব আজব কথা! যারা ধর্মকর্ম মানে না, তারা তাদের মতো থাকুন। যাদের আল্লাহ আছে, রাসুল আছে তাদের কেন এত গালাগাল। ব্লগার রাজীব মারা গেছে, তার জানাজার যদি দরকার হয় তাহলে কেন একটা পবিত্র স্থানে জানাজা করা হলো না, শাহবাগ চত্বরে কেন? এক নাগাড়ে ১২ দিন জনসমাগম হলে পায়খানা, পেশাব, থু থু ফেলে জায়গা কি নোংরা করা হয়নি? নোংরা জায়গায় নামাজ চলে না।
জানাজা কোনো মশকারি নয়, জানাজা নামাজ ফরজে কেফায়া, চার তকবিরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। কোন সে টেডি ইমাম তিন তকবিরে নামাজ শেষ করল? নামাজ পড়বেন অজু করবেন না, ক’জন ওখানে অজু করতে পেরেছিল? নারী-পুরুষ, হিন্দু, মুসলমান একসঙ্গে জানাজা হয়? হয় না। কেন অমন হলো? আপনাদের এত সামর্থ্য, এত ক্ষমতা—জায়গাটা একটু ঝাড়পোছ করে নিতেন, দয়া করে সবাই অজু করে নিতেন। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের জানাজা থেকে আলাদা করতেন। যত আধুনিকই হন পবিত্র ইসলামে পুরুষের পাশে কোনো নারীর অবস্থান অনুমোদন করে না।
তুমুল জোয়ার চলছে, তাই কেউ কথা বলে না। অনেক মুসলমানেরও কেবলা ঠিক নেই, ইমান দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমার রাজনৈতিক পিতা বঙ্গবন্ধুর বাড়ির মসজিদের কেবলাও ভুল—উত্তর-পশ্চিমে। যতক্ষণ বেঁচে আছি কেবলা নিয়ে বাঁচব, একচুল নড়চড় হতে দেব না। মুক্তিযুদ্ধের সময় শিয়ালের মতো পালাইনি।
বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর ইঁদুরের গর্তে লুকাইনি। এত বছর বলে এসেছি, যা খুশি তাই করবেন তা হতে পারে না। আজ জনতা জেগেছে, বাচ্চা ছেলেগুলোকে নষ্ট করতে চাচ্ছেন কেন? ভ্রষ্ট কমিউনিস্টের বাংলাদেশে ঠাঁই হবে না। মাঝেসাজে তারা চমক দেখাতে পারেন। আল্লাহ-রসুলে বিশ্বাস করেন না আবার জানাজা পড়তে গেলেন কেন? তাও আবার চার তকবিরের জানাজা তিন তকবিরে পড়াতে গেলেন? এজন্য আর কেউ যদি প্রতিবাদ না করে না করুক, আমি প্রতিবাদ করছি, নিন্দা করছি।
এত বড় একটা জাগরণ, কিছু লোক তাদের স্বার্থে পরিচালিত করতে চাচ্ছে—এটা হতে দেয়া যায় না। শাহবাগ থেকে কেন কথা উঠবে আসিফ নজরুল, পিয়াস করীম, মাহমুদুর রহমানকে হত্যা করা হবে—তারা এমন কী করেছেন? সত্য কথা বললে কেন এত আঁতে ঘা লাগবে? ’৭১-এর রাজাকার ও তার দোসররা হত্যা করেছিল, আজও তার বিচারের দাবিতে জনতা সোচ্চার। আপনারা কাউকে সঙ্ঘবদ্ধভাবে হত্যা করলে তার বিচার হবে না? নিশ্চয়ই হবে। [link|চিরদিন কারও সমান নাহি যায়। ঊনসত্তুরে এমনই উত্তাল জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানে।
সে ছাত্র গণজাগরণে নেতৃত্ব ছিল, কর্তৃত্ব ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। তখন অগণতান্ত্রিক পাকিস্তান ছিল। কিন্তু তবু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচিত ছাত্র সংসদ ছিল। সারা দেশের ছাত্র-যুবকের নেতৃত্ব করত সেসব ছাত্র সংসদ। ’৬৯-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলার আলীগড় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ, মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজ, নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজ, বাংলার দ্বিতীয় আলীগড় সাদত্ মহাবিদ্যালয়ে—এদের নেতৃত্ব ছিল, কর্তৃত্ব ছিল।
একঝাঁক তরুণ তখন আলোর দিশারি হয়ে দেশকে পথ দেখিয়েছে। যুবকের মধ্যে সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মণি, আ. রাজ্জাক, কে.এম. ওবায়দুর রহমান, আবদুর রউব, খালেদ মহম্মদ আলী, ফেরদৌস কোরাইশী, মোজাহেরুল হক বাকী, তোফায়েল আহমেদ, আ.স.ম আবদুর রব, আ. কুদ্দুস মাখন, নুরে আলম সিদ্দিকী, লতিফ সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ, আল মোজাহিদী—কাকে রেখে কার কথা বলব? লতিফ সিদ্দিকী যখন বক্তৃতা করতেন সেই সভায় হ্যালো হ্যালো করে গর্ববোধ করতেন বর্তমান স্পিকার বা মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। এর পরের স্তর আমাদের কথা বাদই দিলাম। সেই ছাত্র গণজাগরণ বিজয়ের মুখ দেখেছিল। বাংলাদেশ সৃষ্টির সেইসব জীবিত মহানায়করা আজ সবাই অবহেলিত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত।
একজনও নেই, যে যথাযথ সম্মান, গুরুত্ব নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব পেয়েছেন বা পাচ্ছেন। ’৪৯-এ যেদিন আওয়ামী লীগ গঠিত হয় সেদিন মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ও জননেতা শামসুল হক বাদে বাকি সবাই ছিলেন শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের তুলনায় নবীন। আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের দিন বিনা নোটিশে সে সমাবেশে শেরেবাংলা গিয়েছিলেন। তাকে কী যে সমাদর করা হয়েছিল, কী যে গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল—তা কল্পনার সীমারও বাইরে। যা নিয়ে আজ এত তোলপাড় সেই মুক্তিযুদ্ধে নিজে মুক্তিযুদ্ধ করেছি এবং দেখেছি।
’৭০-এর নির্বাচনের পর বাংলাদেশের কাক-পক্ষীরাও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে সমর্থন জানিয়েছিল। সেখানে সব ছিল। পি.ডি.পি. মুসলিম লীগ ছিল, নেজামে ইসলাম ছিল, এমনকি এখনকার নিন্দিত জামায়াত, কেউ বাদ ছিল না। আন্দোলন করে করে আমরা যখন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলাম তখন মুসলিম লীগের অনেক প্রবীণ নেতা হুট করে সভায় এসে গেলে তাদের সম্মান করতে করতে আমাদেরই জায়গা থাকত না। কতদিন থেকে বলছি, রাজাকার ছাড়ুন, স্বাধীনতা বিরোধীদের ত্যাগ করুন, প্রাপ্য শাস্তি তাদের পেতে দিন, কেউ শুনল না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জগতের সব বুদ্ধি রাখেন। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে যেদিন খালেদা জিয়ার বিএনপি হটাও আন্দোলনে প্রেস কনফারেন্স করলেন, সে সময় আমি আওয়ামী লীগের এক নম্বর সদস্য ছিলাম। ওয়ার্কিং কমিটির উপস্থিত ৩৪ জনের মধ্যে ৩১ জন আপত্তি করেছিলাম। কিন্তু তারপরও নিজামী, কাদের মোল্লার সঙ্গে প্রেস কনফারেন্স করে তিনি খালেদা জিয়া বিরোধী আন্দোলন করেছিলেন। এমনকি অনেক বাজে কথা বলেছিলেন।
সেদিন যদি জামায়াত আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চড়ে খালেদা জিয়াকে হটাতে না পারত তাহলে বিএনপির ঘাড়ে চড়ে রক্তের দামে কেনা পতাকা রাজাকারের গাড়িতে উড়ত না। কি প্রয়োজন ছিল বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে গোলাম আজমের দোয়া চাওয়ার? এগুলো তো ইতিহাস। এগুলো বদলাব কী করে? বর্তমান গণজাগরণের যেমন ভালো দিক আছে, কোনো খারাপ দিকও কি নেই? শুরুতেই বলেছি নেতৃত্ব-কর্তৃত্বহীন আন্দোলন একেবারে অর্থহীন। কেউ কাউকে মানবে না, কেউ কারও কথা শুনবে না তাহলে সমাজের নিরাপত্তা কোথায়? এ যদি সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্ত জনতার হয়, তাহলে নেতৃত্ব আর কর্তৃত্ব কার? আর তলে তলে যদি মহাজোটের হয় তাহলে সাজেদা চৌধুরীর মতো অমন শ্রেষ্ঠ নারী মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছিত, অপমানিত, অপদস্থ হবেন কেন? গণজাগরণের মঞ্চ তো মুক্তিযুদ্ধের মঞ্চ। দলমতের ঊর্ধ্বের মঞ্চ।
রাজাকারের ফাঁসি চাইলে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান কোথায়? রাজনীতিকদের সম্মান কোথায়? যতকাল রাষ্ট্র থাকবে ততকাল রাজনীতি থাকবে। যা গ্রামের অক্ষর-জ্ঞানহীনেরাও বুঝে, আর ব্লগাররা বুঝে না, তা কি হয়? আর আমি যে যাব কিন্তু কী করে যাব? আমি যে রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী! রাজাকার হয়ে রাজাকারের ফাঁসি চাই কী করে? সচেতন নাগরিকরা একজনও কি বলেছে, কাদের সিদ্দিকীকে রাজাকার বললে স্বাধীনতাকে অপমান করা হয়? কেউ বলেনি। রাজনীতির যেখানে প্রবেশ নিষেধ সেখানে গণস্বার্থের গ্যারান্টি কোথায়? আর রাজনীতিকদের এত খেলো কে করেছে? যদি বলি দুই দলের দুই প্রধান নেত্রী এতে সমভাবে দায়ী, কী জবাব দেবেন তারা? শত শত ফোন আসছে। কেউ কেউ বাড়ি পর্যন্ত ছুটে এসেছে, শাহবাগে যেতে হবে যাওয়া উচিত। কিন্তু কী করে যাই? নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর মতো শহুরে যোদ্ধা যখন মাতাব্বর তখন ওরকম ধনী যোদ্ধার সমাবেশে আমরা নগণ্যরা যাই কী করে? আমি ভীরু, কাপুরুষ, দালাল জেনারেল শফিউল্যাহকে একেবারেই পছন্দ করি না।
দেশের মানুষ এক সময়ের হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মন্ত্রী এ.কে. খন্দকারকে শাড়ি পরা কাজের বুয়ার চেয়েও নিম্নমানের মনে করে। তারপরও একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার হিসেবে তাদের সম্মান আমার কাছে সম্রাটের চেয়ে বেশি। তারা কি মর্যাদা পেয়েছেন সেখানে? তাদের কি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে? আর ওই মঞ্চ কী বলে? অত আলগা বাঁধনে যুদ্ধ হয়? অটুট বাঁধন কোথায়? রসুনের কোয়া যখন খুলে বা ছুটে যায় তখন ঝরঝর করে সব ছড়িয়ে পড়ে। বেঁধে রাখার নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব কই? আর একদিনে তো সব হবে না। দূর থেকেও তো জনতার আন্দোলনকে সমর্থন করা যায়।
আমরা না হয় তাই করলাম। মাত্র কয়েক বছর আগে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে মোটামুটি সুগঠিত একটি আন্দোলন হয়েছিল। বিরোধী দলের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বাড়িতে বসে আলাপ-আলোচনা করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গোলাম আজমকে ফাঁসিযোগ্য অপরাধী বলে সরকারের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। তখন ছিল বিএনপি সরকার। তারা ফাঁসি দেবে কেন? কী দায় পড়েছে তাদের? বরং তারা তাকে জোটে নিয়ে দ্বিতীয়বার দুর্দান্ত প্রতাপে ক্ষমতায় এসেছিল।
ফাঁসির দায় সরকারের উপর চাপানোর পর মানুষ বড় আশা করে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল। কই সেদিন তো আওয়ামী লীগ ফাঁসি কার্যকর করেনি? বরং ১৫-১৬টি আসন নিয়ে জামায়াত দুর্দান্ত প্রতাপে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেছে। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে জাহানারা ইমামের করুণ মৃত্যু আমি কি দেখিনি? আজ যারা রাষ্ট্র চালাচ্ছে তারা আন্দোলন যাতে বেশিদূর যেতে না পারে, তিনি যাতে বিকল্প নেতা হয়ে না যান তার জন্য কত ষড়যন্ত্র করেছেন। সে তো কারও অজানা নয়। এই তো সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ কাউন্সিলে তোফায়েল আহমেদের মতো নেতাকে এতিমের মতো বসে থাকতে হয়েছে।
যে ভ্রষ্ট কমিউনিস্ট লেনিন প্রেসিডিয়ামে স্থান পেয়েছেন তিনি বলেছিলেন, ‘এই তোদের বঙ্গবন্ধুকে টুকরো টুকরো করলাম। ’ বঙ্গবন্ধুর জীবিতকালে যিনি ছাগল-ভেড়া-গরু-মহিষের চামড়া দিয়ে জুতো পরতেন না, সব সময় বঙ্গবন্ধুর চামড়ার জুতো পরতেন, ডুগডুগি বাজাতেন, তিনি এখন বঙ্গবন্ধুর কন্যার খুবই আস্থাভাজন প্রিয় মহামন্ত্রী। দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে যেভাবে কথা বলেন, বাংলার মানুষ এখন ওসব দাঁত খিঁচানি থেকে মুক্তি চায়। তারই আলামত শুরু হয়েছে শাহবাগের গণমঞ্চে। আমি আন্তরিকভাবে এর সফলতা কামনা করি।
এ আন্দোলন কেউ বিপথগামী করতে চাইলে সর্বোতভাবে তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করব। কিন্তু আবার রাজাকারের ফাঁসি চাইলেও জননেত্রী না বলে বসেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে এসব হচ্ছে! কারণ তিনি তো সবকিছুতেই যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকানোর অজুহাত খোঁজেন। এভাবে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় বেশি সময় থাকা যায় না। এর একটা এসপার ওসপার হওয়াই দরকার। কিন্তু রাজনীতি বিবর্জিত নেতৃত্ব কর্তৃত্বহীন কোনো আন্দোলন অতীতে সফল হয়েছে তার নজির কোথায়? সেজন্য অবশ্যই ইস্পাতকঠিন সুদৃঢ় নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।
সংগঠন এবং নেতা থাকতে হবে। বেশি সম্মান পাওয়ার জন্য কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। আল্লাহ আমাকে প্রচুর দিয়েছেন। হঠাত্ কিছু পেতে চাই না। হবু চন্দ্র রাজার গবু চন্দ্র মন্ত্রী হওয়ার কোনো বাসনা নেই।
দান করা নেতৃত্বের শখ কোনোদিনই ছিল না। জীবনে যা কিছু পেয়েছি দুঃখ-কষ্ট করে পেয়েছি। কারও দয়ার দান নেইনি। কাউকে অনুকরণ করিনি। বঙ্গবন্ধুকে পাগলের মতো ভালোবাসতাম।
তাই তার আদেশ-নির্দেশ সব সময় শিরোধার্য করেছি। জয় বাংলা আমাদের জাতীয় রণহুঙ্কার। রাম ছাড়া সীতা, লাইলী ছাড়া মজনু, রজকিনী ছাড়া চণ্ডীদাস, শিরী ছাড়া ফরহাদ যেমন, তেমনি বঙ্গবন্ধু ছাড়া জয় বাংলার কোনো মানে হয় না। যে জয় বাংলা এক সময় ছিল বাঙালির সম্পদ, বর্তমানে তা হাসিনা লীগ হাইজ্যাক করেছে। যে জয় বাংলা না বললে আমরা বুকে চাপবোধ করি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করে আজ ১৩ বছর মুক্তকণ্ঠে জয় বাংলা বলতে পারি না।
সেই জয় বাংলা যখন শাহবাগের গণজাগরণ ষ্কয়ারে বারবার শুনতে পাই, তখন অবশ্যই মনটা আনন্দে ভরে উঠতে চায়। কিন্তু স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর নাম যখন একবারও শুনি না তখন মনটা বড় ভারি হয়ে আসে। ব্লগার রাজীব হায়দার দুষ্কৃতকারীর হাতে নিহত হয়েছে। তাতে শাহবাগ উত্তাল। এমন হওয়াই স্বাভাবিক।
কোনো সতীর্থ জীবন হারালে সহযোদ্ধাদের এমন করেই বুক ফাটে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজীবের বাড়ি গেছেন সান্ত্বনা দিতে। বলেছেন, ‘এদেশে জামায়াতের রাজনীতি করার অধিকার নেই। ’ আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে তার মুখে কথাটি মানালেও, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মানায় না। মানুষ শঙ্কায় আছে এসব করে গণতন্ত্রকে হত্যা করতে কেউ কৌশল আঁটছেন কিনা! বয়স তো আর কম হলো না, এখন যাওয়ার সময়।
যে সময় মানুষ লোভে ডুবে থাকে, চোখে রঙিন চশমা পরে তখনই মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য মনে করেছি। আজ মরণের ভয় কী? তাই আত্মার তাগিদেই কথাগুলো বলছি। শুধু পশুর মতো বেঁচে থাকার জন্য ঈমান আমান সবকিছু কেন বিসর্জন দেব। ১৪ তারিখ টুঙ্গিপাড়া গিয়েছিলাম। মাওয়ার ওপারে ফেরি ঘাটে নামতেই ৩-৪ জন বৃদ্ধ বড় উদ্বেগ নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘বাবা, নামাজ পড়তে মসজিদে নাকি যেতে পারব না!’ আমি থমকে গিয়েছিলাম।
বুক ফেটে চৌচির হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মানুষের এই শঙ্কা নিয়ে কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই। আওয়াজ উঠেছে, ইসলামী দল বাতিল করতে হবে। কিন্তু হিন্দুর দল থাকবে, খ্রিস্টানদের দল থাকবে—মুসলমানের দেশে মুসলমানের দল থাকবে না—কেমন সব আজব কথা! যারা ধর্মকর্ম মানে না, তারা তাদের মতো থাকুন। যাদের আল্লাহ আছে, রাসুল আছে তাদের কেন এত গালাগাল।
ব্লগার রাজীব মারা গেছে, তার জানাজার যদি দরকার হয় তাহলে কেন একটা পবিত্র স্থানে জানাজা করা হলো না, শাহবাগ চত্বরে কেন? এক নাগাড়ে ১২ দিন জনসমাগম হলে পায়খানা, পেশাব, থু থু ফেলে জায়গা কি নোংরা করা হয়নি? নোংরা জায়গায় নামাজ চলে না। জানাজা কোনো মশকারি নয়, জানাজা নামাজ ফরজে কেফায়া, চার তকবিরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। কোন সে টেডি ইমাম তিন তকবিরে নামাজ শেষ করল? নামাজ পড়বেন অজু করবেন না, ক’জন ওখানে অজু করতে পেরেছিল? নারী-পুরুষ, হিন্দু, মুসলমান একসঙ্গে জানাজা হয়? হয় না। কেন অমন হলো? আপনাদের এত সামর্থ্য, এত ক্ষমতা—জায়গাটা একটু ঝাড়পোছ করে নিতেন, দয়া করে সবাই অজু করে নিতেন। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের জানাজা থেকে আলাদা করতেন।
যত আধুনিকই হন পবিত্র ইসলামে পুরুষের পাশে কোনো নারীর অবস্থান অনুমোদন করে না। তুমুল জোয়ার চলছে, তাই কেউ কথা বলে না। অনেক মুসলমানেরও কেবলা ঠিক নেই, ইমান দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমার রাজনৈতিক পিতা বঙ্গবন্ধুর বাড়ির মসজিদের কেবলাও ভুল—উত্তর-পশ্চিমে। যতক্ষণ বেঁচে আছি কেবলা নিয়ে বাঁচব, একচুল নড়চড় হতে দেব না।
মুক্তিযুদ্ধের সময় শিয়ালের মতো পালাইনি। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর ইঁদুরের গর্তে লুকাইনি। এত বছর বলে এসেছি, যা খুশি তাই করবেন তা হতে পারে না। আজ জনতা জেগেছে, বাচ্চা ছেলেগুলোকে নষ্ট করতে চাচ্ছেন কেন? ভ্রষ্ট কমিউনিস্টের বাংলাদেশে ঠাঁই হবে না। মাঝেসাজে তারা চমক দেখাতে পারেন।
আল্লাহ-রসুলে বিশ্বাস করেন না আবার জানাজা পড়তে গেলেন কেন? তাও আবার চার তকবিরের জানাজা তিন তকবিরে পড়াতে গেলেন? এজন্য আর কেউ যদি প্রতিবাদ না করে না করুক, আমি প্রতিবাদ করছি, নিন্দা করছি। এত বড় একটা জাগরণ, কিছু লোক তাদের স্বার্থে পরিচালিত করতে চাচ্ছে—এটা হতে দেয়া যায় না। শাহবাগ থেকে কেন কথা উঠবে আসিফ নজরুল, পিয়াস করীম, মাহমুদুর রহমানকে হত্যা করা হবে—তারা এমন কী করেছেন? সত্য কথা বললে কেন এত আঁতে ঘা লাগবে? ’৭১-এর রাজাকার ও তার দোসররা হত্যা করেছিল, আজও তার বিচারের দাবিতে জনতা সোচ্চার। আপনারা কাউকে সঙ্ঘবদ্ধভাবে হত্যা করলে তার বিচার হবে না? নিশ্চয়ই হবে।
কেন অজু ছাড়া জানাজা? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।