ঘাটের এই পারে বসে আছি ঐ পারে যাওয়ার অপেক্ষা। মুসাফিরের ধূলোমাখা ব্লগ
গত সপ্তাহে আমি আর আমার ফ্রেন্ড জেরোম এক চাইনিজ রেস্টুরেন্টে গেছি লান্চ করার জন্য। খাবার অর্ডার করলাম। বললাম টু গো হবে। যাতে অফিসে ফিরে লান্চ সারতে পারি।
চায়নিজদের ইংরেজিরতো জগৎশেঠ অবস্থা। অর্ডার করে বসে আছি, সুন্দরি চায়নিজ ওয়েটার মেয়েটি কাছে এসে বললো-
হেই ডু ইউ ওয়ান এ্যা ফাক?
আমি বলি হায় হায় এই মেয়ে কয় কি?
জেরোম বললো, নট নাউ। উই আর ওকে।
মেয়েটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। আমি বললাম-জেরোম মেয়েটি কয় কি?
জেরোম বললো- বুঝ নাই কি বলেছে? সে বলেছে- আমাদের আসলে খাবারের সাথে কোনো ফর্ক লাগবে কিনা? চায়নিজরা মনে হয় আর উচ্চারণ করতে পারেনা।
এবার এটা শুনেন। চট্টগ্রামের ভাইয়েরা এটাতে জটিল মজা পাবেন।
আটলান্টায় চট্টগ্রামের একজনকে ঢাকার এক ভাই টেলিফোনে বলছেন-
ভাই আপনি ফোন দিলে রাত বারটার পর ফোন দিবেন।
এরপর চট্টগ্রামের ভাই-রেগে গিয়ে বলছেন।
ঐ মিয়া কথা সাবধানে বলেন।
আমি রাতবারটার পর কেনো আপনাকে ফোন দিতে যাবো।
ঢাকার ভাই এরপর বলছেন-তাইলে আপনি আমাকে কখন ফোন দিবেন?
চট্টগ্রামের ভাই- কী যাতা বলেন। আমি কেন আপনাকে ফোন দিবো। আর আপনি আমাকে কি মনে করেন?
এরপর ঢাকার ভাই, আরে ভাই কাজ থেকে ফিরতে রাত বারটা হয়ে যায়। তখন বাসায় ফ্রী থাকি।
তাইতো বলছি ফোন দিলে রাত বারটার পরে দিলেই ভালো হয়। এতে এতো রাগ করার কি হলো?
চট্টগ্রামের ভাই- আরে রাগ করবোনা মানে? আপনার ফোন দেয়ার ইচ্ছে থাকলে আপনি দেন গিয়ে যান। যারে খুশি তাকে ফোন দেন। ইচ্ছেমতো দেন।
ঢাকার ভাই- তাইলে বলেন আমিই আপনাকে ফোন দিবো।
কখন দিলে আপনার সুবিধা হয়।
চট্টগ্রামের ভাই-আপনার ফোন আপনি যারে ইচ্ছে তাকে দেন। আমাকে বলছেন কেনো? মিয়া চরিত্র ঠিক করেন। এরপর লাইন কাট।
ঢাকার ভাই বুঝলোনা এতে চরিত্রের কী হলো? চট্টগ্রামের ভাই চিন্তা করলো মানুষের এতো বদচরিত্র হয় কেমনে?
এরপর চট্টগ্রামের ভাই ঢাকার ভাইকে ফোন করে বললেন- ভাই একটু মজা করলাম।
নেক্সট টাইম ফোন না দিয়ে বলবেন রিং করার জন্য। আমাদের চট্টগ্রামে ফোন দেয়া মানে কিন্তু অন্য জিনিস বুঝায়
এবার এটা শুনেন। কী মারাত্মক অবস্থারে ভাই।
গতকাল জুমার নামাজের পর এক বাংলা দোকানে বসে গুলতানি চলছে।
এমন সময় সিলটি এক ভাই খুব ব্যস্ত হয়ে দোকানে ঢুকলেন।
একেবারে রেগে গিয়ে সিলটি এ্যাকসেন্টে ( মনে হয় পড়ালিখা তেমন নাই, কথা শুনে মনে হলো)দোকান মালিককে বলছেন-
কিতা বা ভাই, অতো ছোটমোটো এক পেনিস লইয়া কাম চালাইতায় ফারবানি।
আমিও হা করে চেয়ে আছি, দোকানের মালিকও হা করে চেয়ে আছে। লোকটি বলে কি? এতো ছোট পেনিস মানে? কার পেনিস ছোট!!! কয়কি?
দোকান মালিক বলছে- ভাই বুঝিনাই কি বলছেন?
সিলটি ভাই এবার রেগে গিয়ে বলছে-হেদিন আইলাম তোমার দোকানও, তুমি দোকানও নাই। গোয়া চাইলাম, ছোট পেনিসে খয় দোকানও গোয়া নাই। এরপর খইলাম তে গোয়ামারা দেও ।
হে খয় নাই।
আমি ঘটনা বুঝে ফেলেছি। ভিতরে ভিতের হাসি ভূমিকম্পের মতো বের হয়ে আসতে চাইছে। কিন্ত পারছিনা। যদি বেচারা মাইন্ড করে।
উনি পেনিস বলতে স্প্যানিস ছেলেটাকে বুঝিয়েছেন। এরা সাধারণত সর্ট হয়। আর প্রায় বাংলা দোকানে এরা কাজ করে। আর সিলেটে সুপারিকে গোয়া বলে। আর গোয়ামারা বলতে ভাইয়ে বুঝিয়েছেন গুয়ামুরি।
একধরণের জিনিস যা পানের সাথে খাওয়া হয়।
যে ঘটনা আমার ইজ্জতকে একেবারে প্রথমে ফালুদা এর পর ফালুদাকে একেবারে ফার্দাফাই করে দিয়েছিলো সেটা শুনেন।
হাজি সেলিমের এক ক্লাস মেট মাহবুবভাই কিছুদিন আমার সাথে ছিলেন। উনার পড়ালিখা ক্লাস থ্রি অথবা ফোর পর্যন্ত। কিন্তু উনি বিশাল গর্বের সাথে বলেন- উনি ফাইভ পাশ দিয়েছেন।
যাইহোক, একবার উনাকে নিয়ে আমি একটা বার্থডে পার্টিতে গেছি। সুন্দরী ললনাদের ভিড়। আড্ডা চলছে।
তো এক সুন্দরী ললনা এসে মাহবুব ভাইকে বললেন- আপনাকে চিনলাম না। আপনিকি এদিকেই থাকেন?
মাহবুব ভাই বলা শুরু করেছেন- আরিফভাই কয়েকদিন আগে খুব সুন্দর একটা কনডম কিনেছেনতো .।
আমি তাড়াতাড়ি মাহবুবভাইর কথা আটকে দেই। হায় হায়!!মাহবুব ভাই কনডমের কথা কি বলে?
এমনিতেই রুপবতি মেয়ে তারওপর এতো মানুষের মাঝে কনডমের কথা শুনে বেচারীর চেহারা পুরো লাল। সবাই হা করে আমার দিকে চেয়ে আছে। আমিও চিন্তা করি, মাহবুব ভাই কয় কি?
মাহবুব ভাই কথা শেষ করে। ঐ কনডমেই আমি আরিফ ভাইয়ের সাথে থাকি।
এবার আমার ঐ সময়ের অবস্থাটা বুঝেন।
মাহবুব ভাইয়ের কথার পিটে আমি বলি-হ, মাহবুব ভাই আর আমি আমার নতুন কনডোমিনিয়ামটাতেই থাকি। কনোডোমিনিয়ামার সাথে মাহবুব ভাই কনডমকে গুলিয়ে ফেলেছেন। ফেরার পথে আমি মাহবুবভাইকে বলি, মাহবুব সত্য করে বলেন- আপনি কি পাশ? আর আপনাকে আমেরিকা আসার ভিসা দিলো কে?
মাহবুব ভাই বলে, হাজী সেলিমের বইয়ে মুতে দিয়ে ইস্কুল ছাড়ছি। মনে হয় সেই বইয়ের অভিশাপ লাগছে।
আর তিন ক্লাসের পর আগাতে পারিনাই। তয় একটা সাদা লম্বা মাইয়া আমেরিকার ভিসা দিছে।
ঘটনা কিভাবে প্যাচ খেলো এবার এইটা দেখেন।
মুয়াজ্জিন সাহেব বললেন- ভাইজান- পেচবুক জিনিসটা কি?
আমি বললাম , হুজুর এইটা একটা বিশেষ সামাজিক যোগাযোগ রাখার ব্যবস্থা। সবার সাথে যোগাযোগ রাখা যায়।
তবে একটা একাউন্ট থাকতে হবে।
হুজুর বললেন- পূবালী ব্যাংক কদমতলি শাখায় একটা একাউন্টতো অনেক আগে খোলা আছে। তয় নাম্বার ভুলে গেছি।
বললাম, হুজুর । পাশে বসেন আপনাকে আরেকটা একাউন্ট খুলে দেই।
হুজুর বলেন- তাহলে কি বাসায় গিয়ে ভোটার আইডি কার্ডটা নিয়ে আসবো, আর কি কি লাগবো বলে দেন। সব একসাথে নিয়া আসি।
আমি বললাম, আপনি পাশে বসেন। আর কিছু লাগবো না। শুধু আপনার একটা ছবি লাগবে।
যাতে ছবি দেখে সবাই আপনাকে চিনতে পারে।
হুজুর বলেন, ছবিতো সাথে নাই।
আমি বললাম, আমি ফোন দিয়ে ব্যবস্থা করবো । চিন্তার কিছু নাই।
হুজুরের একাউন্ট খোলা হলো।
আইডি পাসওয়ার্ড শিখিয়ে দিলাম। প্রাইমারি একটা ধারণা দিয়ে জিগ্গাসা করলাম কেউ আছে কিনা।
হুজুর বললেন- বাড়ির মালিকের ছেলে মেয়ের মুখে পেচবুকের কথা শুনেছেন।
ওদের নাম খুঁজে আমি রিকো পাঠালাম। বললাম, আপনি আমার এখানে এসে ফেসবুক ব্যবহার করবেন।
ছবি আপলোড করবেন ইত্যাদি।
পরেরদিন সকালেই হুজুর আসলেন। দারুন আগ্রহ। ফেবুতে লগইন করলেন। দেখলাম বাড়ির মালিকের ছেলেমেয়ে উনাকে এ্যাড করেছে।
এরপর হুজুর বললেন-ডেইলি আপনাকে এসে ডিস্টার্ব নিমু। ক্যামন লাগে।
পরেরদিন আমার একটা পুরানো মোবাইল ফোনের সবকিছু রেডি করে দিয়ে হুজুরকে দিয়ে বললাম, হুজুর এটাতে সবকিছু করতে পারবেন।
কয়েকসপ্তাহ আর হুজুরের সাথে কোনো দেখা নাই। শুনলাম হুজুর আর এলাকায় নাই।
একদিন দেখা হলো- শহরের মোড়ে। বললাম , হুজুর ঘটনা কি?
হুজুর বললেন- এই পেচবুক আমার চাকরি খাইছে।
আমি বললাম , কন কি?ঝেড়ে কাশেন।
বললেন, বাড়ির মালিকের মাইয়ার সাথে মাজে মাজে পেচবুকে চেট হতো।
আমি বললাম ভালোই তো।
কথা হয়েছে। ভালোবাসাতো আর হয়নাই। বললেন, সেখানেইতো পেচ লেগেছে।
হুজুর প্লিজ ঝেড়ে কাশেন।
হুজুর বলেন- এই কেমন আছো? কি করো ইত্যাদি আলাপ সালাপ হতো।
একদিন সকালে মেয়ে মেসেচ দিলো - হুজুর চুম্মা মোবারক।
আমি লিখলাম- কি বললা?
মেয়েটি আবার বললো- কেন বুঝেন নাই। চুম্মা মোবারক। চুম্মা মোবারক।
বললাম, সত্য করে কইতাছো-
মাইয়া কয়, জ্বি মিথ্যা কথা বলার কি আছে।
চুম্মা মোবারক।
আমি বললাম, এই কথা আর কয়জনরে কইছো।
মাইয়া কয়, এই কথা আর কাউরে কইনা। শুধু আপনারে কই।
তাইলে আবার ঠিক ঠিক কও- মাইয়া কয়- চুম্মা মোবারক।
আমার দিলে বাড়ি বাড়লো। দিলের ভিতর ইশক পয়দা হলো। এখন কি কায়দা করলে কি ফায়দা হবে বেপক টেনশনে পড়লাম। দিলের বাড়ি কসমখোদা শুনা যায়।
সাহস কইরা নিজেও লিখলাম- তয় তোমারেও আমার দিল থেকে চুম্মা মোবারক।
এ মেসেচ পাইয়া, মাইয়া কয়। আপনার এতো বড় সাহস। পরের ঘটনা খুবই সংক্ষিপ্ত। পেচবুকে আমি আর মাইয়ারে পাইনা। কোনোকিছু বুঝাইবারও আর চান্স পাইলাম না।
আমি একটা জিনিস শিউর হওয়ার জন্য বললাম, হুজুর ঘটনার দিন কি বার ছিলো, মনে আছে?
হুজুর বললেন, এমন একটা ঘটনা মনে থাকবোনা। সেদিন শুক্রবার ছিলো।
যা বুঝার বুজে ফেললাম। একটা "চ"ই যত সর্বনাশ ঘটিয়েছে। সামহাউ
মেয়েটা হয়তো লিখতে চেয়েছিলো জুম্মামোবারক- হয়েগেছে চুম্মামোবারক।
এবারেরটা একেবারে অন্যরকম। শিশুরার আসলেই শিশু।
আমেরিকায় বাবা মায়েরা খুবই চেষ্টা করেন বাচ্চাদের বাংলা শিখানোর জন্য। আমিও কয়েকদিন একটা বাংলাস্কুলে ওদের বাংলা শিখানোর চেষ্টা নিয়েছিলাম। এমরি ভার্সিটির একট অধ্যাপক ভাই।
মাঝে মাঝে উনার বাসায় যাই। আপা ঘরের দেয়ালে দেয়ালে বর্ণমালা, জাতীয় সংগীত, কবি জসীম উদ্দীন, কবি নজরুলের কবিতা, গান ইত্যাদি প্রিন্ট করে রেখেছেন যাতে উনার ছেলে মেয়েরা দেখে দেখে শিখতে পারে। শিখার আগ্রহ বাড়ে।
বড় মেয়েটা একটু একটু বানান করে পড়তে শিখেছে। আমরা ডাইনিং টেবিলে বসে গল্প করছি।
মেয়েটা পড়ে আর হাসে। পড়ে আর হাসে।
পড়তেছে- ফাল্গুনি মুখে পাদ দেয়। ফাল্গুনি মুখে পাদ দেয়।
আমার আগ্রহ বাড়লো - ওর পাশে গিয়ে দেখলাম।
টেবিলের ওপর একটা বই। মা মনে হয় পড়ে টেবিলের ওপরে রেখেছিলেন। মেয়েটা সে বই দেখে বানান করে পড়ছে।
আমি দেখলাম- বইয়ের লেখিকার নাম-"ফালগুনি মুখোপাধ্যায়। আর তা নতুন বানান শিখা মেয়েটির জন্য হয়ে গেছে- ফাল্গুনি মুখে পাদ দেয়।
এইটাতো পাদ পর্যন্তই ছিলো। কয়েকদিন পরের ঘটনা আরো ভয়াবহ।
পরের রবিবার আবার উনাদের বাসায়।
মা মেয়েকে স্কুল থেকে আনতে গেছেন। ভাই আর আমি বসে বসে গল্প করছি।
ভাই কাব্য চর্চাও করেন। নিজে অবসরে টুকটাক লিখালিখা করেন ।
পাশের রুম থেকে উনার ছোট ছেলে সুর করে করে পড়ছে-
"আকাশে হাগিলো তারা, আকাশে হাগিলো চাঁদ
ঘুমাইয়া রহিয়াছো খোকা, হাগিবেনা এই রাত?
ভাইকে বললাম, ভাই ছেলে সুর করে করে এসব কি পড়ে?
ভাই খুবই আনন্দিত হয়ে বলেন - নিজের স্বরচিত কবিতা ছেলেকে দিয়ে মুখস্ত করাচ্ছি ভাই।
বললাম,। আপনি লিখেছেন এই কবিতা?
কেনো, তোমার পছন্দ হয়নি?
আমি বললাম অবশ্যই পছন্দ হয়েছে।
কিন্তু ছেলে কি পড়ছে শুনছেন?
বাপ কিন্তু উনার ছেলের কন্ঠ ঠিকঠাক শুনছেন। বললেন- কেন ছেলেতো ঠিকই বলছে-
"আকাশে জাগিলো তারা, আকাশে জাগিলো চাঁদ
ঘুমাইয়া রহিয়াছো খোকা, জাগিবেনা এই রাত?
ইতোমধ্যে মা এসেছেন। ছেলে পাঠের জোর আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
মা বললেন- কি এই দুপুর বেলা আকাশে পাতালে মিলে হাগিলো হাগিলো শুরু করেছিস?
তবে এই সুদূর আমেরিকায় বসে ভাষার প্রতি উনাদের দরদ, উনাদের প্রেম, সন্তানদের ওয়ালে ওয়ালে বাংলা গান, বাংলা কবিতা , বাংলা স্বরবর্ণ প্রিন্ট করে লাগিয়ে দিয়ে ভাষা শিখানোর প্রচেষ্টা মুগ্ধ করেছে। বুঝলাম দেশের মানুষগুলো যতই দূরে থাকুক সবার বুকে থাকে একটা হৃদয়ভরা বাংলাদেশ।
পরবাসে আমরা দেশের বাইরে থাকে কিন্তু দেশ একটা মুহুর্তের জন্যও আমাদের হৃদয়ের বাইরে থাকেনা।
সবাইকে ভাষা দিবসের লাল সালাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।