মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত।
‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রাম ও অসামপ্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতি এগিয়ে নাও, বাম বিকল্প শক্তির সমাবেশ গড়ে তোল’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৮ম কংগ্রেস ১৪-১৮ নভেম্বর ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে। অসামপ্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতি এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে এগিয়ে চলছে এই কংগ্রেসের সকল কাজ।
মহানগর নাট্যমঞ্চে সাজানো হবে বিশাল মঞ্চ। থাকবে বরণ তোরণ।
লাল পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুনে সজ্জিত হবে ওই প্রাঙ্গন। উদ্বোধনী সমাবেশের আগে শিল্পীরা গাইবেন জাতীয় সংগীত। পার্টির বিপ্লবী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তুলবেন জাতীয় পতাকা এবং পার্টি পতাকা। স্লোগানে মুখরিত হবে গুলিস্থানের আকাশ-বাতাস। গণসঙ্গীত শিল্পীরা গাইবেন গণসংগীত।
জাতীয় নেতৃবৃন্দ দিকনির্দেশনামূলক বক্তৃতা রাখবেন। ভ্রাতৃপ্রতীম পার্টিগুলোর নেতৃবৃন্দ শুভেচ্ছা বক্তব্য দিবেন। আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃপ্রতীম কমিউনিস্ট ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃবৃন্দ জানাবেন সংহতি।
চারদিনব্যাপী মহানগর নাট্যমঞ্চেই অনুষ্ঠিত হবে ৮ম কংগ্রেসের অধিবেশন। সেখানে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি প্রণীত রাজনৈতিক প্রস্তাব এবং রাজনৈতিক-সাংগঠনিক এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রিপোর্ট উপর জেলা থেকে আসা প্রতিনিধিবৃন্দ আলোচনা করবেন।
এই আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী বছরগুলোর জন্য নির্ধারিত হবে পার্টির রাজনৈতিক লাইন এবং সাংগঠনিক পরিকল্পনা।
৮ম কংগ্রেসকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে প্রায় সবকটি জেলার সম্মেলন ও প্রতিনিধি সম্মেলন শেষ হয়েছে। এ পর্যন- মাদারীপুর, নেত্রকোণা, ঢাকা জেলা, সিরাজগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নোয়াখালী, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, খুলনা, জয়পুরহাট, সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা, ফরিদপুর, ঠাকুরগাঁও, ময়মনসিংহ, নড়াইল, ঝিনাইদহ, নাটোর, নীলফামারী, পাবনা, রাজবাড়ী, গাজীপুর, বরিশাল, টাংগাইল, যশোর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, ঢাকা মহানগর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, লক্ষীপুর, সিলেট, কুষ্টিয়া, মৌলভীবাজার, চুয়াডাঙ্গা, ঝালকাঠী, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, নরসিংদী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, বাগেরহাট জেলার সম্মেলন শেষ হয়েছে। বাকী জেলাগুলোর সম্মেলন ১২ নভেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ প্রচণ্ড পরিশ্রমে করে দেশের এ প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে- ছুটে চলছেন জেলা সম্মেলন সফল করতে।
এবারের ৮ম কংগ্রেসে পার্টি নতুন করে সজ্জিত হবে রাজনৈতিক, মতাদর্শিক ও সাংগঠনিকভাবে। এই কংগ্রেসে যে বিষয়টি কমরেডদের মাঝে প্রাধান্য পাবে তা হলো ‘পার্টি, পার্টি এবং পার্টি’। এ সংগ্রাম গণমানুষের মুখে হাসি ফোটাবার, তাদের দিন বদলের, ভাত-কাপড়ের, শিক্ষা-কাজের, জনগণতন্ত্রের, লাল পতাকার, সমাজতন্ত্রের।
৮ম কংগ্রেসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভ্রাতৃপ্রতীম কমিউনিস্ট ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃবৃন্দ যোগ দিবেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পার্টি তাদের প্রতিনিধি দলের নাম পাঠিয়েছে।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি-মার্কসবাদী (সিপিআইএম) এর প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড এম কে পান্ডে। সাথে থাকছেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক দেশের কথা’র সম্পাদক কমরেড গৌতম দাস এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড মৃদুল দে। ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকছেন পার্টির কেন্দ্রীয় তদন্ত- কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান কমরেড লি হং লিয়েম। সাথে থাকছেন পার্টির আন-র্জাতিক সম্পর্ক কমিশনের মহাপরিচালক কমরেড থান লি হোয়া এবং ওই কমিশনের সদস্য কমরেড লি গিয়া কিয়েন। সর্ব ভারতীয় ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকছেন পার্টির সম্পাদক ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কৃষিমন্ত্রী কমরেড নরেন্দ্রনাথ দে।
সাথে থাকছেন পার্টির সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক বিভাগের ইচার্জ কমরেড জি দেবরঞ্জন। স্পেনের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে আসছেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি এবং আন-র্জাতিক বিভাগের সদস্য কমরেড মারিয়া তেরেসা প্যান্টোজা। কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষে বাংলাদেশে কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত কমরেড সিং হং চল কংগ্রেসে যোগ দেবেন। পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে ৮ম কংগ্রেসে যোগ দেবেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ইমদাদ কাজী। এছাড়া নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (ইউনাইটেড মার্কসবাদী-লেনিনবাদী), নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী), ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) এবং ভারতের রেভ্যুলশানারী সোশ্যালিস্ট পার্টি (আরএসপি) তাদের প্রতিনিধি দল পাঠানোর কথা জানিয়েছেন।
এর বাইরেও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৮ম কংগ্রেসে শুভেচ্ছা ও সংহতি বাণী পাঠিয়েছেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টি, কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি, ইউরোপিয়ান লেফট্, সিরিয়ান কমিউনিস্ট পার্টি, ব্রাজিলের কমিউনিস্ট পার্টি, প্যালেস্টাইন পিপল্স পার্টি, অস্ট্রেলিয়ান কমিউনিস্ট পার্টি, শ্রীলংকার কমিউনিস্ট পার্টি এবং শ্রীলংকার জনবিমুক্তি পার্টি।
৮ম কংগ্রেস চলাকালীন জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত হবে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার। ‘বিশ্বমন্দা ও শ্রমিকশ্রেণী’ শীর্ষক এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করবেন পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় সভাপতি কমরেড আবুল বাশার। সেমিনারে অতিথি বক্তা থাকবেন সিপিআই(এম) এর পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড এম কে পান্ডে।
৮ম কংগ্রেস উপলক্ষে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কমিউনিস্ট আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্বদের সম্মাননা দেবে ওয়ার্কার্স পার্টি।
ইতোমধ্যে কংগ্রেসের দ্বিতীয় দফা পোস্টার ছাপা হয়ে সকল জেলায় পৌঁছে গেছে। দেশজুড়ে চলছে ব্যাপক প্রচারণা। রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে লাগানো হয়েছে ব্যানার, ফেস্টুন। ওয়ার্কার্স পার্টি দেশের গরিব-মধ্যবিত্ত-সর্বহারা শ্রেণীর সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সংগঠন। জনগণের সংগ্রামে চির আত্মনিয়োগের ব্রতে ব্রতী এই পার্টির কমরেডগণ।
তাই দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে কুপনের মাধ্যমে কংগ্রেসের অর্থ সংগ্রহ চলছে। ইতোমধ্যে সারাদেশে পৌঁছে গেছে ১০, ২০, ৫০, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার কুপন। পার্টি কর্মীরা যাচ্ছেন জনগণের দুয়ারে দুয়ারে। লাল পতাকার সংগ্রামে মানুষ বাড়িয়ে দিচ্ছেন হাত। সেই সকল হাতের মিলিত সহযোগিতা সফল করে তুলবে ওয়ার্কার্স পার্টির ৮ম কংগ্রেসকে।
অর্থ ও সহযোগিতা চেয়ে পার্টির কমরেড সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আহ্বান সম্বলিত প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে সারা দেশে।
কংগ্রেস চলাকালীন পুরো সময়ে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি ওয়ার্কার্স পার্টির নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দলের নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ছাত্র মৈত্রী ও যুব মৈত্রীর নেতা-কর্মীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে নেমে পড়েছেন কাজে। নিরাপত্তার দায়িত্ব তারা কাঁধে তুলে নিয়েছেন। পালন করবেন স্বেচ্ছাসেবার দায়িত্বও।
রাজধানীর প্রবেশদ্বার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে থাকবে পার্টির অভ্যর্থনা সাব কমিটির সদস্যরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।