চিন্তায় আছে আইজ উদ্দিন
বর্তমান বাংলাদেশে যে সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করেছে তা হচ্ছে বেকার সমস্যা। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে বেকার সমস্যা আমাদের বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে অনেক চড়াই-উতরাই পার হতে হচ্ছে। কখনো বা পরীক্ষার ফিসের জন্য জমি বিক্রয়, হালের গরু বিক্রি এমনিভাবে আরো কত কষ্ট স্বীকার করে লেখাপড়া করতে হচ্ছে। এত ত্যাগ স্বীকারের পরও সন্তানের পরীক্ষার শিক্ষা জীবনের ইতি টেনে চাকরির খোঁজে গেলে চোখে সর্ষে ফুল দেখতে পায়।
চারদিকে ‘নো ভেকেন্সি’ ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই। আই,এ,বি,এ কিংবা মাস্টার ডিগ্রি সার্টিফিকেটটা তখন যেন অপ্রয়োজনীয় বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। আর এই ‘শিক্ষিত বেকাররা নিরুপায় হয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হোক, দেশ ও সমাজের জন্য এই অবস্থা মোটেও কাঙিক্ষত নয়।
মাঝে মাঝে আমরা নানা আশার বাণী মিষ্টি বুলি শুনতে পাই। কিন্তু তা শোনার মধ্যেই থেকে যায়, বাস্তবে এর কোন প্রভাব পড়ে না।
আমরা শুনেছিলাম, বেকারদের জন্য সরকারি উদ্যোগে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা ভাবা হচ্ছে। সেখানে বেকারদের উন্নয়ন নিয়ে ভাবা হবে। প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, বেকার ভাতা দেয়া হবে এমনি আরও কত কি! শুনতে বড় ভালো লাগে! কিন্তু বাস্তবে তার কোন অস্তিত্ব আছে কি? আমাদের দেশে এ ধরনের অনেক শুভ উদ্যোগই আর্থিক আনুকূল্য, প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও সহযোগিতার অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্মসংস্থান নামে যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল তাও বন্ধ হয়ে গেছে। তাই সরকারি গঠনমূলক উদ্যোগের মাধ্যমে বেকার সমস্যা প্রয়োজন এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি।
বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ছাড়া দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন কিছুতেই সম্ভব নয়। তবে সরকারের গৃহিত পদক্ষেপের যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজন। শুধু কিছু কর্মসূচির ঘোষণা দিলে চলবে না। সমস্যার গভীরে গিয়ে সমাধানের প্রথা তালাস করে সে মোতাবেক কাজও করতে হবে। নতুন নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ, স্ব-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ নানামুখী কর্মসূচি নিতে হবে।
শুধু সভা সেমিনার, কিংবা সিম্পোজিয়াম করে বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে কর্মসংস্থান করা যাবে না। বেকার সমস্যা সমাধান করতে হলে শিক্ষিত বেকারদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে হবে। তাদেরকে সুদমুক্ত জামানতবিহীন সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে। বেকার সমস্যা সমাধানে দেশের শিল্পপতিদেরও কিছুটা দায়িত্ব রয়েছে। তারা শিল্পায়নের দিকে মনোনিবেশ করে বেকার সমস্যা সমাধানে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারেন।
বেকার সমস্যা সমাধানে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও শিল্প কারখানা গতিপথ করতে হবে। ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পকে আবার চাঙা করে তুলতে হবে।
শিক্ষিত বেকারেরা যাতে হতাশায় না ভুগে, বিপথে পা না বাড়ায় সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। বেকার জনগোষ্ঠী যদি সম্পদে পরিণত না হয়ে বোঝা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে তা সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্যে মঙ্গলকর হবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।