আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভালবাসার উজান স্রোতে............ (শেষ)

পরাঞ্জয়ী...

Click This Link Click This Link Click This Link Click This Link উজান চলে গেল ৩০ তারিখ রাতে। ২৯ তারিখ সারারাত জেগে ছিলাম দুজন। রাতভরে কত কথা, কত হাসি-কান্না তার শেষ নেই! বারান্দার মেঝে তে বসেছিলাম। ভরা চাঁদ ছিল আকাশে। শুক্লপক্ষেরই চাঁদ হবে বোধ হয়! রূপালী একটা মাদকতা চারদিকে।

দুটি শরীর তারই আভায় জড়িয়ে ছিল দুজনকে। কিছুক্ষন পর পর উজান আমাকে ওর বুকের মধ্যে চেপে ধরছিল। ওর হৃদপিন্ডের উন্মাতাল কাঁপনের শব্দ পাচ্ছিলাম আমি। ধ্বক, ধ্বক......................................ধ্বক, ধ্বক.............................. মাঝখানে মাত্র ২ টি দিন হল, এরই মাঝে এত মায়া যে কোথা হতে এল কে জানে!! দুটি হৃদয় নিঃশব্দে বিধাতার কাছে আকুতি জানিয়ে যাচ্ছে "আলাদা করোনা বিধি, সবে তো শুরু করেছি, আর ক'টা দিন থাকি এমনি করে বুকে জড়িয়ে!!!" কিন্তু হায় রে দুনিয়া!! জিবীকার তাগিদে জীবনকে হাত পা গুটিয়ে নির্লিপ্ত হতেই হয়!!! মাঝে মাঝে উজান নিজের গালটা আমার মাথায় কাৎ করে ঠেকিয়ে চুপচাপ বসে থাকছিল। খুব মায়া লাগছিল আমার! দম ফুটে কান্না পাচ্ছিল! কাঁদতেও পারছিলাম না, পাছে ও মনোবল হারিয়ে ফেলে! পাশে অনেক দিনের অবহেলায় পড়ে থাকা আমার ডায়রীটা হঠাৎ হাতে নিল ও।

ঝপ করে একটা শুকনো লাল গোলাপ পড়লো ডায়রীটার পাতার ভাজ থেকে। ও কুড়িয়ে নিয়ে বললো "কার স্মৃতি যত্ন করে তুলে রেখেছ সুর?'। আমি বললাম "যত্ন করেই রেখেছিলাম, কিন্তু নিজের দোষেই অবহেলায় পড়ে আছে" একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম "শাওন দিয়েছিল, আমার গত জন্মদিনে! ২৩ টি গোলাপ! ওর মাঝের একটি ডায়রীর ভাজে ছিল!!" উজান বললো "আচ্ছা সুর, শাওন তো জানতো তুমি বিধবা, সব জেনেই যদি এল তবে এভাবে ঠকালো কেন?" আমি ও চাই এই কথা গুলো উজান জানুক। তাতে ওর মনের অনেক দ্বিধা কেটে যাবে। যদিও আদৌ কোন দ্বিধা আছে কিনা সে নিয়েই আমার সন্দেহ আছে!!! আমি বললাম " উজান, শাওন সবই জানতো।

কয়েকদিন আগে শুনলাম ওর প্রথম প্রেমিকা, সোনা, রুপা না হীরা কি যেন নাম ছিল , এমনই কোন এক ধাতুর নামে নাম, সে নাকি ওর কাছে ওর পুরা জগৎ ছিল!!! তখনই মনে হল তবে আমি কি ছিলাম? আমাকে নিয়ে তবে কি সে এক্সপেরিমেন্ট করেছে? নিজে নিজেই খুঁজে পেলাম জবাব ' ভর দুপূরে অনাসৃষ্ট দূষ্টামিতে মত্ত বাচ্চা ছেলে মায়ের বকুনি খেয়ে যখন গাল ফুলিয়ে অভিমান করে একাই কাঠ ফাঁটা রোদে বাশের কঞ্চি কুড়িয়ে বনপথে হাঁটতে হাঁটতে খুজে পায় একটা মাটির পুতুল, খেলতে থাকে আপন মনে, তারপর মায়ের উপর অভিমান কেটে গেলে পুতুলটা ছুড়ে ফেলে বাড়ি ফিরে যায় একসময়, কেউ এসে জিজ্ঞেস করে "ছুড়ে ফেলে পুতুলটার হাত ভাঙলে কেন? সে জবাব দেয় ও পুতুলের নাক বোঁচা, রং ভালনা ও আমার ভাল লাগেনি তাই ফেলে দিয়েছি!!! এমনই করেছিল শাওন আমার সাথে!!! উজান বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে থাকলো আমার দিকে। আমি আবার বললাম " জানো উজান, তারপরও ক্ষমা করেছিলাম। ভুল টুকুও স্বীকার করেনি সে। দশজনের কাছে বলে বেড়িয়েছে আমি এমন, আমি অমন!! সেই দশজনের ভিড়ে দাঁড়িয়ে আমারও মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করতে মন চাইতো ' সবাই মন্দ, আর তুমি বুঝি ভীষ্মদেব????" কিন্তু ওকে এ প্রশ্ন করাও বৃথা। যাদের দম্ভ দেখানোর অনেক কিছু থাকে তারা দম্ভ দেখায় না, যাদের কিছুই নেই তারাই দম্ভটাকে যথাসর্বস্ব করে বাঁচতে চায়!! যে ওকে বারবার লাথি দিয়েছে তার পায়ে গিয়েই লুটিয়েছে বারবার, অথচ যে আমি বুকে তুলে নিতে চেয়েছি তাকেই দেখিয়েছে ওর অন্ধ আত্মসন্মান।

যা আসলে আত্মসন্মান নয়, অহং!! ওর উপর রাগ করারও প্রবৃত্তি হয়না আমার! ও রাগেরও যোগ্য না। আসলে মনটা যার আবর্জনায় ভরে যায় সেখানে তুমি পদ্ম ফুল ফেল আর বেলী, গন্ধ ছড়াবে ঐ আবর্জনারই!! এট কথা আজ একারনে বললাম যাতে তুমি জানতে পার ওর জন্য কোন কিছুই অবশিষ্ট নেই আমার। "" তারপর চুপ করে থাকলাম। খুব হালকা লাগছে! উজান বললো " তোমার মত বোধ বুদ্ধি আমার নেই, এটুকু জানি তোমাকে পেয়েছি। আর কিছু জানবার আমার দরকার নেই!!" এই বলে দু'হাতে আমার মুখটা তুলে ধরলো।

আমি চোখ বুজলাম। একটা কাঁপা ঠোট চেপে ধরলো আমার দুটো ঠোঁট! সেখানে কামুক বাসনা নেই, আছে শুধু অতৃপ্ত আত্মার তৃষ্ণা মেটানোর দূর্বার চেষ্টা!! যে চার অক্ষরের শব্দটি শোনবার জন্য চার চারটি বছর অপেক্ষা করেছে ও সেই কথাটি বললাম আজ "ভালবাসি"। আনন্দ বিস্ময়ে আমার প্রতি ইঞ্চিতে ওর প্রাপ্তির সিলমোহর এটে দিতে লাগলো ও একটি একটি করে!! আজ যেন মনের ক্ষুধার কাছে দৈহিক ক্ষুধা হার মেনেছে!! এভাবেই ভালবাসার দেনা পাওনায় কাটলো সারারাত। সেদিন সারাদিনটা কাটলো কেমন একটা অস্থিরতা দিয়ে। যেন সময় বড় দ্রূত যাচ্ছে, আরেকটু ধীরে যাক।

বিদায় নেবার সময় আমি ওর শার্টের নীচটা খামচে ধরে রেখেছিলাম। মা জোর করে ছাড়িয়ে নিয়েছিল হাতটা। "আসি" এই কথাটাও ও বলেনি আমাকে। পাছে ভেঙ্গে পড়ি!! ও যখন চলে যাচ্ছিল কাঁচের দেয়ালের এপাশে দাঁড়িয়ে আমি নিজেকে জোর করে বেঁধে রাখছিলাম। এক সময় দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল।

তখন সাড়ে ন'টা বাজে বোধ হয়! তারপরও অনেকক্ষন লাউঞ্জে বসে ছিলাম! চারদিন হল চলে গেছে সে। আমি দিন গুনছি, কবে যাবো ওর কাছে!!! এ অপেক্ষায়ও সুখ আছে। সমস্ত সত্তা জুড়ে একটা অনুরনন আছে "আমি তার, সে আমার"। আছে ভীষন ভাললাগার কিছু স্পর্শ, কিছু গন্ধ!!! চোখ বুজলে এখন আর জগৎ সংসার টা অন্ধকার হয়ে আসেনা আমার কাছে। চোখ বুজলেই একটি সৌম্য মূর্তি ভাসে চোখের ভেতর! সে আমার উজানের মুখ!! শারীরিক দূরত্ব আমাদের আত্মার নৈকট্যকে এতটুকু কমাতে পারেনি।

এখানে শুধুই সুখ। এ জীবনে আর কোন দুঃখের প্রবেশাধিকার নেই!!! আছে শুধু জীবনের আনাগোনা !! সুখের অনাহূত স্মৃতির অশরীরি অবস্থান!!!!!!!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.