পরাঞ্জয়ী...
গতকাল সকাল থেকেই বুক টা দুরু দুরু কাঁপছিলো!! কেন তা জানি না। সকাল থকেই সবার দম নেবার সময় ছিলনা! কিছু কাজ আমাকে দিলেও পারতো সবাই। কিন্তু বিয়ের কনের কোন কাজ করতে মানা, তাই সকালে সামান্য সাজুগুজু করে ঘরে বসেছিলাম। প্রায় দেড়টা বাজলো তখন। বরপক্ষ আসি আসি করছে।
হঠাৎ আমার তো তো বোনগুলো আর দুই খালামনির দয়া করে মনে পড়লো "সুরভি কে সাজানো হয়নি"!!!!
তারা অবশেষে এলেন আমার কাছে!! শাড়ি পরলাম, গহনাও পরলাম। ছোট খালার পার্লার আছে তাই বউ সাজানোর অভিজ্ঞতার পাপে আমাকে সাজানোর প্রায়শ্চিত্ত করতে হল তাকে!! শাঁখা দুটি পরতে চাইলাম, সবাই হৈ হৈ করে উঠলো!! "পাগল নাকি সুরভি তুই? দুলাভাই বকবে দেখলে"। আমি ভ্রূ কুচকে বললেম "কেন বকবে? আমার ইচ্ছা আমি পরবো"। অগত্যা রাজী না হয়ে উপায় নেই। মা এসে বললো "মনি কিছু খেয়ে নে মা, আর কখন দুটো খাওয়া হবে কে জানে"।
আমি খেলাম না। ঐ যে? ক্ষুধা নেই, কিংবা থাকলেও বুঝতে পারছিনা!!
বরপক্ষ আসার রমরমা বার্তা বাতাসে ভেসে অন্দরমহলেও চলে এল। সবাই ছুটলো সেদিকে। আধঘন্টা পর আমার খালাতো বোন রুকসি এসে বললো " কি কিপ্টা রে বাবা, চাইলাম গেইটে মাত্র দশ হাজার টাকা, দিতে চায় পাঁচ হাজার। আমরাও বলেছি সারারাত দাড় করিয়ে রাখবো!!" আমি বললাম " ধরে রাখ, আমি তাহলে ঘুমাই, ওরাও দিবেনা, তোরাও শুনবিনা, আমি ঘুমিয়ে নেই পরে ডেকে তুলিস"।
ও হাসতে হাসতে চলে গেল!
কিভাবে যে পরে মিটমাট হল দেনা পাওনার, সে জানিনা। তবে দেনা টা যে কাদের আর উজানের শ্যালক শ্যালিকারা পাওনাটার কতটা হকদার সেটাও বিবেচ্য বটে! বরপক্ষের অনেকেই আমার ঘরে এলো, যাদের অনেককেই চিনি না আমি। তাদের মর্জি হল বিয়ে পড়িয়ে পরে খাবেন তারা। কাজী সাহেব এলেন, বড় দাদু হলেন উকিল। " মৃত ............. একমাত্র পুত্র.................... এর সহিত........................... দেনমোহরে.........." উহ এই সেই শব্দগুলো, আগেও শুনেছি।
সেদিন বড় মধুর ছিল শব্দ গুলো!! আজ এত ফুটছে কেন গায়ে? কান চেপে ধরতে ইচ্ছে হল! তারপর একটা খাতা এগিয়ে দিল আমার দিকে, স্বাক্ষরের জন্য! মনে হল খাতাটি ৩ বছর আগেকার সেই খাতাটা, সাদা সাদা দাঁত বের করে হাসছে আমার দিকে আর বলছে " আমি আসলাম, আবার আসলাম"। কোন মতে কাঁপতে কাঁপতে সাইন করলাম। সবাই হয়ত ভাবছে লজ্জা পেয়েছি। না আমার ভয় করছিল, কষ্ট হচ্ছিল, দম নিতে পারছিলাম না!!
খাওয়ার পর বরের পাশে নিল আমাকে। অনেক রং-তামাশা।
কিছুই কানে ঢুকছিল না আমার। ভীড়ের মধ্যে কে যেন হেঁটে বেড়াচ্ছিল। চুপি চুপি সবার দৃষ্টি এড়িয়ে। শুধু আমিই দেখছিলাম তাকে। ঠোঁটের কোনে একটা বাঁকা হাসি!! একটা ঝাপসা অবয়ব! তবু চিনতে একটুও কষ্ট হয়নি! তিন বছর আগেকার সেই মুখ, সেই হাসি, সেই সব কিছু, সব, সব, সব!!! সেই চোখের ভাষাটাও স্পষ্ট পড়তে পারছিলাম আমি "যেওনা, যেওনা!!" হঠাৎ একটা ধাক্কা খেলেম পিঠে।
সম্বিত ফিরে দেখি কেউ কোথাও নেই। "কি হচ্ছে আমার?" চোখে ঝাপসা দেখছিলাম, কানেও শুনছিলাম না কিছুই। যেন জগৎ সংসার টা হঠাৎ নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল!!
রাত ৮ টার দিকে বিদায় হল বাবার কন্যা সম্প্রদানের মাধ্যমে! সেই প্রথম বারের উচ্ছসিত কান্না কাল কোথাও ছিলনা। বাবা মা কাঁদলেন অনেক। আমি যেন এক নির্মম পাষানী, এক ফোঁটা জল কোথাও ছিলনা, কোথাও না!!! আমি আর উজান এক গাড়িতে, পাশে আমার ননদের ছোট বাচ্চাটা।
আর সবাই অন্য গুলোতে। কিছুদূর গিয়ে একটা হাত চেপে ধরলো আমার ডান হাতটা। "হ্যা এমনি করেই আরেকটি হাত ঠিক এমনই সময় চেপে ধরেছিল আমার হাত! সেদিন আনন্দে শিউরে উঠেছিলাম আমি, আজ কি হল! উহ!! এ যেন সাপের দংশন!! দাঁতেও কাটে, বিষেও মারে"!!! কেন অমন হচ্চিল কে জানে! আমি তো উজানকে চেয়েছি। তবে কেন এমন অনুভুতি?!!!
অতঃপর সমস্ত রিতী-রেওয়াজ শেষে আমাকে আমাদের ঘরে একা বসিয়ে রেখে আসলো ওর বড় বুবু। আমি বসে থাকলাম।
নাহ ভয় নয়, রোমাঞ্চ নয় একদম ফাঁকাআআআআআ একটা অনুভুতি! চোখ বন্ধ করে মনে মনে বললাম " ঈশ্বর, একটু সুখানুভূতি দাও, একটু ভাললাগা দাও, আগের মত না হলেও একটুখানি অন্তত!! দাও বিধি! নয়ত উজান ঠকবে!" ঘন্টাখানেক হবে বোধ হয়! উজান ঘরে ঢুকলো!! চমকে উঠলাম। কি হবে এখন?!! এই তো সেই চমক, সেই রোমাঞ্চিত অনুভব!!! আমার পাশে এসে বসলো ও!
চুপচাপ দূজনেই। অনেকক্ষন....................আরও কিছুক্ষন...............................
: সুর????
:হুমমমম
: কত কথা বলবো সাজিয়ে রাখলাম, এখন দেখি বেমালুম ভুলে গেছি!!
আমি হাসলাম, বললাম "থাকনা! পরে বোলো"
ও আবার চুপ করে থাকলো কিছুক্ষন, তারপর মুখ তুলে বললো" কি যেন চেয়ে নেবে বলেছিলে?" আমি বললাম "হ্যা নেব" তারপর চোখ বন্ধ করে কপাল বাড়িয়ে দিলাম! ও বিস্মিত হয়েছিল কিনা দেখিনি, চোখ বন্ধ ছিল! খোলা থাকলেও ডিম লাইটে দেখতে পেতাম না!!! ২ মিনিট পরেই কপালে অনুভব করলাম একটা তপ্ত ঠোঁটের ছোঁয়া!!! "ব্যস এটুকুই?" আমি বললাম "এটুকুর জন্য যে কত দিন কত রাত আমি অপেক্ষায় ছিলাম তা যদি জানতে!!" তারপর পান্জাবীর পকেট থেকে একটা লকেট বের করে পরিয়ে দিল আমাকে। বোনাস!!!
আবার নীরবতা!! আমিই বললাম এবার " তুমি কিছু চাওনা উজান?" ও বললো "চাইলে দবে?" আমি ওর হাতে একটা চাপ দিয়ে বোঝালাম আমার সম্মতি। " তুমি শাওনকে ঘৃনাটুকুও করতে পারবেনা" আমি বললাম "ক্ষমা করতে বলছো?" উজান বললো "না ক্ষমা, না ভালবাসা না ঘৃনা! আমি তোমার ঘৃনার ভাগটুকুও ওকে দেবনা, কারন সে তোমাকে ঠকিয়েছে, সে শুধু আমার করুনা পেতে পারে, তোমার কাছ থেকে কিছুই না""" আমি হাসলাম "বেশ তাই হবে!"
একটা হাত আমার গালে ছোঁয়ালো।
আবার চমক!! শিউরে উঠলাম। কিছু চাইছে মনটা?!! কি জানি!! আনমনেই গেলাম ওর খুব কাছে। একদম নিশ্বাসের আওয়াজটাও পাচ্ছি যেন কানের কাছে। আর বুঝি পারলাম মনের সাথে যুদ্ধ করে!!! ১......২.......৩ ব্যস দুটি অতৃপ্ত আত্মা, অতৃপ্ত শরীর আজ জলের সন্ধান পেল যেন........ শুধু আকণ্ঠ পান করা আজ........... তারপর ডুবে যাওয়া সেই জলে............... ডুবে মরবার সাধ এত মধুর!!!!!!!
আজ সকালে বউভাত ছিল..............এখন আমি বাবার বাসায়। কাল সকালে আবার ওদের ওখানে যাবো।
আগামীকাল রাত ১১ টায় ওর ফ্লাইট। বুকের মধ্যে চিনচিন করছে এখনি। তবে কি ভালবাসতে শুরু করলাম??!!!!!! না শুরু নয়, বোধ হয় বেসেই ফেলেছি!! নয়ত কাল রাতে......................
(অসমাপ্ত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।