পরাঞ্জয়ী...
সারাদিনে অনেক ধকল গেল। সেজে গুজে সকালে ঠায় বসে থাকলাম, আর সবাই মিলে আমার নাক, মুখ ,চোখ, হাতে হলুদ মাখালো, হলুদ তো না উপটান। উহ!!! কি যে যন্ত্রনা!!! দুপুরের পর বাসার সব মেয়েগুলো উজানকে সং সাজাতে গেল! মায়ের অনেক কাজ, দম নেবার সময় নেই। সাথে বড় খালা আর ন'খালা। বাবা এক কোণে বসে "এটা ওভাবে, ওটা ওভাবে" হুকুম করে যাচ্ছে! আর আমি ঘরে বসে একা বিরক্ত হচ্ছি আর সবার বংশ বিলোপের কামনা করছি!!! মাঝে মাঝে ভাবছি কাল দুপূরের পরেই আমি আর একা নই, আমার নামের সাথে কারও নাম, আমার সাথে কারও অদৃশ্য বন্ধন!
সন্ধ্যার পর পরই সবাই ফিরে এলো।
সবাই কত্ত খুশি! কে উজানের কোথায় হলুদ মাখিয়েছে, কে উজানের পাশে বসে পাণ্জাবীর সাথে বিছানার চাদরের পিন আটকেছে, উজান কত খানি বেশরম এই সব আলোচনা! বিয়ের শাড়ি গহনা আর অন্যান্য সব ওরা আজকেই পাঠিয়ে দিয়েছে। শাড়িটা আমি পছন্দ করেই কিনেছিলাম। ধানমন্ডি লেকের অপর পাশে বিলবোর্ডে ফারজানা শাকিলের অফ হোয়াইট জমীনে সোনালী কাজের জামদানীটা সাথে মেরুন দোপাট্টায় অনেক দিন আমার নজর আটকেছে, ওটাই খুঁজে গেথে কিনেছিলাম। আর সব ওর দুই বোন আর ও মিলে কিনেছে।
শাড়ির সাথে ম্যাচিং নেকলেস, নীচে মুক্তা বসানো, সীতা হার টা বেশ,হাতের মানতাসা গুলোও চমৎকার, পছন্দ আছে বৈ কি! সোনার টিপটির মাঝখানে ছোট্ট একটা রুবি।
বাকী সবও সুন্দর! কিন্তু এসবের চেয়ে সবচেয়ে দামী যে জিনিসটা তা হল সোনা বাঁধানো শাখা জোড়া!! শাখাকে যারা হিন্দুয়ানী জ্ঞান করেন আমি তাদের দলে নই। ও বস্তুটি আমার খুব ভাল্লাগে। ইস!! উজান আমার সব পছন্দ অপছন্দ গুলো কত্ত মনে রাখে!!!
খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে ওর সাথে! সুযোগই পাচ্ছিনা এত ভীড়ে ফোন করার! মাথা ব্যাথার বাহানায় ঘরে দরজা দিয়ে বিশ্রাম নেবার একটা সুযোগ পেলাম!!
:আজ সূর্য কোন দিক দিয়ে উঠেছিল? উমমমমম মনে পড়ছেনা, খেয়াল করিনি বোধ হয়!!!
: কেন? একথা কেন বললে?
: না তুমি নিজে থেকে কখনও আমাকে ফোন করনা তো তাই!!!
: তাহলে ঠিক আছে রেখে দিলাম!!]
: আরে না না, লক্ষীসোনা রাগ কর কেন? এমনি বললাম। আচ্ছা বল এবার সব পছন্দ হয়েছে?
: সব কিছুর কথা জানিনা, তবে শাখা দুটো অসাধারন!! তুমি মনে রেখেছ আমি যে ওটা ভালবসি?
: কেন রাখবো না?
: হুমমমম
: তারপর বল?
: কি বলবো? ভাবছি কাল থেকে দূজন আর আলাদা দুটি সত্তা থাকবোনা!!!
: হ্যা গো, কত প্রতীক্ষায় তোমাকে পেলাম! এত সাধনায় তো দেবতার বর পাওয়া যায় গো!! তোমার মন পেতেই আমাকে ৪ টি বছর অপেক্ষা করতে হল। তাও আবার নিষ্কণ্টক প্রতীক্ষা নয়, রিতীমত দু, দু জন অসুরের সাথে জীবনপণ লড়াই করে তারপর!!!! আমি হাসিতে ফেটে পড়লাম।
কি মজা করে যে কথা বলে পাগলটা!! আবার বললো: কাল কিন্তু পরীর মত সাজবে। গতকাল যেমন শেওড়া গাছের পেতনী সেজেছিলে ওরকম সেজোনা কিন্তু!!!
: ধ্যাৎ কি যে বল তুমি!!!
: আগামী কাল রাতে মুখ দেখাই তে কি চাও তুমি সুর? বিয়ের প্রথম রাতে বউকে কিছু দিতে হয়!! আমি তো মস্ত গাধা, কি যে দিব বুঝতে পারছিনা!
: যা দরকার আমি চেয়ে নেব, তোমার ও নিয়ে এত ভাবতে হবে না।
: বাঃ, আগে থেকে না বললে ম্যানেজ কোরবো কিভাবে?
: ও যখন চাওয়া হয় তখনই পাওয়া যায়!!!
ও যে কি বুঝলো আর কি বুঝলো না সে আমার বোঝার বাইরে। আরও কিছুক্ষন কথা বলে ফোন রাখলাম। মা খেতে ডাকছে, আমার ক্ষুধা নাই।
কিংবা হয়ত আছে আমি বুঝতে পারছিনা। গলার কাছে কি যেন পাকিয়ে উঠছে। সকাল হবার অপেক্ষা করছি নাকি সকাল দেরীতে হবার দোয়া করছি সেও বুঝতে পারছিনা। কানের একশ জন মানুষের মিলিত চিৎকার শুনছি যেন "উজান, উজান, উজান"!!!
নীচে ভাইবোন গুলো সাউন্ড বক্সে গান বাজানো শুরু করেছে, একটা গানের সুর ভেসে আসছে। এত মিষ্টি লাগছে সুর টা!! মিষ্টতা কি গানের সুরে নাকি আমার হৃদয় বীনায় বেজে ওঠা সুখানিভূতির নরম সুরে, কে জানে!!!!!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।