পরাঞ্জয়ী...
কাল রাতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম মনে নেই। কি আজব না? কষ্টের কথা ভাবলে ঘুমই আসেনা, আর সুখের কথা ভাবতে বসলাম ঘুমিয়ে গেলাম!!! কাল সকালে আমার গায়ে হলুদ, বিকেলে উজানের। সময় কম, ৩০ তারিখে ওর ফ্লাইট, তাই তাড়াহূড়ো করেই এতকিছু। মা সকালেই হাতে রুপোর আংটি দেখে বললো " মনি, আশীর্বাদের আংটি খুলে ও কি পরেছিস?" আমি বললাম " এটা উজান কাল পরিয়ে দিল, আমার এটাই পছন্দ, আমি এটাই পরবো" মা আরও কি বলতে যাচ্ছিল, বাবা চোখ টিপে থামিয়ে দিল মাকে।
সারা বাড়িতে সাজ সাজ রব।
হলুদের স্টেয সাজানোর কাজে ব্যস্ত আমার ছোট ভাই আর ওর বন্ধু গুলো। আমার অন্যান্য খালাতো মামাতো চাচাতো আরও যত তো তো ভাইবোন আছে সবাই কোন না কোন কাজে ব্যস্ত। আমারই কোন কাজ নেই। তিন বছর আগে আরেকবার এমন দিন দেখেছি আমি তাই সেই রোমাঞ্চটাও অনুভূত হচ্ছেনা। চুপচাপ ঘরে ঢুকলাম।
আয়নার সামনে বসে এটা ওটা নিয়ে নাড়া চাড়া করছি। "দূর ভাল্লাগে না"। লিপ্সটিক টা হাতে নিয়ে নাকের নীচে বিড়ালের গোঁফ আঁকালাম। কাঁজল টা দিয়ে কপালে আকলাম ইয়া বড় করে ত্রিশুল, গালের মধ্যে লিপ লাইনার টা দিয়ে দুটো গোল গোল হাসের ডিম আঁকলাম। আর কি করা যায়? আয়নার মধ্যে নিজেকে দেখলাম, ঠিক মামদো ভূতের মত লাগছে!!
এবার কি কোরবো? পিচ্চিগুলোকে ভয় দেখিয়ে আসবো? নাহ যদি কান্না জুড়ে দেয়! এসব ভাবছি বসে বসে অমনি উজান এসে ঢুকলো আমার ঘরে।
আমি ফিরে তাকাতেই ওর চোখ দুটো যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসার যোগাড়, তারপর হাসির চোটে কাঁপিয়ে তুললো ঘর। আমি দৌড়ে বাথরুমে ঢুকলাম। মুখ ধুয়ে বাইরে আসলাম। ছদ্ম গাম্ভীর্যে মুখ টা থম থম করছে ওর!! বুঝলাম ভেতরে ভেতরে হাসির কাঁপন টা আছে ওর!
:তোমার লজ্জা করেনা উজান? কাল গায়ে হলুদ, আর আজকে আমাদের বাসায় এসেছো, ছি! ছি! লোকে কি বলবে বলতো?
: লোকের কথায় "হয়ত" কষ্ট পাবো, কিন্তু মাকে না দেখলে "নিশ্চিত" কষ্ট পাবো।
কষ্ট মাকে না দেখলে, না মায়ের মেয়েকে সে আমি ঠিকই বুঝলাম, ঐ বোঝাটা পর্যন্তই, মুখে আর প্রকাশ করলাম না!
: তো মায়ের কাছে গিয়েই বসনা, এখানে কি?
:মা ব্যাস্ত কি না তাই।
এই ফাঁকে তোমার হলুদের শাড়ি গহনা টা দেখাতে এলাম লুকিয়ে। বড় বুবু পছন্দ করে কিনেছে তো, পুরোনো মানুষ, তোমার ভাল্লাগে কিনা!
তারপর খুলে দেখালো লাল পেড়ে কুসুম রঙের জামদানী সাথে মুক্তোর জড়োয়া।
:হায়রে বোকা, আমি কি হলুদে এই গহনা পরবো নাকি? ফুলের গহনা পরবো তো! ওর চেহারাটা এবার দেখার মত হল। "আমি কি বুঝি এসব?"। আমি হেসে বললাম "তো মন খারাপ করার কি হল? না হয় গোসলের পর পরবো এগুলো" এবার হাসি ফুটলো ওর মুখে।
:আচ্ছা উজান, কাল যে বললাম তোমাকে আমি এখনও ভালবাসতে পারিনি, তার পরও আমার প্রতি তোমার আগ্রহের কোন কমতি নেই কেন বলতো? সত্যি করে বল?
: সুর, তোমাকে যে ভাবেই হোক পাবো এই আমার সব লাভের বড় লাভ। এত হিসেব করতে বসে সেই লাভকে ক্ষতির অঙ্কে ঢুকানোর মত কাঁচা ছাত্র আমি নই। আমাকে কত দিন ভাল না বেসে পারবে তুমি, তোমাকে হারতেই হবে!! আর তোমার প্রতি আমার আগ্রহ?? তার তো আদিও নেই অন্তও না! এক জীবনে এত আগ্রহ বুঝি আর কোন কিছুতেই নেই আমার!!
:তাই?
: হুমম। আচ্ছা সুর বলতো তুমি কেন আমাকে বিয়ে করতে রাজী হলে? খুব জানতে ইচ্ছে করে।
: উজান, বিদ্যাসাগর বাবু বহু আগে বিধবা বিবাহ চালু করলেও, এদেশে বিধবা বা স্বামী পরিত্যাক্তাদের দূর্দিন কিন্তু আজও যায়নি! এমন অনেককে দেখেছি যারা আমাকে বলেছে তারা আমাকে সঙ্গ দিতে চায়, আমার কষ্টগুলো কে ভুলিয়ে দিতে চায়, কিন্তু স্বীকৃতি টুকু দিতে পারবেনা।
বিধবা মেয়েকে বিয়ে করলে জাত যাবে তাদের!!! অনেকে যুক্তি দেখায় "একটা স্বাক্ষর ই সব? এর বিনিময়ে একজন সব পাবে, আর যে ভালবাসবে সে কিছুই পাবেনা স্রেফ স্বাক্ষর নেই বলে?" ঠিক তা নয়, শুধু স্বাক্ষর করেই যেমন একজন সব পাবার অধিকার পায়না, তেমনি যে আগে থেকে সব নেবার আশায় ভালবাসে অথচ স্বীকৃতি দিবেনা সেও কিছুই পাবার অধিকার রাখেনা। বিয়ে ভালবাসার পরিনতি নয় স্বীকৃতি তাদের ধারনা বিধবাদের শরীরে খুব তৃষ্ণা, পুরুষসঙ্গের তৃষ্ণা!!! কিন্তু তাদেরও যে সংসারের তৃষ্ণা থাকে, সন্তানের তৃষ্ণা থাকে থাকে কারও সাথে খুঁনসুটি করার সাধ, মশারি টাঙানো নিয়ে ঝগড়া করার সাধ সে কেউ বোঝেনা। তুমি বুঝেছো বলেই, তোমাকে ভালবাসার চেষ্টা করি!
বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে থাকে উজান! সেখানে বিস্ময় নাকি আনন্দ সে আমি বুঝতে পারিনা। বোঝবার মনও নেই, মনটা আমার কোন অতলে যেন হারিয়ে গেছে এই মুহূর্তে!
:সুর, তোমাকে নিয়ে আমার একটাই ভয়।
:কি?
: তোমার মনটা বড্ড কঠিন, যা একবার সু-স্থির করে ফেলে দাও তার আর অ-স্থিরও হয়না, পূনরায় তুলে নেওয়াও না!
:বাহ! সে বুঝি মন্দ?
:ঠিক তা না, ভয় করে এই যা!
: ভয় পেওনা গো! তোমাকে এত সহজে ফেলবো না।
যাদের কে ফেলি তারা ধরে রাখার যোগ্য নয় বলেই ফেলি, নয়ত অকারন ফেলবার মত ঢের সম্পদ আমার নেই!
ও হাসলো। উদাস হয়ে কি যেন ভাবছিলো। আমি চেয়ে আছি ওর মুখের দিকে। কি যে মায়া লাগছে!! মনটা চাইছে ওর মাথাটা কোলের মধ্যে টেনে নিয়ে হাত বুলিয়ে দেই। ভালবাসা কি জানলায় উঁকি দিচ্ছে? দরজা খুলে দিলেই ঢুকে পড়বে??!! কে জানে!!!
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।