লিখি সোমা, তোর কি মনে আছে ভার্সিটির পুকুরটাকে যেখানে শেষবার আমরা বসেছিলাম। ফিশারিজ এর সিঁড়ি, তারপর উঠে হেঁটে গেলাম। তোর তো খুব পছন্দের ছিল জায়গাটা, দক্ষিণ পার, বাগান বিলাসের ঝোপ, সাদা খরগোশের মত রঙ করা নারকেলের ঘাট। সেদিনও আজকের মত গরম ছিলো। একটা খাতাকে ব্যাগ থেকে বের করে আমাকে বাতাস করছিলি তুই।
আচ্ছা আজও ঘামছিস। ঘামলে শ্যামলা মুখটা বৃষ্টি ভেজা জানালার মত সুন্দর দেখায় ! তোর মুখের ঘামের ফোঁটাকে মুক্তোর মত লাগে। আমি কি স্বার্থপরই না হয়ে যায়। গরমে পুড়ে যাওয়া মেয়ের শরীরে সমুদ্রের মুক্তো খুঁজেছি।
চোখ বন্ধ করে সোমা প্রিতমের কথা শোনে।
প্রি, শেষ দিনের সকালটা বড় সুন্দর ছিল। বিকেলটা এমন পোড়া হল কেন? আমি জানলাম যখন রাতে। তারপর ছুটে গেলাম। তোমাকে দেখতেই দেয়া হল না। তুমি ভাল হলে আমি সেই পুকুরে যাবো নিয়ে।
সাধা ধপধবে হাঁস।
সেই রেইনি রেইনি হাঁস কাপল। ও তো আমাদের ফলো করতো। সোমা হাঁসের ওখানে ঘাসের ওপর তুই পা ছড়িয়ে বসবি। আজকে এত মনে হলো সেই ছবিটা!
সোমা ভাল করে জানে প্রিতমের মেরুদণ্ড কখনোই আর ঠিক হবে না।
সে ঘাসের উপর পা ছড়িয়ে বসতে পারবে না কোনদিন।
সোমা, আমাদের নিজেদের একটা সংসার হবে ভেবেছিলাম। এখনো যখন সংজ্ঞাহীন ছিলাম আমি যেন একজোড়া ছোট্ট জুতো দেখছি। যেন আমাদের সেই আলো। আলোর পায়ে খুব ছোট জুতো জোড়া।
প্রি!
ফোনের ওপাশে কোন শব্দ থেমে যায়। ইন্ডিয়া থেকে বেশিক্ষণ কথা বলা যায় না। কার্ডে দ্রুত টাকা কাটে। মুখর তরুণটির একটানা কথা বলতে কষ্ট হয়। ডাক্তারের নিষেধ।
সোমা এও জানে সামনা সামনি প্রিতমকে আর চেনা যাবে না। রোড এক্সিডেন্টের পর প্রিতমের ফর্সা মুখটা বিভৎস হয়ে গিয়েছিল।
কিছুক্ষণ পর শব্দ ফিরে আসে। বাচ্চা ছেলের মত কান্না ভেজা কণ্ঠে প্রিতম বলে,
সোমা, তোকে বড় দেখতে ইচ্ছে করে!
এই তো আর কয় দিন, আমি তো আছি, প্রি। সোনা, তোমার কাল বাম পাঁজরে যে ব্যথাটা বেড়ে ছিল ওটা ঠিক হয়েছে?
এখন ব্যথা নেই।
এখন আমি ঠিক হয়ে গেছি। তবে তিন মাস পর পর ভেলোরে যেতেই হবে। যে কয় মাস বেঁচে থাকি আলোর মুখ দেখতে বসে থাকতে হবে চাকার ওপর।
আমি তোমার পাশে থাকবো প্রি। আর এসব আবোল তাবোল কথা বলো কেনো? পাগলামো সব সময় কি মানায়?
তুই কি এই ক'দিনে আরো শুকিয়ে গেছিস সোমা? ভাঁজ করা ন্যাপকিনের মত চেহারা বানিয়েছিলি, মান্নার ক্যান্টিনে আমি তোকে জোর করে ভাত তুলে দিতাম, তুই এখন তো আর খাবি না।
খেলে যদি মোটা হোস।
আমি ভাল আছি প্রি! সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আব্বাকে বলবো, তোমার সঙ্গে ঘুরতে যাবো। আব্বা এখন আর মানা করবেন না।
শুনেছি তোর বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল।
রবিন তো ভয় দেখালো, টকটকে গোলাপের মত ছেলে। বাইরে সেটলড।
প্রি! তুমি তো জানো। তাও কেন বলো। তোমাকে ছাড়া আমি কোথাও যাবো ভাবতে পারি না।
গোলাপ দিয়ে কি হবে? তুমি জানো না আমি কি চাই?
কি চাস ভাঙা ডাল, আর কাঁটা?
প্রি!
টেলিফোনের চোখ থাকলে সোমা দেখতো সারাগায়ে ব্যান্ডেজ মোড়ানো একটা পুরুষের চোখে অঝোরে জল ঝরছে।
ঘণ্টা বাজছে! আজ রাখতে হবে সোমা। সামনের মাসে এলে তোকে নিয়ে ন্যাশনাল অর্কিড ফেস্টিভ্যালে যাবো। ওখানে এত কাঁটা। তোর তো এখন ফুলের বদলে কাঁটাকেই পছন্দ।
সোমা প্রিতমের সিকতাকে সহ্য করতে পারে না। ফোনটা নীরব হলে তার খুব রাগ হয় প্রিতমের দিকে। ও কেন বোঝে না কোন কথাটা কাঁটা হয়ে তাকে কষ্ট দেয়।
-
ড্রাফট ১.২ / দ্রুত খসড়া গল্প। এটা নেট কায়দার গল্প, এরকমই।
ভালো হবার জন্য নয়.. ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।