আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ কোনদিন ব্যর্থ রাষ্ট্র হবে কিনা জানিনা; তবে ঢাকা বোধহয় ব্যর্থ শহর হওয়ার পথে(২)...

জীবন অনেক দামী..কাজ প্রচুর...সময় কম।

একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম সমস্যাগুলো লিখে অনেকটা (ব্যর্থ) কবিতা আকারে। View this link এবার এর সমাধানে আমার কয়েকটা মাত্র সুপারিশ !! (বেশী লিখে থিসিস করে লাভ নেই, আর এটা আমার কাজ ও নয়)। এমনিতেই ফানপোষ্ট আর বিতর্কিত পোষ্টের ভীড়ে ব্লগারদের এসব সিরিয়াস সমস্যা নিয়ে পড়ে থাকার সময় কোথায় ? আগের পোষ্টে এত এত সমস্যা মনে আসছিলো যে লাইনের পর লাইন লিখে একটা থিসিস পেপার হয়ে যেত বলেই ওভাবে লেখা ছিল সেটা। এর সমাধান যে কি বা আদৌ ঢাকা কোনদিন ভদ্র চেহারা পাবে কিনা তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

কিন্তু, একজন ঢাকাবাসী হিসাবে আমার অধিকার সেই সাথে দায়িত্ব ও মনে করি এগুলো নিয়ে নিজের ভাবনা গুলো সবার সাথে শেয়ার করবার। বাংলাদেশের আরো সব পরিকল্পনার মত ঢাকার জন্যও দরকার একটা আন্তরিক পরিকল্পনা। মাস্টারপ্লান জাতীয় জিনিষ অনেকবারই হয়েছে, কিন্তু সরকার পালটিয়ে সব ওলট পালট হয়ে গিয়েছে। এছাড়া প্রভাবশালীদের প্রভাব অনেক পরিকল্পনাকেই ব্রুপ্রিন্টেই রেখে দিয়েছে। এই জন্যই আন্তরিক কথাটা বলতে চাচ্ছি যা হবে রাজনীতি, স্বজনপ্রীতি আর ব্যক্তিস্বার্থের উর্দ্ধে।

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমি কয়েকটা পয়েন্ট শুধু তুলে ধরছি। যদি নীতিনির্ধারক কিম্বা কোন বিশিষ্ট জনের চোখে পড়ে-- ক) অটোমোবাইল যানবাহন সমস্যাঃ ১. মাস ট্রানজিটঃ পাতাল রেল আমাদের দেশে খুব উপযোগী হবে বলে মনে হয় না। জানের এবং মালের দুটোরই নিরাপত্তা একটা সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। মনোরেলের পথে এগিয়ে যাওয়াই হয়তো সঙ্গত হবে। যতদিন মনোরেল গোছের কিছু না হয় ততদিন কি টঙী-গাজীপুর এবং নারায়নগঞ্জ থেকে বিশাল একটা জনগোষ্ঠীকে রেলপথে স্বল্পভাড়ায় পরিবহনের সুযোগ করে দেয়া যেতে পারে মাসিক ভাড়া ভিত্তিতে।

২. প্রশস্ত সড়কে যেমন মিরপুর-গুলিস্তান, এয়ারপোর্ট-গুলিস্তান রুটে সব মিনিবাস তুলে দিয়ে দোতলা বাস কে জায়গা করে দিলে রাস্তার উপর স্বাভাবিকভাবেই অনেকটা ভীড় কমে যাবে। ৩. পার্কিং করে রাখা গাড়ির সারি দিয়েই অধিকাংশ সড়কের দুই পাশের দুই থেকে চার লেন দখলে থাকে। আগে গড়ে ওঠা ফ্লাট,মার্কেটের ই নিজস্ব পার্কিং নেই এটা যেমন আজকে সমস্যা সৃষ্টি করছে, বর্তমানে গড়ে ওঠা এপার্টমেন্ট, মার্কেটের ক্ষেত্রে ও পার্কিং স্থান অপ্রতুল। অথচ আমার প্রস্তাব হোল, নতুন গড়ে ওঠা যেকোন স্থাপনার জন্য নীতিমালা হওয়া উচিত শুধু নিজেদের পর্যাপ্ত পার্কিং স্পেস নয়, অতিরিক্ত চার্জ সাপেক্ষে বাইরের গাড়ির ও পার্কিং সুবিধা দিতে হবে। এর ফলে একেকটি নতুন স্থাপনা দ্রতবেগে সংলগ্ন রাস্তার যানযট নিরসনে ও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

উচু উচু বিল্ডিং তৈরীর আগেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নিলে পরে আবার ভাঙাভাঙির আইনী জটিলতায় সব পথ রুদ্ধ হয়ে পড়বে। ৪. উপরের গুলোকে বাস্তবায়ন করা গেলে এই পয়েন্ট নিয়ে চিন্তা করা যায়। সেটা হোল ড্রাইভারদের গাড়ী চালানোতে নিয়ম-শৃংখলা নিয়ে আসা। গাড়িগুলো চলাচলে অনেক সিস্টেম লস হয়। এলোপাথাড়ি লেন পরিবর্তন করা, সিগন্যাল এ দাড়াবার সময় অহেতুক এলোমেলো গাড়ি রেখে জায়গার অপচয়।

কিন্তু যেখানে পেশাদার ড্রাইভারদের মধ্যে জেনুইন লাইসেন্স কয়টি পাওয়া যাবে সন্দেহ, সেখানে গাড়ী চালানার সঠিক নিয়ম “দিল্লী বহুত দুরস্থ হ্যায় ”। ৫. মটর সাইকেল চালানোর ও যে একটা নিয়ম-কানুন আছে সেটা কবে মানুষ ভাবতে শিখবে জানা নেই। খ) রিক্সা সমস্যাঃ বলাই বাহুল্য আধুনিক কালে একটা দেশের রাজধানীতে রিক্সা থাকবে এটা চিন্তাই করা যায় না। কয়টা থাকবে, কোন জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকবে এই প্রশ্ন ই তাহলে থাকে না। কিন্তু এখানে সমস্যা কয়েক টা- ১) গ্রামের যে লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ কাজের অভাবে এই তূলনামূলক লাভজনক কাজকেই জীবনের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে, যা তাদের দিচ্ছে অনেক মাস্টার্স ডিগ্রীধারী যুবকদের থেকেও বেশি আয়ের সুযোগ, তাদের থেকে এই পেশা কেড়ে নেয়া মানে আরো অনেক বেশী চোর,ডাকাত, আর পকেটমার তৈরী করা।

কিন্তু তাই বলে রাজধানীর মধ্যে নতুন নতুন রিক্সাচালক আমদানীর কারবার ও তো রোখা দরকার। গ্রামাঞ্চলে দ্রুত কর্মসংস্থান তৈরী করাই রাজধানী ঢাকার যানযট দূরীকরনের বড় একটা উপায়। ২) এই ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বাধাটা, শহরবাসীদের তরফ থেকে। যেহেতু ঢাকাবাসীর বিশাল অংশ রিক্সার উপর নির্ভরশীল । আর এই বাধা দূর করার একটা উপায় বেশি করে হাটার অভ্যাস গড়ে তোলা (এতে শুধু রিক্সা ভাড়া নয়, ডাক্তার দেখান এবং ঔষধ কেনার পয়সাও বেচে যাবে)।

বিশ্বের সর্বত্রই মানুষকে প্রচুর হাটতে হয়। সেই সাথে যাতায়াতের জন্য ম্যাস ট্রানজিট গড়ে উঠলে যোগাযোগে দুর্ভোগ অনেকটাই কমে যাবে। গ) পথচারী সমস্যাঃ বাংলাদেশের মত এত গিজগিজ করা দেশ আর না থাকলেও প্রায় প্রতিটা মেগা টাউনেই অগুনতি লোক চলাফেরা করে। কিন্তু এত বিক্ষিপ্তভাবে চলাফেরা করা দ্বিতীয় কোন শহর পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। যখন খূশী,যেখান দিয়ে খুশী, রাস্তা পারাপার যে সামগ্রিক ভাবে যানযট কে কতটা বৃদ্ধি করছে তা সেই মুহুর্তে রাস্তা পারাপারে ব্যস্ত লোকটিরতো দূরের কথা আদৌ বহু লোকের মাথায় আছে কিনা সন্দেহ।

এখন এই সমস্যাও একদিনে গড়ে ওঠেনি। এটা আমাদের সামগ্রিক বিশৃংখল জীবনযাত্রারই প্রতিচ্ছবি। তবে এই কালচার সভ্য সমাজে চলতে দেওয়া যায় না। আমাদের ও নিয়ম-নীতি মেনে চলবার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার। তবে এই কালচার শিখতে হয়তো জেনারেশন পার হয়ে যাবে।

অর্থাৎ শিশুদের শেখাতে থাকলে একসময় এরা অভ্যস্ত হয়ে ঊঠতে পারে। কিন্তু ততদিন মোড়ে মোড়ে ফুটপাথ লোহার খাচা দিয়ে ঘিরে রেখে আমাদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য করা ছাড়া কোন গত্যান্তর আমার চোখে পড়ছে না। রাস্তা চলাচলে সব নিয়মগুলোই মেডিয়ায় যেমন ঘন ঘন প্রচার করা দরকার, পাঠ্যসূচী তেও অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। যা যা আমার মাথায় এসেছে তা লিখে গেলাম। কিন্তু এই বাস্তবায়ন কে করবে, কবে করবে, আদৌ করবে বা করার আন্তরিক ইচ্ছা আছে কিনা এটাই প্রশ্ন ! তাই অহেতুক পয়েন্ট আর বড় করার মানে হয় না।

অন্যরাও চাইলে কিছু যোগ করেন। তবে ব্যর্থ শহর হিসাবে ঢাকাকে পরিনত হওয়ার বা করার সব চেষ্টাই আমাদের ব্যর্থ করে দিতে হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.