http://www.somewhereinblog.net/blog/Paranoid
প্রতিদিনের মত আজও অফিস থেকে বের হলাম একরাশ ক্লান্তি নিয়ে। মানুষের ভীড় ঠেলেঠুলে অনেকটা বাহুশক্তি প্রয়োগ করেই বাসে উঠলাম। দাঁড়ানোর জায়গা করে নিলাম কোনমতে। পিছুতে পিছুতে হঠাৎ করে পাশের সিটে বসা একটা বাচ্চা মেয়ের পা মাড়িয়ে দিলাম। মেয়েটা উফ করে উঠলো।
আমি তো মনে মনে খুবই লজ্জিত। হাত বুলিয়ে একটু আদর করে দিলাম মেয়েটিকে। ওর মা মনে হয় আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে চেয়েছিলো। খেয়াল করিনি। আমি তখন ভীষন সংকুচিত হয়ে আছি আমার অসতর্ক চলাফেরার জন্যে।
তবে আমার অতটা সংকোচের কিছু ছিলোনা। মহিলা তার মেয়েকে কোলে নিয়ে একটু পরে বলল,"আপনি এখানে বসতে পারেন"। বসার জায়গা পেয়ে তো আমি স্বস্তির শ্বাস ফেললাম। দুটি কারণে, এমনিতেই দীর্ঘ বাসযাত্রায় দাঁড়িয়ে যাওয়াটা খুব হ্যাপার, আর তার ওপরে জানলাম যে, আমার অনিচ্ছাকৃত উজবুক ব্যবহারে মহিলা কিছু মনে করেননি।
আমি বসলাম।
মেয়েটি কাশছিলো একটু পরপর। অসুস্থ্য বোধ হয়। খুব মায়া লাগলো আমার। ইচ্ছে করছিলো মহিলাকে বলি, "আপনার বাচ্চাটাকে কিছুক্ষণের জন্যে আমার কোলে দিবেন?" আমার তো কোন মেয়ে নেই। অবশ্য থাকবে কিভাবে, বিয়েই যে করিনি।
তবে আমার অনেকগুলো রাজপুত্র আর রাজকন্যার মত ভাগ্নে-ভাগ্নী আছে। আজকেই আমার ছোটপার একটা ছেলে হল। কিন্তু ছোট'পা....তুমি তো আমাদের সবাইকে ভুলে গিয়ে, (অথবা আমরা তোমাকে...)নিজস্ব জীবনযাপন বেছে নিয়েছো। কতদিন তোমার সাথে কথা হয়না, দেখা হয়না..তোমার ছেলেটাকে কবে দেখতে পাবো কে জানে। যতদূরেই থাকো, ভালো থেকো ছোট'পা...
কনডাকটর এসেছে ভাড়া চাইতে।
আমি উদাসভাবে ভাড়াটা মিটিয়ে দিয়ে সেলফোনে গান শোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম আবার। সঙ্গে কিছু উটকো আদ্র অনুভূতির সাথেও কিসব হিসেব নিকেশ চলছিলো। প্রিয় ছোট'পা, তোমার ছেলেটা....আমার পাশে বসা ছোট্ট মেয়েটা..।
সামনের স্টপেজে কেউ একজন নেমে যাবে। আমাদের সামনের সিটেরই কেউ।
আমার সহযাত্রিনী তা দেখে বলল, "সামনের সিট তো খালি হচ্ছে, একটু কষ্ট করে ওখানে গিয়ে বসুন"
আমি উঠলাম। একটু কষ্ট হয়েছিলো বৈ কি। ওরা এখন আরাম করে বসতে পারবে। মহিলাকেও আর বাড়তি পনের টাকা দিতে হবেনা। পনের টাকা এই মধ্যবিত্ত জীবনে অনেক বেশি জানি..কিন্তু আমার কেন যেন অভিমান হচ্ছিলো খুব।
মধ্যবিত্ত লেনদেন....বলতে ইচ্ছে করছিলো, "আপনার পনের টাকা বাঁচিয়ে দিলাম, এবার আপনার বাবুটাকে আমার কোলে দিন না একটু"।
কিন্তু দোষ দিয়েই বা লাভ কি। এভাবে তো বিনিময় করা যায়না, জানি। যদি একটু অনুভূতির বিনিময় করতে পারতাম....
আমাদের অত সময় কই? আর সময় আমাদের এমনভাবে কব্জা করে রেখেছে, খুব সহজেই সব কিছু ভুলিয়ে দিতে পারে। সাদা মনে একের পর এক গাঢ় প্রলেপ ফেলে।
সেই প্রলেপে ঢেকে যাওয়ার আগেই বলে নেই,
" নাম না জানা ছোট্ট মেয়ে, তুমি ভালো থেকো, তোমার শরীর খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে উঠুক......"
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।