মিথ্যা তুমি দশ পিঁপড়া
কমিউনিটি ব্লগিং এ দুইটা গুরুত্বপূর্ন মৌল উপাদান আছে। ব্লগার আর মডারেটর। ব্লগস্পটের মত ব্যক্তিগত ব্লগে কোন কতৃপক্ষ নেই। সেটা আক্ষরিক অর্থেই "যেমন ইচ্ছা লেখা আমার কবিতার খাতা"।
কমিউনিটি ব্লগিং যেহেতু সামাজিক সম্পর্কের আরেক নাম, সেহেতু অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মত কমিউনিটি ব্লগিং এও আছে নীতিমালা।
সামুর নীতিমালা আছে, আলু বলগের নীতিমালা আছে। নীতিমালার সাথেও আরেকটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে কতৃপক্ষের সাথে ব্লগারের ইন্টারেকশান। সামাজিক আইন তৈরী হয় প্রয়োজনে এবং সময়ের সাথে সাথে বিবর্তিত হয়। বিভিন্ন চাহিদা থেকেই প্রাথমিক আইন তৈরী হয়। তবে আইন প্রনোয়নের আরেকটি গুরুত্বপূর্ন দিক হচ্ছে "নিয়ন্ত্রন"।
অথোরিটিভ ফিগার সবসময়েই নিয়ন্ত্রন রাখতে চায়। নিজের ক্ষমতার দিকে ছুড়ে দেয়া প্রশ্নকে এড়ানোর ডিফেন্স মেকানিজম থেকেও হতে পারে অথবা ক্ষমতা ধরে রাখার ইচ্ছার কারনেও হতে পারে। তবে ক্ষমতা ধরে রাখার ব্যপারে গদি নিয়ন্ত্রকরা সবসময় উৎসাহী থাকে। যদি ক্ষমতার ধরে রাখার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় তখনই শুরু হয় সুবিধা নেয়া বা ফায়দা লোটার বিষয়গুলো। অধস্তনদের মাঝে মেরুকরন একটি পুরোনো প্রক্রীয়া।
সামাজিক প্রেক্ষাপটে যেটাকে আমরা মতাদর্শিক গোত্রবদ্ধতা হিসেবে দেখি। একমাত্র "বাম" মতাদর্শ ব্যাতিত বাকি সকল আদর্শিক গোত্রের সুচনা হয় ক্ষমতার পিরামিড শীর্ষে। তাত্বিকভাবে বামের উৎসমূলে তৃনমুল থেকে উর্ধ্বগতি পাবার কথা থাকলেও, বাস্তব পরিঘটনায় বামদেরও একই প্রক্রীয়ার মাঝেই ঘুরতে দেখা যায়। সামাজিক বাস্তবতায় ব্লগিং কে কতটা বিচার করা যাবে সেটা আলোচনার বিষয়। কিন্তু তার সামাজিক এলিমেন্টগুলোকে সম্পূর্ন অস্বীকার করা যায় না।
ব্লগ যখন শিশু থাকে তখন ব্লগারের সংখ্যা কম থাকে। কতৃপক্ষ বুঝতে পারে না কোন কোন নিয়ম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একারনেই নীতিমালা আরো সোজা থাকে। উদাহরন হিসেবে আমরা সামু কে যদি নেই, ২০০৭ এ যখন আমি যোগ দেই তখন নতুন ব্লগাররা রেজি: র সাথে সাথেই পোস্ট দিতে পারতেন এবং কমেন্ট করতে পারতেন। ৩ দিন পরথেকে তাদের পোস্ট প্রথম পাতায় আসত।
মডারেশন স্ট্যাটাস বলে কিছু ছিল না। ব্যান এবং আনব্যান এই দুইটাই ছিল স্ট্যাটাস। আর কমেন্ট মডারেশন জিনিসটাও ছিল না। কালে কালে সংবিধান বড় হয়। পথ চলতে গিয়ে নতুন নিয়মের দরকার হয়।
তাই সামুতে নতুন নতুন নিয়ম যুক্ত হয়েছে, এটাই স্বাভাবিক। কমিউনিটি ব্লগিং এর ইতিহাসে আশরাফ/আতরাফ ভেদাভেদ থাকাটা একেবারে প্রকট না হলেও, অস্বীকার করার মত ঝাপসা নয়। যেহেতু কমিউনিটি ব্লগেও নানারকম মতের সমাবেশ ঘটে তাই এখানেও মতাদর্শ কেন্দ্রীক গোত্রবদ্ধতা প্রকাশিত হয়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ন জিনিস সম্পর্কে বলার আগে জর্জ অরওয়েলের এনিম্যাল ফার্মের কথা মনে করছি "সাম এনিমেলস আর মোর ইকুয়াল দেন আদারস"। এইটাই মানব সমাজের ইতিহাসের সাড়বস্তু।
কখোনোই সম্পূর্ন সাম্যের নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। কেউ যদি বলে সাম্যের অস্তিত্বের কথা, তবে হয় মিথ্যাবাদী অথবা অর্বাচীন।
সুতরাং কমিউনিটি ব্লগিং যখন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে রুপ নেয় তখন এই ব্লগেও শ্রেনী বিভেদ তৈরী হওয়া অস্বাভাবিক নয়, অথবা সামাজিক স্তরবিন্যাস। আমি এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত না ঠিক কি কারনে অথবা কি কি ভ্যারিয়েবলের উপর ভিত্তি করে এই স্তরবিন্যাস বা শ্রেনীবিভেদ তৈরী হয়। কতৃপক্ষের সাথে সুসম্পর্কের ব্যাপারটা সামনে চলে আসতে পারে কিংবা অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করা।
আবার মার্কসের কথাও ফেলে দিতে পারি না। যত যাই হোক , অর্থনৈতিক অবস্থা একটি বিশাল ফ্যাক্টর। অথোরিটিভ ফিগারের এই শক্তির চাহিদা বা নিয়ন্ত্রনের স্পৃহা থেকেই অধস্তন অনুসারীদের উৎপত্তি ঘটে। মতাদর্শ কেন্দ্রীক গোত্রবদ্ধতা যে সামাজিক বাস্তবতায় একটি মুখোশে পরিণত হয় সেটা ব্লগের দিকে তাকানোর আগে অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকালে বোঝা যায়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্ম যদিও নির্দিষ্ট মত বা আদর্শ কে প্রমোট করার জন্যে, সময়ের পরিক্রমনে সেই উদ্দেশ্যের চেয়ে অনুসারীদের আখের গোছানোর চেষ্টাই বেশী চোখে পরে।
ব্লগেও এর প্রতিবিম্ব বিদ্যমান। আমরা দেখি নানা মেরুকরনের পেছনে আদর্শিক অবস্থানটা নরবরে হয়ে যায়। এ বিষয়ে ব্লগার ভাস্কর চৌধুরী এবং আরিফ জেবতিক কিছু আলোচনা করেছিলেন। ব্লগ যতক্ষন ভার্চুয়াল থাকে ততক্ষন আদর্শের দিকে হেলে থাকাটা যত সহজ, পার্থিব বাস্তবতর আকাঙ্ক্ষার অনুপ্রবেশে সেটা কিছুটা ধোয়াটে হয়ে যায়। "শাশ্বত" কিংবা "যৌবনযাত্রা" কে কেসস্টাডি হিসবে নিলে ,কিভাবে আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো সামনে চলে আসে সেটা কিছুটা বোঝা যায়।
কমিউনিটি ব্লগিং এ সাম্যের আশা করা যায় না। আশা করা যায় না ন্যায়বিচারের। যেভাবে বাস্তব দুনিয়ায় আমরা প্রতিনিয়ত আনফেয়ারনেসের মুখোমুখি হচ্ছি। এবং সমাজের ছোট্ট প্রতিনিধি হিসেবে কমিউনিটি ব্লগ সেই রুপেও থাকবে। এখানে সংগ্রাম থাকবে, মানবতা থাকবে আর কন্ঠরোধের চেষ্টাও থাকবে।
সর্বাধিক নিস্পৃহরা যেভাবে এলসিডির সামনে ডিভানে বসে নির্বিবাদে মুম্বাইয়ের নায়িকাদের নিতম্ব পর্যবেক্ষন করে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারে, সেভাবে কমিউনিটি ব্লগিংএ কেউ একান্ত ব্যাক্তিগত থাকতে চাইলে বাধা দিবে যতক্ষন না তার কাজকর্ম ব্লগারদের মাঝে পারস্পরিক বিক্রিয়ার কোন অনুঘটক হচ্ছে। সংগ্রাম বা অধিকার আদায়ের চিত্রটা গোলমেলে হয়ে যায় যখন বিপ্লবীরা পুরস্কার পেতে শুরু করে। কারন পার্থিবতার অভিশাপ হোক আর ইনস্টিংক্ট হোক, তৃপ্ত স্বত্তা সর্বদাই স্থিতচলনের দিকেই যায়। আন্দোলনে আমজনতা ই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন। কারন যখন আমজনতাদের মাঝে কিছু মানুষ আর আমজনতা না থাকে তখন অসহোযোগিতা চলে আসতে পারে কিংবা তাদের নিজস্ব অর্জনকৃত অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা চলে আসতে পারে।
ব্লগারদের মাঝে মেরুকরনের চেষ্টা যখন আদর্শিক থাকে না, অথবা ব্যক্তিস্বার্থ জান্তব হয়ে উঠে তখন আমরা নানা রকম ক্যায়োস দেখতে পাই। সামুর দিকে তাকালে আমরা বিভিন্ন সংঘাত দেখতে পাই যা চরিত্রের দিক থেকে যতটা না আদর্শিক তার থেকে বেশী গোত্রের পিঠ বাচানো অথবা নিজের অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা। এসকল আদর্শবিহীন মেরুকরনে আমজনতার শক্তিহ্রাস পায়। ব্যাক্তির উর্ধ্বে উঠে যেসকল ইস্যু আলোচিত হওয়া দরকার তার জন্যে গোত্রবদ্ধ শক্তি আমজনতার কাছে অবশিষ্ট থাকে না। আমরা নানারকম টার্ম শুনতে পাই যেমন "ড়েসিডেন্ট"।
আমি এই শব্দের দাবীকৃত বাস্তবতা সম্পর্কে ততটা নিশ্চিত নই। কিন্তু আমজনতরা মাঝে অর্থহীন মেরুকরনের উদ্দেশ্য সৃষ্ট অনুষঙ্গের মাঝেই একটা হিসেবে বিবেচনা করতে বাধ্য হই। অথরিটিভ ফিগার কতৃক বৈষম্যের উদাহরন প্রচুর। এটাকে তার মাঝে সংজ্ঞায়িত হয়ত করা যাবে।
প্রশ্ন হচ্ছে রাস্তার নেমে ময়লা ঘাটা কতটুটকু সম্ভব? সবার পক্ষে কিন্তু সম্ভব না।
কিন্তু সত্যিকারের সংগ্রাম রাস্তায় হয়। তাই রাস্তায় খুটি গেড়ে বসলাম। জানি আনফেয়ারনেস দুর হবে না, কিন্তু আনফেয়ারনেসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম না করলে নতুন আনফেয়ারনেস ঘাড়ের উপর চেপে বসবে। আমজনতার শক্তিহ্রাসে উপকৃত হয় নিয়ন্ত্রকরাই। কিন্তু এটাও গুরুত্বপূর্ন যে জনতার শক্তি সকল কিছুর চেয়ে বেশী।
দমননীতি কখনও জনতাকে নখদন্তহীন করতে পারে না। সংগ্রামের স্থায়িত্ব প্রলম্বিত করতে পারে মাত্র।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।